সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শিশু ও নারী নিপীড়নের একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত
সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন-এর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ ও সকল প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন।
গতকাল ১০ই এপ্রিল বেলা সাড়ে বারোটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সংগঠন দুটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয় নাগরিকবন্ধন ও সমাবেশ। এতে সর্বস্তরের নাগরিক, নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আবৃত্তিকার, শিশু একাডেমির আবৃত্তি প্রশিক্ষক, নাট্য সংগঠন কথাকলির সদস্য, আবৃত্তি সংগঠন দ্বৈতস্বর- এর প্রতিষ্ঠাতা,
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন-এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নিপীড়নের একাধিক ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
যা নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে লোড়পাড় চলছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একাধিক নাট্য সংগঠন বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।
এ অবস্থায় সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন-এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করলেন।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক জান্নাত আরা খান পান্না ও সদস্য সচিব সন্দীপন শুভ্র সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন-এর সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম। । এই কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করে ছাত্র ইউনিয়ন, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী বলেন, নারী ও শিশু নিগ্রহের অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল। কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপন হলে সেই ব্যাক্তিকে সাথে সাথেই দোষী বলা যাবে না, আবার সেই ব্যাক্তিকে নির্দোষ বলা যাবে না।
অভিযোগ আসার সাথে সাথে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে সকল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। এ সময় প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা অভিযুক্ত ব্যাক্তির পক্ষে সাফাই দিলে নিপীড়নের শিকার নারী বা শিশুর প্রতি মানসিক চাপ তৈরি হয়।
তাই নিপীড়নের বিষয়ে কেউ মুখ খুললে তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে। সামাজিক নেতৃবৃন্দকে তার পাশে দাঁড়াতে হবে।
তাঁকে নিশ্চয়তা দিতে হবে। নির্ভয়ে যেন সে অভিযোগ তুলে ধরতে পারে। এই সমাবেশ ও নাগরিকবন্ধন সেই পথটি তৈরি করতে ভূমিকা রাখবে।
স্বাগত বক্তব্যে আব্দুল করিম কিম বলেন, সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে দেশে ও বিদেশের মানুষ সমিহ করে। এরমধ্যে এমন ঘটনার সংবাদ শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকজনকে ক্ষুব্ধ করেনি, আমরা নাগরিকেরাও ক্ষুব্ধ হয়েছি।
তিন সপ্তাহ ধরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হলেও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অভিভাবক সংগঠনসমুহের ভূমিকা হতাশাজনক।
গত তিন দশক ধরে শিশুদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ সাধারণ কোন অপরাধ নয়। এই অপরাধের অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
প্রবীন সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও কথাকলির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অম্বরিষ দত্ত বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠিত নাট্য সংগঠনের নাট্য উতসবে একজন নারী নাট্যকর্মীকে 'বডি সেইমিং' লজ্জা পাওয়ার জন্য এই যথেষ্ট।
এই সংগঠনের সাথে আমার দীর্ঘদিন থেকে সম্পর্ক নেই। তাই এই সংগঠনের কেউ হয়ে নয়, একজন অভিভাবক হিসাবে বলতে চাই, অভিযুক্ত ব্যাক্তির মত গুটিকয়েক মানুষের কারনে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন আজ সমালোচনারমুখে।
এই দায় নিতে হবে। অভিযোগ যখন উঠেছে সে সব আমলে নেয়া দরকার।
নাগরিক বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য রাখেন। সভায় বক্তাদের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন-কে সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অবাঞ্চিত ঘোষণার দাবি ওঠে।
বক্তারা অভিযুক্তকে রক্ষার জন্য গত তিন সপ্তাহধরে যারা কলকাঠি নেড়েছেন তাদের চিহ্নিত করার দাবি তোলেন। একিই সাথে আমিনুল ইসলাম লিটন কর্তৃক নিগ্রহের শিকার কেউ আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করতে চাইলে তার পাশে থাকার কথা বলা হয়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-এর সাবেক সাধারন সম্পাদক এনামুল মুনীর, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে,
সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, ভূমিসন্তান বাংলাদেশ সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিউর রহমান, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শহিদুজ্জামান পাপলু প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলা শাখার সিনিয়র সদস্য কমরেড হিমাংশু মিত্র, কবি হরিপদ চন্দ, নাট্যকার বাবুল আহমেদ , নাট্যকার ও নির্দেশক উত্তম সিংহ রতন,
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা সঞ্জয় কান্তি দাস, সঞ্জয় কুমার নাথ , গনতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক তানজিনা বেগম , ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শ্রাবন দাস, নাট্যকর্মী অরুপ বাউল ,
নাট্যকর্মী মাসুম খান , গনজাগরন মঞ্চ এর কর্মী রাজীব রাসেল , নাট্যকর্মী দেবজ্যুতি দেবু, নাট্যকর্মী ধ্রুবজ্যোতি দে, লেখক ও সাবেক ছাত্রনেতা রিপন ঘোষ, নাট্যকর্মী রিপন চৌধুরী, নিরঞ্জন সরকার ,লালন প্রমুখ।