মানসিক হতাশা থেকেই সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ ধারণা করছে। তার আত্মহত্যার পেছনে কারও প্ররোচনা রয়েছে কিনা-সে বিষয়টি তদন্ত করতে তুলির দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তুলির কোন দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তাদের নাম জানাতে পুলিশ অপরাগতা প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, লাশ উদ্ধারের ঘটনাস্থল ও সুরতহাল রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আমরা ধারণা করছি সাংবাদিক তুলি আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার পেছনে কারও প্ররোচনা রয়েছে কি না,তা তদন্ত করতে তুলির দুই বন্ধুকে থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তবে তাদেরকে আটক এখনো করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে রয়েছে। তুলির মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, ঘটনার দিনের আগের দিন মঙ্গলবার এক বন্ধুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথোপকথন হয়েছিল। তার বন্ধুর মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে দেখা গেছে, তার অবস্থানও একই এলাকা রায়েরবাজার। ওই বন্ধু তুলির ফ্ল্যাটে গিয়েছিল কিনা বা তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কী ধরনের কথোপকথন হয়েছিল-এসব বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাশ যশোরে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব যশোরের হুশতলা জামে মসজিদে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে উল্লেখ করে পুলিশ আরও বলছে, চাকরি না থাকায় এবং ব্যবসায় সফলতা না পাওয়ায় মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি। মূলত এ কারণেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
বুধবার বিকাল ৫ টার দিকে হাজারীবাগের রায়েরবাজারের মদিনাবাগ মসজিদের পাশে ২৯৯/৫ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ সোহানা পারভীন তুলির লাশ উদ্ধার করে। তুলি ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিল ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি যশোর সদরে।
হাজারীবাগ থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর আমরা তুলির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। তুলি মারা যাওয়ার আগে তার মানসিক হতাশার কথা ছোট ভাই মোহাইমিনুলকে জানিয়েছিলেন। তার শরীরের কোথাও জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি যে বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়, সেই বাসা ভেঙে কেউ ভেতরে প্রবেশ করেছিল অথবা দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে বাইরে বের হওয়ার কৌশল তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তারপরও আমরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তুলির ভাই মোহাইমিনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আমি যশোর থাকি। আপুর ঘটনা শুনে ঢাকায় এসেছি। মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু তিনি এভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন তা বুঝতেও পারিনি। তাহলে আমরা আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতাম।
তুলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষের অনার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ওই বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করার পর দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসাবে যোগদান করেন। ২০১০ সালে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠে সিনিয়র সাব-এডিটর হিসাবে চাকরি করেন। ২০১৬ সালে তিনি অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে যোগ দেন। এরপর ২০২১ সালে মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রকল্প কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। এর পাশাপাশি মনোহর নামে একটি মশলা বিক্রির অনলাইন শপ খুলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তুলি। বেসরকারি সংস্থায় চাকরি তার ভালো লাগছিল না। এর পাশাপাশি অনলাইন শপে কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিনি লাভের মুখ দেখতে পারেননি।