২০২২-০৮-০২ ০০:০৯:৪০ / Print
সিলেটের ওসমানীনগরে অচেতন অবস্থায় দুই প্রবাসীর মৃত্যু ও অপর তিনজন অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় এখনো কোন কিনারা হয়নি। রহস্যের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে আলোচিত এই বিষয়টি।
প্রবাসী বাবা-ছেলের-মৃত্যুর পর এখনো জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সামিরা ইসলাম (২০)। তার দেহের অর্গানগুলো কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে আলোচিত এই ঘটনার একসপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ঘরহস্যজট খুলতে তদন্ত সহায়তায় ভিসেরা প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পর্যন্ত হতাহতদের বিষয়ে কোনো কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। যদিও প্রবাসী পরিবার খাদ্য বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, এমনটি অনুমান করা হয়েছিল!
সিলেটের পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন, প্রবাসী পরিবারের যে দুই সদস্য কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছে থেকে পারিবারিক বিরোধ, সংঘাত কিছুই পাওয়া যায়নি।তাই আমরা ভিসেরা প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, তদন্তে আমরা কয়েকটি কারণ প্রাধান্য দিয়েছি, তন্মধ্যে খাদ্য বিষক্রিয়া, সাপোর্টেশনে হতে পারে, অক্সিজেন স্বল্পতা কিংবা সুইসাইডাল এটেস্পট হতে পারে।
এ বিষয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়টি আমরা সন্দেহে নিয়ে খাবার পরিক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছি। তবে সেই প্রতিবেদন এখনো এসে পৌঁছায়নি।
তাছাড়া ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)এস এম মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ময়না তদন্তের ভিসেরা প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি। ওই প্রতিবেদন আসতে আরো কয়েকটা দিন সময় লাগবে।
জানা গেছে, ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিহত প্রবাসী রফিকুল ইসলামের মেয়ে সামিরা ইসলামের (২০) জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।তার কিডনী-লিভার বিষক্রিয়ার প্রভাবে তেমন একটা কাজ করছে না। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নিহতের স্ত্রী হুছনারা বেগম (৪৫), ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৫) ঝুঁকিমুক্ত থাকায় তাদের আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক বলেন, ওই প্রবাসী পরিবার ভর্তির পর তাদের চিকিৎসায় মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ডা. শিশির চক্রবর্তীর তত্বাবধানে চিকিৎসার্থে কমিটি করা হয়। তারা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে ভর্তির পর একবারও মেয়েটির (সামিরার) জ্ঞান ফিরেনি। তার দেহের বিভিন্ন অর্গানগুলো কাজ করছে না। কিডনি ও লিভার ফাংশন দুর্বল হয়ে গেছে। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তবে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও ছেলে সাদিকুল ইসলামকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
২৫ জুলাই রাতে খাবার শেষে তারা ঘুমিয়ে পড়েন ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই খাতুপুর গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০), তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫), ছেলে মাইকুল ইসলাম (১৮) ও সাদিকুল ইসলাম (২৫) এবং মেয়ে সামিরা ইসলাম (২০)।
পরদিন অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ২৮ জুলাই অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।ওইদিন বেলা ২টার দিকে দয়ামীর পারকুল মাদ্রাসা মাঠে জানাযা শেষে উপজেলার দিরারাই গ্রামের বাড়িতে পরিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।