
২০২২-০৬-২২ ০৫:৩৫:৩৮ / Print
সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম ও নীলফামারিতে বন্যায় ডুবে গেছে এসব এলাকার ফসলের মাঠ। এতে অন্তত এক লাখ হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে।
আর অন্তত ছয় হাজার হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে সবজি উৎপাদনেও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকের কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বন্যায় সিলেটের ২২ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে।
আর সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমির আউশের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রাম, নীলফামারীতে ৫৬ হাজার একর জমির আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, যদিও আউশ উঁচু জমিতে হয়।
বন্যা যদি আর না বাড়ে, এখন যে অবস্থায় আছে তাতে আর ক্ষতি হবে না। যদি বন্যা আবারও আসে তবে ধানের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে।
আমাদের শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫-৬ হাজার হেক্টরে। এ সময় গ্রীষ্মকালীন সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। তিল ও বাদাম চর এলাকায় ছিল, সেটারও ক্ষতি হয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আউশ ও শাকসবজির। দেশের সবচেয়ে বড় ফসল রোপা ধান নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন রোপার বীজতলা তৈরির সময়।
এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফসল। এটা কিন্তু বন্যার ওপর নির্ভর করে। এখনও বীজতলা সেভাবে করে নাই, কেবল শুরু করেছে। আর যদি বৃষ্টি না হয়, আর বন্যা যদি না বাড়ে তাহলে ভালো। তবে অনেক সময় দেখা যায় আবার বন্যা আসে, এতে বীজতলা নষ্ট হয়।
তখন আমরা আবার করি, পুনর্বাসন কর্মসূচিতে যাই।’ ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা বীজ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছি, পানি নেমে গেলে যেন বীজ বপন করা যায়। প্রয়োজনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আউশ ও সবজি চাষিদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘যে পরিস্থিতিই আসুক, যদি আমন নষ্ট হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে রবি ফসল আমাদের বাড়াতে হবে।
শাকসবজি, আলু, তেলের বীজ ও সার আমরা বিনামূল্যে চাষিদের দেব। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ দেশে সবচেয়ে বেশি আউশ হয় বরিশাল বিভাগে। আর সবচেয় কম হয় ময়মনসিংহ বিভাগে। কুমিল্লা অঞ্চলেও আউশ বেশি হয়।
আউশ বেশি হয় সিলেট জেলা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে। তবে সুনামগঞ্জে আউশ তেমনভাবে হয় না। বরিশাল ও ভোলাতেও আউশ হয়ে থাকে। সরকার প্রণোদনা দিয়ে আউশ উৎপাদন টিকিয়ে রাখছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে ১৩ লাখ ৯ হাজার হেক্টর আউশ আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে ১২ লাখ হেক্টর পর্যন্ত আবাদ করা হবে। আরও কয়েকদিন আউশ আবাদ করা যাবে।
এদিকে আমনের মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। সারাদেশে বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। এরই মধ্যে সারাদেশে ৩৩৭ হেক্টর বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্য ৫৯ হাজার হেক্টর। উৎপাদনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বোরো ধান। মোট ধানের অর্ধেকই অসে বোরো থেকে। এর পর আমন ও আউশের অবস্থান।
৪৮ থেকে ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়ে থাকে। আর আমন আবাদ হয় ৫৭ থেকে ৫৮ হাজার হেক্টর। আউশ আবাদ হয়ে থাকে ১২ থেকে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে।
হেক্টর প্রতি আউশের উৎপাদন ২ দশমিক ৬ থেকে ২ দশমিক ৭ টন হয়ে থাকে। গত বছর হেক্টর আউশের উৎপাদন ছিল ২ দশমিক ৭ টন।