২০২৩-০৬-০৩ ০৩:১২:৫৩ / Print
ভারতের ওডিশা রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৮৫০ জনের বেশি। ট্রেনের ভেতরে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
ওডিশার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা সুধাংশু সারঙ্গি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন তিনি। রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন দুর্ঘটনাস্থল বালাসোরে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া ১০০জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে। এই শতকে এটি ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। ওডিশা রাজ্যের বালাসোরে স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যে সাতটার দিকে মোট তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়।
ভারতের রেলবিভাগ জানায়, প্রথমে করমন্ডল এক্সপ্রেস নামের একটি যাত্রীবাহী ট্রেন - যা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়ার নিকটবর্তী শালিমার থেকে তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাই যাচ্ছিল – সেটির কয়েকটি বগি লাইনচ্যূত হয় এবং পাশের লাইনে থাকা আরেকটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ট্রেন সেগুলোকে আঘাত করে।
দ্বিতীয় ট্রেনটি বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়া যাচ্ছিল। এর পর দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনের সাথেও যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোর ধাক্কা লাগে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এ দুর্ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছেন।রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রূপি করে দেওয়া হবে।
‘মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে’
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা একজন ব্যক্তি টুইটারে লিখেন, লাইনচ্যুত কোচগুলো আগত বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসকে আঘাত করেছিল। যদিও এনডিটিভি যাচাই করতে অয়ারে নি, তিনি সত্যিই কোনো একটি ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলেন কিনা। তিনি টুইটে লিখেন, 'হাওড়া থেকে চেন্নাই পর্যন্ত করোমন্ডেল এক্সপ্রেসের যাত্রী হিসেবে, আমি অক্ষত অবস্থায় থাকার জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা।' বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের তিনটি সাধারণ কোচ সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত এবং লাইনচ্যুত হয়েছে। অনুভব দাস নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, জেনারেল, স্লিপার, এসি বগিসহ করোমন্ডেল এক্সপ্রেসের প্রায় ১৩টি কোচ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি ২৫০ জনের বেশি মৃত্যু দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন,' অনেক পরিবার নিঃশেষ হয়ে গেছে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্ঘীন লাশ এবং ট্রেনের লাইনে ছিল রক্তের স্রোত। এটি এমন একটি দৃশ্য যা আমি কখনো ভুলব না। ঈশ্বর পরিবারগুলোকে সাহায্য করুন।
আমার সমবেদনা ওডিশার মুখ্য সচিব প্রদীপ এনডিটিভিকে জানায়,'উদ্ধার অভিযান চলছে এবং আশেপাশের জেলাগুলোর সব হাসপাতালকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তিনটি এনডিআরএফ ইউনিট, ৪টি ওডিশা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ইউনিট, ১৫টিরও বেশি ফায়ার রেসকিউ দল, ৩০ জন ডাক্তার, ২০০ পুলিশ কর্মী এবং ৬০টি অ্যাম্বুলেন্সকে ঘটনাস্থলে জড়ো করা হয়েছে।'
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লাখ রুপি এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।
চেন্নাইগামী করমন্ডল ট্রেনটির কয়েকটি বগি বালাসোর এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে যায়। এ সময় পাশের এই লাইন দিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে আসছিল কলকাতাগামী একটি ট্রেন। ট্রেনটি এসে করমন্ডলের পড়ে যাওয়া বগিগুলোতে সজোরে ধাক্কা খায়।