২০২২-১০-২৪ ০৮:৩৬:৫২ / Print
বহু প্রতিক্ষিত সুনামগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর উপর নির্মিত রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই উৎসব বাড়ছে সেতুর দু পাড়ের বাসিন্দাদের। এই সেতুটি সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনেই দর্শনার্থীদের ভিড় জমছে।
কুশিয়ারা নদীর পাড়ে বাসিন্দাদের স্বাধীনতার পর থেকেই স্বপ্ন ছিল নদীর উপর সেতু আর সেই সেতু দিয়ে রাজধানী ঢাকায় আসা যাওয়া করবে। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
আগামী ২৯ অক্টোবর সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্নের রানীগঞ্জ সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। সৃষ্টি হবে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান। এ সেতুর কারণে সুফল পাওয়া যাবে কৃষি খাতে ও পর্যটন খাতে। হাওরাঞ্চলে শিল্পায়ন তথা জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন দুয়ার খুলে যাবে।
সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ এ সেতু দিয়ে যানচলাচল করলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ২ ঘণ্টা কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। সেতুটি চালু হলে সেতুর আশপাশের জনগণের জীবনমানকে এগিয়ে নেবে তা নয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেই হাওরবাসীর জীবনকেই এগিয়ে নেবে।
এই সেতু হবে একটি নতুন মাইলফলক বলে মনে করছেন সচেতন মহল। শরীফ মিয়া জামিল আহমদসহ স্থানীয়রা বলছেন,রানীগঞ্জ সেতু শুধু যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তনই আনবে না, সেই সাথে এটি ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিশাল এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
ইট-পাথরের নগর জীবন থেকে মুক্ত পরিবেশে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে এ সেতুর সৌন্দর্য অবলোকন করতে রানীগঞ্জ সেতুর দু পাড়ে সেতুর আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড় যেন মিলনমেলায় রূপ নেয়। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী কুশিয়ারা নদীর তীরে এই সেতু দেখার জন্য ভিড় করছেন।
খরস্রোতা কুশিয়ারা নদীর অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকনে এ সেতু দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। একদিকে সেতুর সৌন্দর্য যেমন দৃষ্টি কাড়ছে অন্যদিকে কুশিয়ারার স্বচ্ছ জলরাশিও টানছে সবার মন। জানাযায়,২০১৭ সালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী, বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
৭০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.২৫ মিটার বক্স গার্ডারের সেতুটি দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। সেতুটি চালুর পর সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৮০কিলোমিটার। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
আরও জানাযায়,সিলেট অঞ্চলের দীর্ঘতম এই সেতুর সব কাজ সম্পন্ন তাই খুব শিগগিরই হাওরাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে তেমনি গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প ও সম্ভাবনা। লতিফ মিয়া,শহিদুল ইসলামসহ কুশিয়ারা সেতু দু পাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে কষ্টে থাকলেও সেতুর উপর দিয়ে হাটতে পরব যেতে পারব সহজে রাজধানীতে।
আমাদের কর্মসংস্থানের ও এবার সুযোগ হবে। দীর্ঘ আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি যেমন সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ সেতু, তেমনি দৃষ্টিনন্দনও। সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন ভিড় জমান হাজার হাজার দর্শনার্থী।
সেতুটির সৌন্দর্য দেখে আসা শেফালী বেগম জানান,কুশিয়ারা নদীর পাড়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলার ছোটাছুটি যে কাউকে আকৃষ্ট করে। এখানে আসার এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটিও অসাধারণ। এখন সেতুটিতে উঠতে পারলে খুব ভাল লাগত। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে কাউকে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকোশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, আগামী ২৯ অক্টোবর জেলায় এক সাথে কয়েকটি সেতুর উদ্বোধন হবে। আমরা চেষ্টা করব স্বল্প আকারে রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনের। সেতু উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।