২০২২-০৬-১৬ ১৭:১৫:২৬ / Print
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জে ১২টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। একাধারে ভারী বর্ষণের কারণে কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে জেলা সদরের প্রতিটি মহল্লা,অলিগলিতে পানি প্রবেশ করছে। প্রতিটি মহল্লার ঘরের ভেতরে হাটু পানি সড়কে কমর পানি। জেলার সর্বত্রই এখন বন্যার পানি থৈ-থৈ করছে।
সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারা বাজার,জামালগঞ্জ,দিরাই,শাল্লা,ছাতক,দোয়ারা বাজারসহ প্রতিটি উপজেলা পানিতে তলিয়ে তলিয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। এদিকে,পানি বন্দী হয়ে পড়ায় জেলার প্রতিটি উপজেলা,ইউনিয়নে-ইউনিয়নে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জানাযায়,সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ইতোমধ্যে ২০ মেট্রিকটন খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চল এলাকায় সৃষ্ট বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে জরুরি ত্রাণসহায়তা পাঠাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক। সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি ঘাট, জগন্নাথবাড়ি এলাকা,উকিল পাড়া, তেঘরিয়া, বড়পাড়া,হাসননগর, নবীনগরসহ কয়েকটি এলাকার নিচু এলাকা ও সড়ক প্লাবিত হয়েছে।
ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ঘর বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির,মৎস্য খামার,গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজার। শহরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা সুমন আহমেদ জানান,ঘরের ভিতরে হাটু পানি। চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছি।
এমন বন্যা আমার জীবনের প্রথম দেখলাম। এই এলাকার পানিতে ডুবে যাওয়ার বাসার বাড়ির মানুষ জন অন্য এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। শুধু এই এলাকাই নয় জেলা শহরের প্রতিটি এলাকায় একেই অবস্থা। শহরের ব্যস্থতম এলাকা ট্রাফিক পয়েন্ট দোকানী সুমন দে জানান,দুপুর পর্যন্ত ভালই ছিল,বিকেলের পর থেকে মুসল ধারে বৃষ্টি সেই সাথে বজ্রপাত।
সন্ধ্যার সাথে সড়কে হাটু পানির উপরে। ঘরেও পানি উঠেছে। খুব খারাপ অবস্থা। ২০০৪ সালের বন্যাকেও হার মানিয়েছে এই বন্যা। হাওর বেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান,বন্যার পানিতে আমার ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়ি। প্লাবিত হয়েছে সকল হাটবাজার।
শত-শত বসত ঘরে বন্যার পানি ঢুকেছে। পানিতে ভেসে গেছে ইউনিয়নের বেশ কয়েক টি কাঁচা ঘরবাড়ি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। তার ইউনিয়নের সকল মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মব কর্তা মোঃ রায়হান কবির জানান,পানিতে উপজেলার চারপাশ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। নিন্মাঅঞ্চলে পানি বাড়ছে।
আমরা খুবেই সর্তক অবস্থানে আছি। খোঁজ খবর রাখছি,বন্যা আক্রান্ত এলাকায় সহায়তা দেয়া হবে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান,সরকার সব সময় বন্যা কবলিত অসহায় মানুষের পাশে আছে। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে।
চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। জেলা প্রশাসক মো জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ শহরে প্রবল বেগে পানি আসছে। আমার বাসাতেও পানি উঠেছে। আমাদের ছাতক উপজেলা পুরোপুরি পানির নিচে। দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রায় সব জায়গায় পানি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ। সড়কে পানি উপচে পড়ছে। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর সড়ক গত তিন দিন যাবত বন্ধ আছে।