২০২২-০৭-১৫ ১২:০৫:০২ / Print
বন্যায় দুর্বিষহ স্মৃতি পেছনে ফেলে মাথা তুলে দাড়াতে চাইলেও হাওরাঞ্চলের মানুষ এখন প্রচণ্ড খরতাপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দিনমজুর,পেশাজীবী মানুষদের জীবন জীবিকা স্থবির করে ফেলছে এমন রৌদ্রের ঝাঁজ।
এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। ক্রমাগত বাড়তে থাকায় রোদের তীব্রতায় বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য লেখাপড়া শুরু করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। প্রথমে করোনা ভাইরাস তারপর বন্যা। আমাদের সন্তাদের লেখাপড়াকে একেবারেই ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে জানান অভিবাবকরা।
জানা যায়,বন্যায় ২০দিন জীবনের দুর্বিষহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পর তাহিরপুর উপজেলাবাসীর জীবনে আসে নিরানন্দ ঈদ। অন্যদিকে বন্যায় ভিজে যাওয়া বই,জরুরি কাগজপত্র, লেপতোশক,আসবাবপত্র প্রখর রৌদে শুকিয়ে নিচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো।
তবে রাতে রিমঝিম বৃষ্টি, হালকা ও মাঝারি মানের বাতাস বইলেই তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। অপরদিকে দিনের বেলায় প্রচণ্ড তাপ নিয়ে সূর্য উঠায় গরমের প্রকোপ বাড়ছেই। যার প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে বসত বাড়িতে থাকা শিশু,বৃদ্ধ,নারীরা। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মানুষ জন।
এদিকে,আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে,শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে। আছে বৃষ্টির সম্ভাবনাও। শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে তেজ বাড়ে সূর্যের। বাড়ে গরম, সেই সাথে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলাও বাড়ে।
ঈদ ও ঈদের পরের দিন জেলার তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। মঙ্গলবার ৩৬ ও বুধবার ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা গরমে হাওর পাড়ের মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়ছে। জেলেরা নদী-হাওরে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। শ্রমজীবীরা বের হতে পারছেন না ঘর থেকে। সব ধরণের ব্যবসায়ও ক্রেতাদের অভাবে স্থবিরতা চলে এসেছে। কাঁচামাল বাজারের ব্যবসায়ীদের চিন্তা বেড়েছে বেশি।
পরিবহণেও আছে যাত্রী হাহাকার। টাংগুয়ার হাওরে পাড়ের কৃষক আদু মিয়া বলেন,প্রচণ্ড রোদে মানুষ ঘর থেকেই বের হতে পারছেন না তাই যেসব বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় থাকতো বেশি সেখানে বিকালের আগ পর্যন্ত কোনো লোক সংখ্যা নেই বললেই চলে। তার সাথে আছে প্রচণ্ড বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বিদ্যুৎ না থাকলে গরমে মনে হয় গায়ে ফুঁসকা পড়বে।
ফল ব্যবসায়ী খালেদ মিয়া জানান, যে গরম পড়েছে এতে আম, আপেল,আঙুরসহ বিভিন্ন ফলমূল বেশি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে। প্রায় একই বক্তব্য ডিম ব্যবসায়ী জোসেফ মিয়ার। চা বিক্রেতা রাজু উদ্দিন বলেন,প্রচণ্ড গরমে আমাদের দোকানের কাস্টমার একেবারে নাই।
োগরম পড়লে চা একটু কম বিক্রি হয়। তবে টান্ডা তরল পানীয় বিক্রি বেশি হচ্ছে বলে জানান অপু দাস। তিনি জানান,গরমের দিন বিভিন্ন কোম্পানি তরল টান্ডা পানীয় বেশি চাহিদা থাকে মানুষের। গত কয়েকদিনে প্রখর রৌদে মানুষ টান্ডা পানীয় বেশি পান করছেন। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জহির আহমেদ বলেন,বন্যায় আমার জানামতে অনেক শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়েছে। আমার বইও ভিজেছে।
শুকিয়ে পড়াশোনা শুরু করবো ভাবছি৷ কিন্তু যে গরম পড়েছে, তার উপরে লোডশেডিং। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থা মোটেও ভালো নেই।
দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন শরিফ মিয়া। ঈদের পর থেকে কাজে যাচ্ছেন না তিনি। বন্যায় তার ঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোদ উঠায় অন্যের কাজে যেতে পারছেন না তাই নিজের বাড়িতেই কাজ করছেন চারদিন ধরে। রিকসা চালক ডালিম মিয়া বলেন,আমরা দিন মজুর মানুষ। প্রতিদিন রিকশা চালানোর জন্য বাহিরে যেতেই হয়।
কিন্তু যে রোদ উঠে, এতে সারাদিন রিকশা চালালে অসুস্থ্য হয়ে পড়বো। তাই এ সুযোগে বন্যায ভাঙ্গা ঘর বাড়ির আর নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মির্জা রিয়াদ হাসান জানান,প্রচন্ড গরমে সবাইকেই সর্তক অবলম্বন করতে হবে। খুব বেশী প্রয়োজেন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়াই ভাল। ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা,বেশী বেশী বিশুদ্ধ পানি ও সরবত খেলে এই গরমে উপকার হবে।