২০২৩-১০-১৮ ০৯:২৩:৪২ / Print
লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুরোধে সিলেট কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে প্রতীকী ক্লাস নিয়েছেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাস। বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাঁর ক্লাস পরিচালনা করেন।
এসময় প্রথম বর্ষ থেকে ৫ম বর্ষের ৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। স্থপতি রাজন দাশ, একজন স্থপতির সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন, যা ‘প্রফেশনাল প্র্যাকটিস’ নামক কোর্সের অর্ন্তগত। একই সাথে ‘কস্ট এস্টিমেশন’ কোর্সের অংশ হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের সম্মুখে খোলাসা করে হোয়াইট বোর্ডে লিখে বুঝিয়ে দেন। তারপর স্থাপত্য বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ও লুই আই কানের ভাবনার সাযুজ্য ব্যাখ্যা করেন।
ক্যাম্পাসে প্রিয় শিক্ষককে ক্লাস করতে অবৈধভাবে বাধা দেওয়ার কারণে ছাত্রছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নেয় এরকম একটি ক্লাস করার এবং এটি লিডিং ইউনিভার্সিটির সকল বেআইনি কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের একটি শান্তিপূর্ণ ও সৃজনশীল প্রতিবাদ। ক্লাসের শুরুতেই তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর নৈতিক অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে তার সরাসরি যোগাযোগ নেই । বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ পরিচালিত হয় ক্যাম্পাস ডেভেলাপমেন্ট কমিটি (সিডিসি) এর মাধ্যমে, যার চেয়ারম্যান জনাব রাগীব আলী এবং অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য, ট্রেজারার, মরহুম মেজর জেনারেল (অব:) নাজমুল ইসলাম,
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর সচিব মেজর অব: শায়খুল হক চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন, বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. জহির বিন আলম (প্রফেসর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, সাস্ট), ড. মোস্তাক আহমদ (প্রফেসর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, সাস্ট) স্থপতি হিসেবে মরহুম চৌধুরী মোস্তাক আহমেদ এবং রাজন দাস। নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত এই ফোরামেই হয় এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সিডিসি চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে হয়ে থাকে।
একটি ভূয়া রিপোর্ট তৈরি করেন মো. কবির আহমদ (যিনি ডিরেক্টর, ফিনান্স হিসেবে বর্তমানে পাদয়িত হয়েছেন অবৈধভাবে) এবং বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ এর সেক্রেটারি লুৎফর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যকে উপেক্ষা করে টাকা ফেরৎ চেয়ে লুৎফুর রহমানের প্রদান করা এই চিঠিটি (Ref.LUS/VC/0017/07/2023 (11) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় গত ১৩ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখে বাতিল করে লুৎফুর রহমানকে শোকজ প্রদান করেন।
এতে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০, এসেসমেন্ট কমিটির টার্ম অব রেফারেন্স এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৮ এর ধারা উল্লেখ করে বলেন যে, চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ‘সমাপ্তি সনদ’ দেওয়ার পর তার বিল বেশি হয়ে গেছে -তা বলার কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্ ড. কাজী আজিজুল মওলা গত ৪ অক্টোবর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে ১৫ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে যান।
তিনি কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে গেলেও ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপচার্যের দায়িত্ব নিয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকান্ড আবারও শুরু করেন। এরমধ্যে স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাসকে ১১ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে পরদিনই বরখাস্ত করেন।
যদিও যুক্তরাষ্ট থেকে ইমেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা বরখাস্তের চিঠিটি খারিজ করে দেন। তার বরখাস্তের বিষয়টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানতে না পেরে পরদিন থেকে ক্যাম্পাসে ও সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে নানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্চে।
সেই সাথে সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে লিডিং ইউনিভার্সিটির দুর্নীতিবাজদের অপসারণ ও দেশ বরেণ্য দুই স্থপতি রাজন দাশ ও স্থপতি জেরিনা হোসেনকে সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন।