২০২২-১০-১৮ ০৮:১৮:৫৫ / Print
জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন নানা কর্মসুচির মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে। ১৮ অক্টোবর-২০২২ মঙ্গলবার শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বৃক্ষরোপণ, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হাতের সুন্দর লেখা, রচনা প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রকাশ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা এবং শেখ রাসেল স্মৃতি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
সকাল সাড়ে ৮টায় জেসিপিএসসি’র অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মোঃ কুদ্দুসুর রহমান, পিএসসি এর নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে র্যালি করে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকাল ৯:০০ ঘটিকায় শেখ রাসেল স্মরণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
সকাল ১০ টায় প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়ামে 'শেখ রাসেল স্মরণসভা' অনুষ্ঠিত হয়। জেসিপিএসসি’র নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান মীম এর সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে শহিদ সকল বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন সহকারী শিক্ষক ইমদাদুল হক জুবায়ের। শেখ রাসেলের জীবনী নিয়ে বক্তব্য রাখেন সহকারী শিক্ষক আব্দুল কাদির, একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শফিউল আলম রুহিন ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিশা মাশিয়াত যাহরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ মহোদয় বলেন, '১৯৬৪ সালের আজকের দিনে ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরিত ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনকে আলোকিত করে শেখ রাসেলের জন্ম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় খ্যাতিমান গণিতবিদ, দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন রাসেল। শৈশব থেকেই দুরন্ত ও প্রাণবন্ত রাসেল ছিলেন পরিবারের সবার অতি আদরের।
শেখ রাসেলের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বাবা মুজিবকে ছাড়াই কেটেছে তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়। কারণ বাবা মুজিব রাজনৈতিক বন্দি হয়ে কারগারে ছিলেন দিনের পর দিন। আর চোখের সামনে বাবাকে দেখতে না পেয়ে মা ফজিলাতুননেসা মুজিবকে একপর্যায়ে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করতেন। এ চাপা কষ্ট যেমন অনুভব করতেন শিশু রাসেল ঠিক তেমনি অনুভব করতেন বাবা মুজিবও।' তিনি আরও বলেন, 'মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর ছায়াই যেন ফুটে উঠেছিল শিশু রাসেলের মাঝে।
শিশু রাসেলের কথাবার্তা ও আচার-আচরণে সর্বদাই যেন প্রতিফলিত হতো বাংলার মাটি ও মানুষের ছায়া। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাসেলের এই ইচ্ছা মনের কোনে দানা বাঁধতে শুরু করে। যে শিশুর চোখের তারায় ছিল অপার সম্ভাবনা, সে শিশুকেই বিকাশিত হওয়ার আগেই ঝরে যেতে হলো। তাই বাঙালির কাছে শেখ রাসেল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের মতোই অন্তহীন বেদনার এক মহাকাব্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিরা বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তাই ইতিহাসের শোকাবহদিন ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে শিশু রাসেলকেও মাত্র ১০ বছর ১০ মাস বয়সে ঘাতকদের প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতার নির্মমতম শিকার হতে হয়েছিল।' তিনি বলেন, 'শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধিবোধসম্পন্ন মানুষের কাছে একটি আদর্শ ও ভালোবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্তায় পরিণত হয়েছে।'
উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত ‘শেখ রাসেল পদক- ২০২২’এ অংশগ্রহণ করে জেসিপিএসসি’র দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর ছালওয়া মেহরীন (শিক্ষা ক্যাটাগরি) এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মাইশা হোসেন খান (ক্রীড়া ক্যাটাগরি)তে বিজয়ী হন। ১৭ অক্টোবর ২০২২ তারিখে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আইসিটি শাখা কর্তৃক আয়োজিত 'প্রিয় শেখ রাসেল' শিরোনামে প্রেজেন্টেশন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জেসিপিএসসি'র একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী এইচ এম রাজ প্রথম স্থান অধিকার করে।
জেসিপিএসসি কর্তৃক আয়োজিত কুইজ, চিত্রাঙ্কন, হাতের সুন্দর লেখা ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। শেখ রাসেল দিবস- ২০২২ অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী অধ্যাপক শবনম চৌধুরী এবং সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান।