২০২৩-১২-১২ ০১:৪০:৩৫ / Print
৩৭ বছর পর সিলেটে তেলের সন্ধান সম্ভাবনা জাগাচ্ছে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তেলের নতুন সন্ধান ভূমিকা রাখবে দেশের জ্বালানি অনুসন্ধানে গতি বাড়াতে।
তবে সিলেট-১০ গ্যাসক্ষেত্রে পাওয়া তেলের স্তর হবে ছোট আকারের-এমন পূর্বাভাস দিয়ে নীতিনির্ধারকদের উচ্চাভিলাষী না হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, পদ্ধতিগতভাবে উন্নয়নের প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তেল উত্তোলনে জোর দিতে হবে।
হরিপুরে তেল উত্তোলন বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত থাকায় ৫ বছরের বেশি জোগান দিতে পারেনি দেশের প্রথম তেলের খনিটি। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তা জৈন্তাপুরে কাজে লাগানোর তাগিদও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মিলতে পারে-এমন পূর্বাভাস নিয়ে গত জুনে শুরু হয়েছিল সিলেট-১০ অনুসন্ধান কূপ খনন কার্যক্রম। তবে অনুসন্ধান কাজ চালাতে গিয়ে মিলল প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু। দৈনিক ১৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জোগানের সম্ভাবনার পাশাপাশি ৩৭ বছর পর দেশের তেলের সন্ধান পাওয়ার সুখবরও দিল সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ১০ নম্বর কূপ।
প্রাথমিক তথ্য বলছে, কূপটিতে ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুত রয়েছে। ফলে সেখান থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল হারে আগামী ২০ বছর তেল মিলবে।
যদিও চূড়ান্ত ধারণা পেতে আরও ৫ থেকে ৬ মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে ছোট আকারের স্তর হলেও নতুন কূপে তেল পাওয়াকে জ্বালানি খাতের জন্য বড় সম্ভাবনা হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নতুন তেল স্তর হতে পারে হরিপুরের চেয়েও বড় আকারের।
একে বাংলাদেশের একটি বড় সূচনা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী সালেক সুফী বলেন, এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। পাশাপাশি বাপেক্স ও পেট্রোবাংলাকে আত্মবিশ্বাস দেবে।
তাছাড়া ওই অঞ্চলে আরও তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, আরও গভীরে বা আশপাশে খনন করলে তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম বলেন, তেলের এই প্রাপ্তি একটি শুভসংবাদ এবং বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম খাতে একটি নতুন সংযোজন বটে।
এখানে যে মজুত আছে সেটি হরিপুরের চেয়ে বড় বলে মনে হচ্ছে। এখানের তেলের প্রবাহও বেশি। ড. বদরূল ইমাম বলেন, আমরা হরিপুরে সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম দেখিনি। ফলে সেখানে যে পরিমাণ তেল উঠেছে, আমাদের ধারণা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ তেল এখনও রয়ে গেছে।
একইভাবে সিলেট-১০-এ আমরা যা পাচ্ছি, সেটি যে কূপে আমরা পাচ্ছি, আমরা যদি সেই কূপেই কেবল ভর করে থাকি, তাহলে একই ধরনের ভুল আবার হবে। এখন যেটি দরকার সেটি হচ্ছে, পদ্ধতিগতভাবে উন্নয়নের যে প্রক্রিয়া, সেটি অবলম্বন করা।
অনুসন্ধানকাজ চালালে ভালো কিছু পাওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণ সিলেট-১০ কূপ। তাই দেশে সংকট কাটাতে জ্বালানি অনুসন্ধানে আরও জোরালো পদক্ষেপের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিলেটে তেলের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সোমবার মন্ত্রিসভাকে জানিয়েছেন। ওই সময়, কীভাবে সেটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমি যখন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে ছিলাম, তখন তিন বছরে ৪৬টি কূপ খননের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছিলাম। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যে কূপটি খনন করা হয়েছিল, সেখানে তেল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে সবশেষ ১৯৮৬ সালে হরিপুরে তেলের সন্ধান মিলেছিল।
সেখান থেকে পাঁচ বছর তেল উত্তোলন করা হয়। এরপর প্রায়শই ছোট-বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিললেও বাংলাদেশে তেলের অস্তিত্ব সহসা পাওয়া যায় নি। এ কারণেই এটাকে আশাব্যঞ্জক বলছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান।