শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ইংরেজী, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা ENG

ভেঙ্গে গেছে জকিগঞ্জ ডাইক, সিলেটে আশ্রয়কেন্দ্রের খোঁজে বানভাসি মানুষ

সিলেটসান ডেস্ক::

২০২২-০৫-১৯ ১৮:৩৯:৪৪ /

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ আকার ধারন করেছে। গভীর রাতে ভেঙ্গে গেছে জকিগঞ্জ ডাইক।

 

এনিয়ে মহা টেনশনে দিনাতিপাত করছেন উপজেলার মানুষ। এমনিতেই পুরো উপজেলা জলমগ্ন। রাতে ডাইক ভাঙ্গায় ঘুম কেড়ে নিয়েছে উপজেলার লোকজনের।

 

এদিকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিলো। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।

 

আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়। সুরমা, কুশিয়ারা-সারি, ধলাই সবকটা নদনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি উঠায় ঝুঁকি এড়াতে দক্ষিণ সুরমাসহ সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সিলেট সদরের ৭টি ইউনিয়নসহ কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ উপজেলা সদর পানির নিচে রয়েছে।

বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হওয়ায় এলাকায় দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

 

অন্যদিকে, সিলেটকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি উঠেছে।

 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।

 

স্থানীয়দের দাবি ১৯৮৬ সালের পর এমন বন্যা দেখেননি সিলেট অঞ্চলের মানুষ। এবার সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে বসেছে।

সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিনের চেয়ে বেশি।

 

বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও। এদিকে, বন্যায় আগেই সীমান্তবর্তী সিলেট সদর উপজেলা, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

 

সবকটা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গরু-মহিষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। উপজেলার স্কুলগুলোকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।

 

অনেকেই বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন। কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে।

সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটখোলা-জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯০ ভাগ মানুষ।

 

অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও একই অবস্থা। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, ‘উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এটা সিলেট অঞ্চলের জন্য আতঙ্কের। এ সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার-চাল পৌঁছে দিচ্ছে।

 

এছাড়া, বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

দক্ষিণসুরমা :

দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি জানান, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সিলেট-কামালবাজার সড়কের উপর দিয়ে কয়েকটি স্থানে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় জনগণ।

ফলে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী জনসাধারণকে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া ক্বিনব্রিজের দক্ষিণ মুখ থেকে ঝালোপাড়া-কদমতলী সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় কিছু সংখ্যক জনগণ।

চাঁদনীঘাট এলাকার বেশ কিছু দোকানে ও ভার্থখলার কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

 

বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট-কামালবাজার সড়কের টেকনিক্যাল রোড, বরইকান্দি মিস্ত্রী মসজিদ, বরইকান্দি ১নং ও ২নং রোডের সামনে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করায় এই এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, ছাত্রাবাসের মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

বরইকান্দি বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-৩ এ পানি প্রবেশ করায় সকাল থেকে স্টেশন রোড, বাবনা, বঙ্গবীর রোড, পিরোজপুর, লাউয়াই, বরইকান্দি, মোল্লারগাঁওসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

 

যমুনা তেল ডিপোতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তেল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। সুরমা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা চাউলের আড়ৎ ও মিলে পানি প্রবেশ করায় বিপুল পরিমাণে ধান-চাউল ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

অনেকে ট্রাকযোগে ধান-চাউল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের মন্দিরখলাসহ আশপাশ এলাকার জনগণ সুরমা নদীর পানি বালুর বস্তা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছেন। ঝালোপাড়া খেয়াঘাট এলাকায় বালুর বস্তা ফেলে সুরমা নদীর পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় জনগণ। কামালবাজার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায় রাস্তা-ঘাট ডুবে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় জনসাধারণ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সুরমা নদীর তীরে সুইপারকলোনিসহ আশপাশের বাসাবাড়ি ডুবে যাওয়ায় এই এলাকার লোকজন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

 

এভাবে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মোল্লারগাঁও, কামালবাজার, দাউদপুর, মোগলাবাজার, সিলাম, তেতলী,

লালাবাজার, জালালপুর ও সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত বরইকান্দি, কুচাই ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 

কোম্পানীগঞ্জ 

প্রতিনিধি  জানান, কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আউশধানের বীজতলা ও রাস্তাঘাট।

 

অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ও নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। উপজেলায় বন্যাদুর্গত মানুষেরা খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে আছেন।

বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন উপজেলার অধিবাসীরা। বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, পূর্ব ইসলামপুর, ইছাকলস, দক্ষিণ রনিখাইসহ সবকটা ইউনিয়নের তিন-চারটি করে গ্রাম ছাড়া ইউনিয়নের সকল গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

 

এসব গ্রামের লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। অনেকে আসবাবপত্র, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।

 

এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে পরিবার নিয়ে খাটের উপরে অবস্থান করছেন। ঘরে খাবার নেই। নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না।

 

এ অবস্থায় অত্যন্ত কষ্টে আছেন ইউনিয়নবাসী। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল হক বলেন, উপজেলার ৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি। এ কারণে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া, সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বদিউজ্জামান আহমদ।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ৩৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক পরিবার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

 

বরাদ্দ পেলে বিতরণ করা হবে।

 

কানাইঘাট 

প্রতিনিধি জানান, কানাইঘাটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। কানাইঘাট সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৪ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কানাইঘাট বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে হাঁটু পানি থেকে কোমর পানি থাকায় অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখনো বানের পানি অবস্থান করছে।

 

কানাইঘাট-দরবস্ত, গাজী বোরহান উদ্দিন রোডের নিচু এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সাথে কানাইঘাট সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

 

 

পরিবহনের অভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

অনেক এলাকা নতুন করে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

 

হাজার হাজার বাড়ি-ঘর এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। দেড় লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সড়কগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোন ধরনের ত্রাণসামগ্রী তারা পাচ্ছেন না। গ্রামীণ এলাকার সমস্ত পাকা, কাচা রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।

 

 উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান ১৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি বিভিন্ন উঁচু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানিবন্দি প্রায় ২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার ৯০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আক্রান্ত হওয়ায় বন্ধ রয়েছে বলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

 

গোয়াইনঘাট  প্রতিনিধি জানান, গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যত সময় বাড়ছে, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাব দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎহীন রয়েছে পুরো উপজেলা। থানা সদরের সাথে ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হাজার হাজার ঘর বাড়িতে পানি উঠেছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। শতকরা ৯০% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে, এতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। হাট-বাজারে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা গবাদি পশু নিয়ে রয়েছেন বিপাকে। চরম গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। অপরদিকে, বন্যার কারণে শ্রমিকরা কোন কাজে যেতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাব রয়েছে।

 

জৈন্তাপুর প্রতিনিধি  জানান,

জৈন্তাপুরে কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলে বন্যায় উপজেলার ৫ ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে পড়েছেন। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে দরবস্ত, ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউপির বিভিন্ন গ্রাম।

 

সারী ও বড় নয়াগং নদীর পানি স্বাভাবিক পর্যায়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অতীতের সকল বন্যার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ৫টি ইউনিয়নের শতকরা ৮০ ভাগ গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

এদিকে, বন্যার কবলিত গ্রামবাসীরা উঁচু স্থানে গৃহপালিত পশু গরু-মহিষ নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে চলছেন।

 

অপরদিকে, জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এসব অঞ্চলে অবস্থিত সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সেই সাথে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হচ্ছে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম জানান, বন্যা প্লাবিত এলাকা সমূহের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। বন্যা কবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

বন্যা আক্রান্তদের উদ্ধারে জরুরি নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৷

 

এদিকে, বন্যায় পানিবন্দি মানুষকে শুকনা খাবার দিয়ে সহায়তা করছেন জনপ্রতিনিধি, সমাজের বিত্তবান বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।

 

ছাতক প্রতিনিধি জানান, টানা এক সপ্তাহ’র বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতকের সর্বত্রই বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উঁচু জমিতে করা কয়েক শত একর বোরো ফসল।

জমিতে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ছাতকে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সকল নদ-নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি এখানে ব্যাপক আকার ধারণ করছে।

ইতোমধ্যে বন্যায় তলিয়ে গেছে এখানকার বহু রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বীজতলা, উঁচু জমির বোরো ফসল।

পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। শহরের নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার।

পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে ব্যাপক হারে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ছাতক শহরের সকল ক্রাশার মিল বন্ধ। নদীতে কার্গো লোডিং আন লোডিং বন্ধ হয়ে পড়েছে।

 

এতে শত শত শ্রমিক এক সপ্তাহ ধরে বেকার হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে- সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

 

ইতোমধ্যে উপজেলা সদরের সাথে ইসলামপুর, চরমহলা, ভাতগাঁও, সিংচাপইড়সহ ৭টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রহমান জানান, পেপার মিল উচ্চবিদ্যালয়, তাঁতিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বৌলা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এ পর্যন্ত মোট ৩টা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

 

বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ছাতকে জনসাধারণকে আগেই সতর্ক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।

 দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি  জানান,

দোয়ারাবাজারে দেখা দিয়েছে অকাল বন্যা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বগুলা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীপুর, সুরমা, নরসিংপুর ও দোয়ারা সদরসহ উপজেলার ৯ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ।

উপজেলা সদরের সাথে সবক’টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তলিয়ে গেছে বন্দেহরি, গোজাউড়া ও নাইন্দার হাওরসহ উপজেলার সকল ফসলের মাঠ।

এসব হাওরের অধিকাংশ পাকা ধান ঘরে তুলতে না পারায় আহাজারি থামছে না প্রান্তিক বর্গাচাষীসহ ভূক্তভোগী কৃষকদের। রাস্তা, মাঠঘাট ও গোচারণভূমি তলিয়ে ষাওয়ায় গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা।

ঘরের মেঝেতে হাঁটুপানি, কোমরপানি থাকায় হাড়ি বসছে না অনেক বানভাসি পরিবারে। ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক পুকুরের মাছ। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষাকার্যক্রম।

 

 উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ জানান, বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

 

বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কৃষকদের নষ্ট হওয়ার উপক্রম ধান গুদামে সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ভেঙ্গে গেছে ত্রিমোহনার ডাইক। 

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে কুশিয়ারা-সুরমা নদীর পানি বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকায় নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাইক উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে।

 

ইউপি চেয়ারম্যানরা ও এলাকাবাসী ডাইকের উপর বালুভর্তি বস্তা ফেলেও কোনভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। প্লাবিত হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।

 

নদীর তীরবর্তী গ্রামের লোকজনের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে গৃহপালিত পশু নিয়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বন্যার পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের উপদ্রবও দেখা গেছে।

উজানের ঢল আর বৃষ্টি না থামলে জকিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।

 

খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বারহাল ইউপি, কাজলসার ইউপি, মানিকপুর ইউপির বিভিন্ন স্থানে ডাইক ভেঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে।

 

সময় সময় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরো উপজেলায় প্রায় ৮টি স্থানে ডাইক ভেঙ্গেছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্রায় অর্ধলাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। কৃষি ও মৎস্যখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

 

উপজেলা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইউপিতে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তারমধ্যে বিরশ্রী ইউপির কোনাগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

 

তাছাড়াও উপজেলার বিরশ্রী ইউপির উজিরপুর, বড়চালিয়া, সোনাপুর, খলাছড়া ইউপির বিভিন্ন স্থানে, জকিগঞ্জ পৌর এলাকার কেছরী গ্রামে, জকিগঞ্জ সদর ইউপির বাখরশাল,

 

মানিকপুর, রারাই, লালোগ্রাম, সুলতানপুর ইউপির ইছাপুর, সহিদাবাদ, গঙ্গাজল, বারঠাকুরী ইউপির উত্তরকুল, আমলশীদ, কসকনপুর ইউপির বিভিন্ন স্থানে ডাইকের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে 

 

প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে উপজেলায় কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে ৫০ মেট্রিকটন চাল ও ৩ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেটের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

 

বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। বন্যার্ত মানুষের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বেশী অবনতি হলে লোকজনকে প্রশাসন নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।

এ জাতীয় আরো খবর

সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল সম্পাদক সিরাজ

সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল সম্পাদক সিরাজ

কণ্ঠশিল্পী পাগল হাসান আর নেই,  সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে গেল একটি কন্ঠ

কণ্ঠশিল্পী পাগল হাসান আর নেই, সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে গেল একটি কন্ঠ

মোঘলাবাজারে চেক প্রতারনা মামলায় লন্ডন প্রবাসী মনসুরুল কারাগারে

মোঘলাবাজারে চেক প্রতারনা মামলায় লন্ডন প্রবাসী মনসুরুল কারাগারে

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

 উপজেলা নির্বাচন ২০২৪: সিলেট বিভাগের ১১ টিতে নির্বাচন ৮ মে

উপজেলা নির্বাচন ২০২৪: সিলেট বিভাগের ১১ টিতে নির্বাচন ৮ মে

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ  কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির  নবনির্বাচিত কমিটির অনুমোদন

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির অনুমোদন