২০২২-০৫-১৭ ১৩:২৮:৫৪ / Print
গত কয়েকদিনের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
এ ছাড়াও নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মানুষের বসতবাড়িতে পানি উঠে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
তবে, কিছু কিছু যায়গায় পানি কমলেও মানুষের মাঝে যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। গেলো দুয়েকদিনের চাইতে আজ (১৭ মে) মঙ্গলবারও বন্যার পানি কিছু কিছু যায়গায় বেড়েছে।
তাই উপজেলার পানিবন্দি মানুষের মাঝে প্রতিনিয়ত এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪৭ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার সবক'টি ইউনিয়নে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যেন ভয়াল বন্যায় বিপর্যস্ত গোয়াইনঘাটের জনজীবন।
অপরদিকে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল হওয়ায় ঢলের পানি বেড়ে গোয়াইনঘাটের সিংহভাগ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বসতবাড়িসহ বিভিন্ন হাটবাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে সাধারণ মানুষের মাঝে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও অনেকে গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন।
উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পানি বেড়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানিবন্দি মানুষেরা জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পিয়াইন নদী এবং সারি নদী দিয়ে এলাকায় পানি ডুকছে।
এতে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে পানি উঠে প্লাবিত হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রধান সড়ক গুলো সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, সারীঘাট - গোয়াইনঘাট, জাফলং-গোয়াইনঘাট, হাতিরপড়া-ফতেহপুর এবং আহারকান্দি গোয়াইনঘাট সড়ক গুলো বিছিন্নভাবে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পাশাপাশি উপজেলার সহস্রাধিক পরিবারের বসতঘরে বন্যার পানি উঠেছে। আকস্মিক এ বন্যায় হাজার হেক্টর বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্যার্ত মানুষের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ৪৭ টি নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র।
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির নির্দেশনা ও অর্থায়নে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে।
যা বুধবার থেকে উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে পৌঁছে যাবে। প্রতিটি প্যাকেটে থাকবে দুই কেজি চিঁড়া, ৫০০ গ্রাম গুড়, ১ প্যাকেট মোমবাতি ও দেয়াশলাই, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন।
ইউনিয়ন প্রতি ১ হাজার প্যাকেট করে উপজেলার সর্বমোট বারোটি ইউনিয়নে ১২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে গবাদিপশুর জন্য গোখাদ্যের বরাদ্দ আসছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার সিংহভাগ অঞ্চল ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যার পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধির ফলে সড়ক পথে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ৪৭ টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে।
তার মধ্যে ৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রে বানভাসি মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্ধ করে পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি'র নির্দেশনা ও অর্থায়নে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্ধ হয়েছে।
যা বুধবার থেকে উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এছাড়াও তিনি সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।
সিলেটসানডটকম-জিটুজি