২০২২-১২-০৫ ২২:০১:৩৬ / Print
১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর এই দিনে সুনামগঞ্জ শহর হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। ওড়ানো হয় স্বাধীনতার লাল সবুজের বিজয় নিশান। স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে বর্বর পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
তাদের প্রতিরোধের মুখে তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমা শহর ছেড়ে পিছু হটে পাকবাহিনী ও তাদের দুসররা হাওরের নৌপথে ও সড়কপথে সিলেটের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ভোরে আজকের এই দিনে। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সাঁড়াশী অভিযান ও প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১সনের এই দিনে শহর শত্রুমুক্ত হওয়ায় জনতা রাস্তায় নেমে আসে। হানাদার মুক্ত হয়ে লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে সুনামগঞ্জ শহর ‘জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে মুখরিত হয় মুক্তিযোদ্ধা জনতা সহ সর্বস্তরের মানুষ। তাই সুনামগঞ্জে এ দিনটি পালিত হয় সুনামগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে।
সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান সহ মুক্তিযোদ্ধারা জানান,জেলার দক্ষিণ দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পালানোর পথ রেখে বালাট সাবসেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ শহরকে শত্রুমুক্ত করতে উদ্যোগ নেন। ৫ডিসেম্বর রাতে বালাট সাব সেক্টরের কমান্ডার মেজর মোতালিব,
ভারতীয় ক্যাপ্টেন যাদব ও ক্যাপ্টেন রঘুনাথ ভাট বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে দখলদার বাহিনীর ওপর চরম আঘাত হানতে চারটি কম্পানি প্রস্তুত করেন। এ কোম্পানিকে যোগীরগাঁও, বি কোম্পানিকে হালুয়ারঘাট, সি কোম্পানিকে হাছননগর, ডি কম্পানিকে ভাদেরটেক লালপুর থেকে আক্রমণের নির্দেশ দেয়া হয়।
এছাড়া এফ কোম্পানিকে বেরীগাঁও-কৃষ্ণনগরে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়। শুধু দক্ষিণ দিক উন্মুক্ত রেখে যৌথ আক্রমণে নামেন মুক্তিযোদ্ধারা। কোম্পানিগুলোকে সার্বিক রসদ সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয় এডিএম কম্পানিকে। বনগাঁও সদর দফতরেও অতিরিক্ত এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা প্রস্তুত ছিলেন যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত ও যৌথ আক্রমণের খবরে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পালানোর সময় সুনামগঞ্জ পিটিআই টর্চার সেলে কয়েকজনকে হত্যা করে,পাকবাহিনী সুনামগঞ্জ ছেড়ে যাবার সময় (৬ ডিসেম্বর’ ১৯৭১) আহসানমারায় তৎকালীন মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ ছাত্রনেতা মুক্তিযোদ্ধা তালেব উদ্দিনসহ ৩ জনকে একরশি দিয়ে বেঁধে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীতে ফেলে যায়।
৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত হওয়ায় সকলে আনন্দিত হয়ে উল্লাস করলেও তালেব উদ্দিনসহ ৩ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু সহযোদ্ধাদের কাঁদায়। এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক মানুষের হাড়গোড়, নারীদের কাপড় চোপড়সহ বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণের খবর পেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দক্ষিণের সড়ক ও হাওরপথে পালিয়ে যায়।
৬ ডিসেম্বর ভোরেই ৫নম্বর সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ মোতালেব বেরিগাওঁ, ক্যাপ্টেন যাদব আমবাড়ী বাজার এলাকা ও ক্যাপ্টেন রঘুনাথ সুনামগঞ্জ শহরতলির গৌরারং এলাকা হয়ে মুক্তিপাগল সেনাদের নিয়ে এ দিন ভোরে একযোগে সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা শ্লোগানে রাস্তায় নেমে আসলে সর্বস্তরের মানুষ তাঁদের অভিনন্দন জানায়। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকার পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠে।