শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইংরেজী, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা ENG

মহিমান্বিত রজনী ‘শবে বরাত’

হাফিজ মাওলানা হুযায়ফা হুসাইন চৌধুরী::

২০২৩-০৩-০৭ ০১:১৬:৩৮ /

শাবানের পঞ্চদশ রজনী তথা শবে বরাত একটি তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ রজনী। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ জনপদে এ রজনীর গুরুত্ব অপরিসীম। মহিমান্বিত রজনী শবে বরাত প্রতি বছরই ফিরে আসে আমাদের মাঝে। ফিরে আসে আমাদের মুক্তির বার্তা নিয়ে।

কুরআনের দৃষ্টিতে শবে বরাত- মহান রাব্বুল আ’লামিন মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, হা-মীম(এ অক্ষরদুটি হরূফে মুকাত্তিয়াতের অন্তর্ভুক্ত যার অর্থ আল্লাহই ভালো জানেন) শপথ প্রকাশ্য কিতাবের। নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রজনীতে।

নিশ্চয় আমি সতর্কতকারী। এ রজনীতে প্রত্যেক জ্ঞানপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে আমিই প্রেরণকারী (সূরা দুখান ১-৫) বি.দ্র. কুরআনে বর্ণিত ليلة مباركة এর ব্যাখ্যা অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরামের মতে শবে কদর হলেও অনেক মুফাসসিরগণ শবে বরাত দিয়েও ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং প্রথম মত অগ্রধিকার পেলেও দ্বিতীয় মতকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই।

হাদীসের আলোকে শবে বরাত- হযরত মুআয ইবনু জাবাল রা.রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন যে আল্লাহ তা’আলা শাবান মাসের পনের তারিখের রজনীতে সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করেন এবং সকলকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক এবং হিংসুক ছাড়া।

 

(সহীহ ইবনে হিব্বান:১২/৪৮১ হা.৫৬৬৫) হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. খেকে বর্ণিত হুজুর সা. বলেছেন শাবান মাসের পনের তারিখ রজনীর আগমন হলে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে তাশরীফ আনেন এবং স্বীয় বান্দাদেরকে মাফ করে দেন।

কিন্তু মুশরিক ও অপর ভাইয়ের প্রতি হিংসা পোষণকারী ব্যতীত।(মুসনাদে বাযযার: ১/১৩৫ হা. ১৫৩) হযরত আলী ইবনু আবি তালিব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন।

শাবান মাসের পনের তারিখ রজনী আসলে তোমরা রাতের বেলা আল্লাহর ইবাদত করো এবং দিনের বেলা রোজা রাখো ও-ই রাতে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর মহসন আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন আছো কি কেউ মাগফিরাত প্রত্যাশী?

তাকে আমি ক্ষমা করে দিবো। আছো কি কোন রিযিক যাচনাকারী? তাকে রিযিক দান করবো। আছো কি কেউ রোগাক্রান্ত ব্যাক্তি তাকে আমি সুস্থতা দান করবো। আছো কি অমুক আছো কি অমুক? এভাবে প্রভাতের সূচনা পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।(সুনানে ইবনে মাজাহ:৮/৫২৪ হা.১৩৮৮) উল্যেখ্য যে উপরে বর্ণিত হাদীস সমূহ এবং এছাড়াও শবে বরাত সংক্রান্ত আরো একাধিক হাদীস যেগুলো এখানে উল্লেখ করার প্রয়াস পাইনি।

মুহাদ্দিসীনে কেরামের পর্যালোচনা থেকে একটি বিষয় প্রতীয়মান হয়। তা হল শবে বরাত সংক্রান্ত কিছু হাদীস এমন আছে যেগুলো حسن لذاته তথা সহীহ,কিছু হাদীস এমন আছে যেগুলো صحيح لغيره তথা সহীহের অন্তর্ভুক্ত,আর কিছু হাদীস ضعيف তথা দুর্বল(তবে ضعيف جدا তথা অতি দুর্বল এমন নয়) যা বিশেষভাবে ফজিলত সংক্রান্ত বিধান প্রমাণে যথেষ্ট।

শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয় আমল সমূহ- শবে বরাতের জন্য কোন নির্ধারিত আমল নেই। যেহেতু এই রজনীতে মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের উপর বিশেষ রহমত নাযিল করেন এবং গুনাহগারদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেন। বিধায় মুসলমানদের উচিত এমন রহমত ও বরকতপূর্ণ রজনীকে গণীমত মনে করে স্বীয় প্রভুর দরবারে বেশি থেকে বেশি তাওবা ইস্তিগফার করা।

 

নিত্যনতুন বিদআত ও ভ্রান্তি থেকে মুক্ত থেকে ইবাদত করা। নফল নামাজ,কুরআন তিলাওয়াত,যিকির আযকার,তাসবীহ-তাহলীল,দরূদ শরীফ,বিভিন্ন দু’আ সব ধরনের ইবাদতই করা যাবে।

মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে ফিতনা-ফাসাদের এই যুগে শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবল থেকে রক্ষা করে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!!

 

লেখক:

হাফিজ মাওলানা হুযায়ফা হুসাইন চৌধুরী। ইমাম ও খতিব,  দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) জামে মসজিদ সিলেট।

এ জাতীয় আরো খবর

রমজানের আমল পুরো বছর অব্যাহত রাখতে যা করবেন

রমজানের আমল পুরো বছর অব্যাহত রাখতে যা করবেন

চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ

চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ

চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ

চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ

চাঁদ দেখা যায়নি; বৃহস্পতিবার ঈদ

চাঁদ দেখা যায়নি; বৃহস্পতিবার ঈদ

মিলেনি চাঁদের দেখা, সৌদিতে ঈদ বুধবার

মিলেনি চাঁদের দেখা, সৌদিতে ঈদ বুধবার

সিলেটে ঈদের জামাত যখন যেখানে

সিলেটে ঈদের জামাত যখন যেখানে