বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনের আর মাত্র চারদিন। আজকের দিনটি পেরোলেই আগামী ১৫ জুন পৌর নির্বাচন। ইতিমধ্যে ১০ মেয়র প্রার্থীর সকলেই তাদের ইশতেহার ঘোষনা করেছেন। নির্বাচিত হলে সেগুলো বাস্তবায়ন করে পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভা হিসাবে গড়ে তুলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
শেষমুহুর্তের প্রচারণায় কঠিন সমীকরণ তৈরী হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী ১০ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৬ জন ইউরোপ ও আমেরিকা প্রবাসী এবং চারজন দেশি। এবার মেয়র পদে কে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণওধচলছে সচেতন ভোটারদের মধ্যে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরসভার ২০১৭ সালের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. আব্দুস শুকুর। তিনি পেয়েছিলেন ৫ হাজারের বেশি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ধানের শীষের আবু নাসের পিন্টু, তৃতীয় হয়েছিলেন সাবেক পৌর প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন। তিনি পেয়েছিলেন ৪ হাজারের কাছাকাছি ভোট। ওই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা জমির হোসাইন পেয়েছিলেন মাত্র ৫ শতাধিক ভোট। এবারকার পৌর নির্বাচনের দৃশ্যপট ভিন্ন। এবার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মনোনীত কোন প্রার্থী নেই। দলীয় প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টি।
নৌকা’র প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. আব্দুস শুকুর। এ নির্বাচনে তিনি মোটামুটি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। উন্নয়নের বিচারে মূল লড়াইয়ে থাকার কথা থাকলেও দলের অপর প্রবাসী তিন বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিয়ে তিনি অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। ভোটের মাঠে তারাও নৌকা’র সাথে টেক্কা দিচ্ছেন।
কঠিন এ সমীকরণের সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান। তিনি স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা’র বিজয়ে কর্মী-সমর্থকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানান।
শহীদ পরিবারের সন্তান সাবেক পৌর প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন। একমাত্র দেশি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি এবারও মেয়র নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তাঁর ‘জগ’ প্রতীকের প্রত্যেক ঘরোয়া বৈঠকে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয়ভাবে তফজ্জুল হোসেনকে অনেকেই ‘ভোটের কারিগর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রতিবেশী দু’টি ওয়ার্ডে তাঁর আশানুরূপ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ ’৯৪ এর জিএস ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুকুল হক শুরু থেকে চামচ প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন। তাঁর বাড়ি সংলগ্ন কেন্দ্রে পৌরসভার সর্বোচ্চ ভোট ৩৬৫৩। ছাত্রলীগের সাবেক এ ত্যাগী নেতার প্রতি সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকের সমর্থন রয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেকেই সমর্থন করছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফারুকুল হককে। এছাড়া, ২, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডে তিনি অনেক বেশি ভোট পাবেন বলে তার সমর্থকরা মনে করেন। গত
বৃহস্পতিবার তিনি এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুস শুকুর, দলের প্রতিবাদী প্রার্থী ফারুকুল হক ও কমিউনিস্ট পার্টির এডভোকেট কাশেম আহমদ একই ‘কসবা’ গ্রামের সন্তান। তবে, তাঁরা আলাদা আলাদা ওয়ার্ডের ভোটার। আঞ্চলিক ইস্যুতে এ তিন প্রার্থীর মধ্যে ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐক্য হলে তাদের একজন মূল লড়াইয়ে থাকবেন এমনটি মনে করছেন কেউ কেউ।
পৌরসভার শ্রীধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌরসভার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট ৩৩৫৪। এ কেন্দ্রের ভোটার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হাজি আব্দুল কুদ্দুছ টিটু। বিগত নির্বাচনে একই কেন্দ্রের ভোটার ছিলেন বিএনপির পিন্টু। তিনি ঐ কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন। পিন্টুর মতো এবার হেলমেট প্রতীকের টিটওু ঐ কেন্দ্রে আশানুরূপ ভোট পাবেন বলে তার সমর্থকরা আশাবাদী । শেষ পর্যন্ত এমনটা হলে তিনিও মূল লড়াইয়ে থাকতে পারেন। ইতোমধ্যে ১৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আব্দুল কুদ্দুছ টিটু। তিনি বিজয়ী হলে প্রবাসীদের জন্য ‘এনআরবি সেন্টার’, শহরে সিসিটিভি ক্যামেরা, বিনোদন পার্ক, আইটি সেন্টার ও ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালুর কথা উল্লেখ করেছেন।
হঠাৎ করে আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মো. আব্দুস সবুর। নানা কারণে আলোচিত পরিবারের এ সন্তান মোবাইল প্রতীক নিয়ে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন।
একাডেমিক দিক দিয়ে এ নির্বাচনের সর্বোচ্চ শিক্ষিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী প্রভাষক আব্দুস সামাদ আজাদ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এমফিল গবেষক ও দেশি প্রার্থী হিসেবে সামাদ হ্যাঙ্গার প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় রয়েছেন। জামায়াত ঘরাণার উদীয়মান এ প্রার্থী এখন পর্যন্ত তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তার এলাকার আরেক প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কানাডা প্রবাসী আহবাব হোসেন সাজু। এলাকাবাসী দফায় দফায় বৈঠক করলেও এখনো এ দু’জনের মধ্যে ঐক্য গড়তে পারেননি।
এছাড়া, পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কাস্তে প্রতীকের দেশি প্রার্থী এডভোকেট আবুল কাশেম।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সুনাম উদ্দিন (লাঙ্গল) নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৫ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৩৬৯ জন। এতে ১০ মেয়র ও ৫৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।