চাঁদপুরের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম খানকে মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনে অনুমতি দিতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
বালু তোলার অনুমতি বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার এ আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘বালু উত্তোলনের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায় ছিল, তার বিরুদ্ধে আমরা লিভ টু আপিল (হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে আবেদন) করেছিলাম। আজ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি তা স্থগিত করেছেন।
আগামী ২৫ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বালু উত্তোলনের অনুমতি বাতিলের বিষয়ে শুনানি হবে।’
২০১৫ সালে নৌপথ সচল করার কথা বলে রিট করেছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান। তার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় চার বছর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিলে চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ২১টি মৌজায় মেঘনার ডুবোচর থেকে ৩০ কোটি ৪৮ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
নথিপত্রে দেখা যায়, মেঘনা নদীতে জনস্বার্থে নিজ খরচে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট করেছিলেন সেলিম খান। রিটের ওপর ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে চাঁদপুরের ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায়ে হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের একটি চিঠির উল্লেখ করে বলা হয়, ওই মৌজাগুলোতে পর্যাপ্ত বালু-মাটি রয়েছে এবং তা তুলতে কোনো বাধা নেই।
লিভ টু আপিলে বলা হয়, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে কোনো নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ প্রতিবেদনই যে একক ভিত্তি নয়, তা হাইকোর্ট বিভাগ উপলব্ধি করতে পারেননি।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে, পরিবেশ, পাহাড়ধস, ভূমিধস অথবা নদী বা খালের পানির স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন, সরকারি স্থাপনার (যথা ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, ফেরিঘাট, হাটবাজার, চা-বাগান, নদীর বাঁধ, ইত্যাদি) এবং আবাসিক এলাকার কোনো ক্ষতি হবে কি না সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত গ্রহণ করবেন জেলা প্রশাসক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারার বলছেন, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নদী থেকে নির্বিচারে বালু তোলার কারণে চাঁদপুরে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না ভাঙন। ইলিশের আবাসস্থল ঝুঁকির মুখে পড়েছে। নদীভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।
এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে ভাঙনকবলিত মানুষ, জেলে ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিভিন্ন মহলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
সিলেটসানডটকম-এবিসি