বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় অর্ধশতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাই বেশি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত আছে এবং শুধুমাত্র যেসব বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে গেছে, সেসব বিদ্যালয়গুলো বন্ধ আছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পাঠ্যদান বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে অভিভাবক মহল দাবি জানান।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও ফাইল নিরাপদ উচ্চতায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা অফিসগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,গত দুদিন বন্যাকবলিত হয়ে আছে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর,র্ধমপাশা,জামালগঞ্জ,মধ্যনগর, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলাসহ অনেক এলাকায় লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় অভিভাবকেরাও ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ওঠায় বাধ্য হয়েই পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়েছে।
আমিন মিয়া,রাশিদ মিয়াসহ হাওরাঞ্চলে বন্যা কবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক,শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,হারও এলাকায় ৯০ভাগ স্কুল আছে যেগুলোতে হাওর পাড়ি দিয়ে যেতে হয় নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য হাওরে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ। দূর্ঘটনার আশংকায় পানি না কমা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাতে পারছেন না অভিভাবকরা। সম্প্রতি জেলার দোয়ারা বাজার উপজেলায় গোজাউড়া হাওর পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে দু শিক্ষার্থী নৌকা ডুবে মৃত্যু হয়েছে।
বন্যাক্রান্ত জেলার উপজেলা দোয়ারাবাজার উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা অনুকূল চন্দ্র দাস বলেন,উপজেলার প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় ও সড়কে পানি উঠে গেছে। পানির কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করছি। উপজেলার ৩০টি বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় পাঠদান স্থগিত। ৪টি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এর সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।
তাহিরপুর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান শেখ জানান,উপজেলার অনেক স্কুলে ঘোষণা না দিলেও বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। আমার ১৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
৩-৪টি প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়েআসার রাস্তাঘাট, গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না। আর অভিবাবকগনও বর্তমান অবস্থায় স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
ছাতক উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন,ছাতক উপজেলায় ১৮৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই। ৩টি বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করে আক্রান্তরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও পাহাড়ী ঢলের পানিতে সড়ক ও বাড়িতে পানি থাকায় ৬০ শতাংশ বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষার্থী এলেও দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাই শুধু শিক্ষকরাই বিদ্যালয়ে আছেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুর রহিম বাবর জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১৩০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে স্থগিত আছে ১৫টি বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন,যে সকল বিদ্যালয়ে ঢলের পানি ঢুকে গেছে তা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর বেশি ক্ষতি গ্রস্থ এলাকার স্কুল গুলোকে পাঠদান স্থগিত করে এলাকাবাসীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা তাদের প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,জেলায় কয়েকটি উপজেলার প্রায় ১০ থেকে ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি ডুকেছে জানিয়েছেন বিদ্যালয় প্রধানগন। প্লাবিত হওয়ায় সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। আর বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়া এলাকা গুলোতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে।