২০২২-০৫-২৫ ২৩:১১:৩০ / Print
সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক এবং আইনজীবী মো. রেজাউল করিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপর হামলাকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ৩০ এপ্রিল সংঘটিত ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এবং প্রধান আসামী এমদাদুল হককে গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার করে নেত্রকোনা ডিবি পুলিশ।
দীর্ঘ ২৫ দিনের নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মাধ্যমে তার বসতবাড়ি থেকে দুই মামলার এফ. আই. আর. ভুক্ত আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী এমদাদুলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এমদাদুল হকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লাউজানা গ্রামে। মাদক চোরাচালানের সাথে সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে অবৈধ পন্থায় অন্যের জমির সীমানা খুঁটি স্থানান্তর,
এলাকার সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চাঁদাবাজি, পেশিশক্তির মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার, সমাজের দুর্বল মানুষদের অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ ও মানহানিকর বক্তব্য প্রচার, গ্রামে সালিশ বৈঠকের নামে অর্থের বিনিময়ে পক্ষপাতমূলক আচরণ,
অন্যায় ও প্রতারণামুলকভাবে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে অহেতুক ভূমি বিরোধ সৃষ্টিসহ ডজন খানেক অভিযোগ রয়েছে এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও গ্রামের স্কুল-কলেজগামী পড়ুয়াদের মাঝে মাদকের বিষাক্ত নেশা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বখাটেদের সমন্বয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন কুখ্যাত কিশোর গ্যাং। লালন করেন নিজস্ব লাঠিয়াল ও পেটুক বাহিনী। তার দুর্ধর্ষ লাঠিয়াল বাহিনীর মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তিনি কায়েম করেছেন ত্রাসের রাজত্ব।
তার দাবীকৃত চাঁদার অর্থ দিতে না পারলে গ্রামের সাধারণ মানুষের ভাগ্যে ঘটে আকস্মিক বিপত্তি। তাদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরেই অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতার এক ঘটনার প্রেক্ষিতে চলতি বছর ২০ এপ্রিল আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে নিজাম উদ্দিন, উজ্জ্বল মিয়া এবং এমদাদুলসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন একই গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রাজ মামুদ।
ওই মামলায় প্রধান আসামী নিজাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করার পরদিন ৩০ এপ্রিল এমদাদুলের নেতৃত্বে মামলার বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপর সংঘবদ্ধভাবে সশস্ত্র হামলা চালায় এমদাদ বাহিনী ও তার কিশোর গ্যাঙ্গের সদস্যরা।
বর্বরোচিত এই সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন বাদী রাজ মামুদ এবং ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা তাঁর দুই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার বজলুল করিম এবং এডভোকেট মোঃ রেজাউল করিম। এই সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় নেত্রকোনার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক,
সুশীল সমাজের সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও সমাজের নানা শ্রেনিপেশার মানুষ। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে হামলায় জড়িত ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে পূর্বধলা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এ ঘটনায় বুধবার এমদাদকেও গ্রেফতার করলেও অন্যরা এখনো অধরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এমদাদুল হকসহ মামলার অন্যান্য আসামীরা বিভিন্ন মাধ্যমে ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের এবং মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলো।
মদাদুলকে গ্রেপ্তার করায় নেত্রকোনা পুলিশকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি মামলার অন্যান্য আসামীদেরকেও দ্রুত গ্রেপ্তার করে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
সিলেটসানডটকম -টিআরসি