দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি শুকাতে না শুকাতে ভারতের মেঘালয়ে টানা বর্ষণে সিলেটের গোয়াইনঘাটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে করে উপজেলার হাওরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পাঁচ শতাধিক হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দফায় দফায় বন্যার কারণে ফসল হানির শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকেরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বুধবার মধ্য রাত থেকে উপজেলার সারি ও ডাউকি নদীর পানি কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের নলজুরি, শান্তি নগর, মুসলিম নগর, লাখের পাড়, কৈ-কান্দির পাড়, হাঁড়ি খেয়ার পাড়, ছৈলাখেল অষ্টম খন্ড, নবম খন্ড, সানকি ভাঙা, আসাম পাড়া, আসাম পাড়া হাওর, নয়াগাঙেরপাড়, মধ্য জাফলং ইউনিয়নের বাউরবাগ হাওর, ভিত্রিখেল হাওর, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দা,
তিতকুল্লি এবং বুধিগাঁও হাওর গ্রামের নিচু জমিগুলো প্লাবিত হয়ে পাঁচ শতাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
দফায় দফায় বন্যার কারণে এসব অঞ্চলের কৃষকদের রূপায়িত বুরো ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় এখন দিন কাটছে তাদের।
এ নিয়ে কথা হলে কৃষক ফিরোজ মিয়া, মজিবর মিয়া, জাহিদ হাসান, মামুন মল্লিক, সাদেক আলী ও আলা উদ্দিন মিয়া জানান, তিন সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে তিন দফা বন্যা হলো। প্রথম দফা বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। আর দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি পুরোপুরি না কমতেই আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের জমির ধান তলিয়ে গিয়ে সবই নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক কথায় আমরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তারা বলেন, আমাদের এলাকায় যে বেড়িবাঁধটি রয়েছে এটি সঠিকভাবে সংস্কার করা হতো, তাহলে হয়তো পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফসলের এতোটা ক্ষতি হতো না। তাই পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে এ অঞ্চলের ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদেও প্রতি জোর দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রায়হান পারভেজ রনি বলেন, 'পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় দুইশো হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। তবে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলে আরও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার ডাউকি নদীর পানি কিছুটা কমলেও সারি নদীর পানি বিপদ সীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খবর পেয়ে বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা ইতিমধ্যে আমরা পরিদর্শণ করেছি।
বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি নিরুপণ করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।