২০২৪-০১-১৯ ০৯:১০:৫৮ / Print
জগন্নাথপুরে কবরস্থানের জায়গা দখলের চেষ্টাকারী জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে ফুসে ওঠেছেন এলাকার লোকজন। স্থানীয়রা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের কান্দারগাঁও-নোয়াগাঁও গ্রামের একটি কবরস্থানের জায়গা দখল করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন স্থানীয় জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যাক্তি। কিন্তু এলাকার লোকজন কবরস্থানটি রক্ষায় একজোট হওয়ায় বার বার দখল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছেন। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে দুটি গ্রামের লোকজন দখল প্রচেষ্টাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন।
কিন্তু দখল চেষ্ঠাকারী জয়নাল আবদীন নানাভাবে উৎপাত শুরু করেছেন এবং মামলা দিয়ে লোকজনকে হয়রানী করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কাগজপত্র পর্যালোচনা করত; ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, কান্দারগাঁও-নোয়াগাও গ্রামের বাসিন্দাদের ব্যবহৃত শত বছরের পুরানো একটি কবরস্থান রয়েছে। বছরখানেক আগে কবরস্থানের জায়গার মালিকানা দাবি করেন কান্দারগাওয়ের জয়নাল আবেদীন। তিনি তার পিতা আজিজুর রহমানের নামে কবরস্থানের ৬০ শতক ভূমি সেটেলমেন্টে রেকর্ড করিয়ে নেন গোপনে। বিষয়টি এলাকার লোকজন জানতে পেরে প্রতিবাদ করেন ও রেকর্ড সংশোধনের উদ্যোগ নেন।
গ্রামের পঞ্চায়েতের নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্য দুই গ্রামের ১০১ জন ব্যাক্তি স্বাক্ষরিত আবেদন গত ডিসেম্বরে জগন্নাথপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর দাখিল করেন। সংশোধনের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, জয়নাল সরকারি জায়গা দখল, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি, এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপসহ নানা অনিয়মের সাথে জড়িত। তার কর্মকান্ডে ক্ষুব্দ এলাকার লোকসহ উপজেলা প্রশাসনও।
তার কর্মকান্ডের কারণে পঞ্চায়েত কমিটির সাথেও দুরত্ব বাড়তে থাকে। কোনটাসা হয়ে তিনি ৭ জানুয়ারি কান্দারগাঁওয়ের বাসিন্দা এখলাছুর রহমানসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি তার জমির ধানের চারা নষ্ট করে ফেলাসহ বসতবাড়িতে গিয়ে মহিলাদেরকে মারধরের অভিযোগ করেন। যদিও অভিযোগটি পুলিশ আমলে নেয়নি। এ বিষয়ে এখলাছুর রহমান তালুকদারের ভাই সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার জানিয়েছেন, জয়নাল আবেদীনের দায়ের করা অভিযোগটি মিথ্যা। তারা নিজেরাই ধানের চারা মই দিয়ে নষ্ট করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট হিসেবে কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকার পরও এমন ব্যাক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এলাকার লোকজন জানান, কান্দারগাও ও নোয়াগাঁও গ্রামবাসী মিলে ২০২৩ সালের প্রথম দিকে প্রাইমারি স্কুল স্থাপনের জন্য তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বিদ্যালয় মন্জুরীসহ সরকারি একটি মুজিব কেল্লা স্থাপনের জন্য আশ্বস্ত করেন। স্কুলের জন্য গ্রামের লোকজন প্রায় ৬ কেদার জমিও দান করেন। কিন্তু জয়নাল আবেদীন দানকৃত ভূমির উপর আদালতে একটি মামলা দায়ের করে বসেন।
পরবর্তীতে তার মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। জয়নাল প্রায় ১৫/১৬ বছর যাবত কান্দারগাও জামে মসজিদের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু পঞ্চায়েতকে কোন বিষয়ে অভিহিত না করে কর্তৃত্ব খাটিয়ে চলেন। বার্ষিক আয় ২ লক্ষ টাকা থাকার পরও মসজিদটির উন্নয়ন হয়নি। মসজিদের কাজের ইট, বালু ও পাথর মসজিদের কাজে না লাগিয়ে তার বাড়ির কাজকর্ম করেছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ।
কয়েক বছর আগে কান্দারগাঁ গ্রামের গরীব আলতাব আলীর কাছে ৩০ শতক পতিত জায়গা বিক্রি করেন জয়নাল। পরে আলতাবকে সেই বসতবাড়ি থেকে প্রভাব খাটিয়ে উচ্ছেদ করে দেন। স্থানীয়ভাবে প্রতিকার না পেয়ে সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (সিআর-৯৩/২৩) করেন আলতাব। মামলায় জয়নালের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দাখিল করা হয়। কান্দারগাঁও গ্রামের হাজী আব্দুন নূর, ছইম উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, নোয়াগাও গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস, হাজি আব্দুল হাশিম, সফরুল ইসলাম, শেরাটন জানিয়েছেন, জয়নালের কারণে এলাকার লোকজন অতিষ্ট।
দীর্ঘদিন ধরে জয়নাল নানা অপকর্ম করে আসছেন। তার জালিয়াতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। এ ব্যাপারে জয়নাল আবেদীন জানান,আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। কবরস্থানের জায়গা ব্যাক্তির নামে রেকর্ড প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারি কমিশনর (ভূমি) জানান, এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসি আমার কাছে একটি আবেদন দিয়েছেন, ইতোমধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করছি। তিনি জানান, কবরস্থানটি অনেক পুরনো, তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।