২০২৪-০২-২১ ০৯:২৪:৩১ / Print
জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে (জেসিপিএসসি) যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪’ পালন করা হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টায় প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে ‘দিবসের সূচনা হয়। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল তাহিয়াত জালাল চৌধুরী, পিএসসি'র নেতৃত্বে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও সুরমা ৪টি হাউসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রভাতফেরি হয়। প্রভাতফেরি জালালালাবাদ সেনানিবাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।
সকাল সাড়ে টায় প্রতিষ্ঠানের মাল্টিপারপাস হলে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনাসভা এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ভাষা শহিদদের উদ্দেশ্যে মোনাজাত পরিচালনা করেন সিনিয়র শিক্ষক মো. আতাউর রহমান।
অধ্যক্ষ তার বক্তব্যে বলেন, বাঙালি জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ দিন। এই দিনটি বাংলা ভাষা তথা ঐতিহ্য রক্ষার স্মৃতিবিজড়িত সংগ্রামের জলন্ত অগ্নিশিখায় উজ্জ্বল এবং রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর।
এ দিনটি কেবল ইতিহাসের পালনীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের ধারায় নিরন্তর গতিময়, প্রাণবন্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২ সালে এই দিনে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির জাতিসত্তায় যে চেতনার জন্ম হয়েছিল, তা ছিল এক অবিনাশী চেতনা এবং ঐতিহ্য রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়।
এই চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে আত্মত্যাগের বীজমন্ত্র। যা পরবর্তীতে প্রতিটি গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এই ভাষা আন্দোলন বাঙালির আত্মসচেতনতা ও আত্মপরিচয়ের যে বোধোদয় সৃষ্টি করেছিল তা-ই রূপ নিয়েছিল স্বাধীনতার সংগ্রামে।
একুশের পথ ধরেই ৩০ লাখ শহিদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে আপন মহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। অর্জন করেছে লাল সবুজ পাতাকা।
ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতি বিজড়িত মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর আমাদের ইতিহাসের একটি রক্ত রঙিন দিন নয়, এ দিন এখন পেয়েছে বিশ্বস্বীকৃতি, পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। বাঙালি জাতিসত্তার এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় এই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ বলেন, তোমাদেরকে প্রথমে মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে শিখতে হবে। তোমাদের প্রতিদিনের ভাব বিনিময় তথা যোগাযোগ রক্ষার প্রধান মাধ্যম হতে হবে মাতৃভাষা। বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ২য় ভাষা হিসেবে ইংরেজি বা ভিন্ন কোন ভাষা শিখতে পারো।
ভালোভাবে বিদেশি ভাষা শিখতে হলে আগে চাই মাতৃভাষার গাঁথুনি। আধুনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভাষা বিকৃতি লক্ষ করা যাচ্ছে তাতে একজন বাঙালি হিসেবে আমরা ভাষাশহিদ তথা মাতৃভাষাকেই অশ্রদ্ধা করছি বলে মনে হয়। তোমাদের ব্যবহারিক জীবনে শুদ্ধ বাংলা লেখা ও বলার প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
মাতৃভাষার শুদ্ধ চর্চার মাধ্যমে তোমাদের শিক্ষাকে ঐশ্বর্ষমণ্ডিত করতে হবে এবং তোমাদের বিবেকবোধসম্পন্ন রুচিশীল নাগরিক হিসেবে তৈরি হতে হবে।
তোমাদের মনে রাখতে হবে, মাতৃভাষাকে অবহেলা করে কোনো জাতি সমৃদ্ধ হতে পারে না। তোমাদের চেতনা জুড়ে থাকে যেন দেশাত্মবোধ, দেশের প্রতি মমতা, দেশের মাটি ও মাতৃভাষার প্রতি অদম্য অনুরাগ। তোমরা একুশের চেতনা থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতির অন্তরে সৃষ্টি করবে জাগরণের মন্ত্র এবং তোমাদের হৃদয়ের আলোয় নক্ষত্রশোভিত আকাশের মতো হবে আমাদের প্রিয় স্বদেশভূমি। ‘
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস-২০২৪’উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষার গান, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, হাতের সুন্দর লেখা এবং রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জেসিপিএসসি'র অধ্যক্ষ পুরস্কার বিতরণ করেন।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিহা সালসাবিল খান ইকরা ও জাহিন আল সাবা এর যৌথ উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আশরাফুর রহমান বাপ্পী, সহকারী শিক্ষক সুপ্রিয়া তালুকদার, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিয়ে কাউসার মাহিয়ান ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামসিয়া রহমান।
প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ সহকারী অধ্যাপক শারমীন আকতার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জ্যেষ্ঠ প্রভাষক অপর্ণা বিশ্বাস।