২০২৩-০৬-১৯ ১৬:০৩:৫০ / Print
শেষ হলো সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার। ২১ জুন অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের শেষদিন সোমবার প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
শেষ মুহূর্তে এসে মেয়র প্রার্থীরা একের পর এক জনসভায় অংশ নিয়ে এক সঙ্গে বেশি সংখ্যক ভোটারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
কাউন্সিলর প্রার্থীরা চেষ্টা করেছেন সব ভোটারের কাছে সরাসরি পৌঁছানোর। আজ মঙ্গলবার থেকে কোনো প্রচার করা যাবে না। এদিন ভোটের দিনের নানান কৌশল ও পরিকল্পনা আটবেন প্রার্থীরা।
সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শেষ মুহূর্তের প্রচারণার জন্য প্রার্থীদের ব্যাপাক প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তৈরি করা হয় মঞ্চ।
প্রতিটি নির্বাচনী অফিসের সামনে ছোটো পিকআপ বাঁশ আর সামিয়ানা টাঙিয়ে প্রস্তুত করা হয় মিছিলের জন্য। সকাল থেকে প্রার্থীদের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপ বিতরণ করেন। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় প্রার্থীদের মিছিল,
স্লোগান ও মাইকিং ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। সড়ক, পাড়া, মহল্লায় প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা ঘুরেছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে।
এছাড়াও ছিল মাইক বাজিয়ে প্রচারণা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকেও প্রচারণা ছিল সরব। অন্যান্য দিন কেবল সড়কে মাইকিং সীমাবদ্ধ থাকলেও সোমবার বিভিন্ন পাড়ার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দশ-পনেরো মিনিট করে থেমে থেমে মাইকিং করতে দেখা গেছে।
মাইকিংয়ে বিভিন্ন প্রার্থীর নাম ও প্রতীক ব্যবহার করে গান বাজানো হয়, স্লোগান দেওয়া হয়। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারণা ও গণসংযোগে অধিক ঘাম ঝরিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।
জয়ের জন্য আলাদা আলাদা কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন তারা। ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে নানান বিশ্লেষণ।
নির্বাচন নিয়ে নগরীর সর্বত্র ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে কোনো প্রার্থীকে ব্যক্তিগত পছন্দ করলেও তার দলীয় ট্যাগ পছন্দ করছেন না, অনেকে আবার কোনো প্রার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ না করলেও তার দলীয় ঐতিহ্য এবং মার্কার প্রতি সিলেটবাসীর দুর্বলতার জন্য তাকে ভোট দেবেন সেই চিন্তা করছেন।
প্রচার প্রচারণা নিয়ে কারো মধ্যে উৎসাহ আবার কারো মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন নির্বাচনে প্রচারণা একটি উৎসব।
তবে বেশিরভাগ লোকজন বর্তমান ডিজিটাল যুগে মাইকিংয়ের মতো প্রচারণা বন্ধ করে দেওয়ার মতামত দেন। তারা বলেন একসময় লোকজন তেমন সচেতন ছিলেন না, শিক্ষিত লোকজনের সংখ্যাও কম ছিল।
এখন প্রায় সবাই রাজনীতি সচেতন এবং পড়াশোনা জানেন তাই এই সময়ে এসে মাইকিং করে শব্দ দূষণের কোনো মানে হয় না। এদিকে শেষ দিনের প্রচারণায় বৃষ্টির জন্য ছিল বাড়তি আয়োজন।
অন্য সময় কেবল গাড়ি আর মাইক হলেই হয়ে যেতো। তবে এবার গাড়িও সাজাতে হচ্ছে কাপড় ও ত্রিপল দিয়ে। নগরীর দাড়িয়াপাড়ার প্রাইম লাইটিংয়ের স্বত্তাধিকারী সাইদুল ইসলাম বলেন নির্বাচনে প্রচার মিছিলের জন্য অনেকগুলো পিকআপ সকাল থেকে রেডি করে দিতে হচ্ছে।
বাঁশ বেধে, ত্রিপল আর কাপড় দিয়ে এগুলো রেডি করতে ব্যস্ত সময় পার করেন ডেকোরেটার্সের কর্মীরা। এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান জানান, ভোট গ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগেই বন্ধ হবে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা।
১৯ জুন মধ্যরাত ১২টার পর থেকে সিসিকের ৪২টি ওয়ার্ডে জেলা প্রশাসনের ৪২টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টিম নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে, নির্বাচনী পরিবেশ রায় এবং বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কাজ করবে।
এছাড়া এর বাহিরেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ১০টি টিম কাজ করবে। যাদের মধ্যে ওয়ার্ড ভাগ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি টিমের সাথে ১ প্লাটুন বিজিবি থাকেবে।
১৯ তারিখের পরের ৩ দিনের তারা মাঠে থাকবেন বলে জানান তিনি। এবারের সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৮ জন। তবে ইতোমধ্যে নির্বাচন বর্জন করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান।
এছাড়া দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম। এর মধ্যে জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণা সরব ছিলনা।
নগরীতে তাদের প্রচারণা খুব একটা চোখেও পড়ছে না। ভোটের মাঠে এখন বেশ আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুল। আর কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
যাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরতি ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।