২০২২-০৩-৩০ ০৩:৪১:১২ / Print
সিলেটে ব্লগার ও বিজ্ঞান মনষ্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় চার জনের মৃত্যুদন্ড ও একজনকে খলাস দিয়েছেন আদালত। বুধবার (৩০ মার্চ) বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, সিলেট ( জেলা ও দায়রা জজ ) আদালতের বিচারক মুহাম্মদ নূরুল আমীন বিপ্লব।
রায়ের পূর্বে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হয় কারাগারে বন্দি থাকা আসামী আবুল খায়ের রশীদ ও শফিউর রহমান ফারাবিকে।
আদালতের রায়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন, আবুল খায়ের রশীদ, আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও হারুনুর রশীদ। রায়ে খালাস প্রদান করা হয় শফিউর রহমান ফারাবিকে। এছাড়া মামলার বিচারকার্য চলাকালিন সময়ে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন মান্নান রাহী। তাকেও অব্যহতি প্রদান করেন আদালত।
মামলায় পলাতক রয়েছেন ফয়সল আহমদ, হারুন অর রশিদ ও আবুল হোসেন। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যুর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আদালত সূত্র।
এর পূর্বে তিনদিন ধরে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লবের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ৩০ মার্চ নির্ধারণ করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নিহত ব্যক্তির ভগ্নিপতি সমর বিজয় সী শেখর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘অনন্ত বিজয় হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদন্ড ও ১ জনকে খালাস প্রদান করেছেন আদালত।
তিনি আরও জানান, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সাবেক পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি মুমিনুর রহমান, নিহত ব্যক্তির ভগ্নিপতি সমর বিজয় সী শেখর, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন, নিতু কান্ত দাশ ও নাদিম রহমান। আর পলাতক আসামিদের পক্ষে মামলা পরিচালনা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট সাব্বির আহমদ ও ইমরান আহমদ।
রাষ্ট্রপক্ষরে আইনজীবী (পিপি) মুমিনুর রহমান টিটু জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলনে, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্র নগর বাগলীর মামুনুর রশীদ (২৫) ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামরে আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫)। আর খালাস পেয়েছেন বির্তকিত ব্লগার সাফিউর রহমান ফারাবী। তিনি আরও জানান, রায় ঘোষণার সময় আবুল খায়ের রশীদ আহমদ এবং সাফিউর রহমান ফারাবী উপস্থতি ছিলেন।
২০১৫ সালের ১২ মে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সিলেট নগরের সুবিদবাজারের নুরানী আবাসিক এলাকার বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে রাস্তার মধ্যে দিনদুপুরে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায় স্বীকার করে আনসার বাংলা টিম নামের একটি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন।
পরে নিহত ব্যক্তির বড় ভাই রতেশ্বর দাশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। ২০১৭ সালের ৯ মে সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী ছয়জনকে আসামি করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলায় আসামিরা হলেন-শফিউর রহমান ফারাবী, মান্নান ইয়াহইয়া ওরফে মান্নান রাহী, আবুল খায়ের রশীদ আহমেদ, আবুল হোসেন ওরফে আবুল হুসাইন, হারুনুর রশীদ ও ফয়সল আহমদ।
আসামিদের মধ্যে ফারাবী ও আবুল খায়ের বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অপর আসামি মান্নান রাহী কারান্তরীণ অবস্থায় মারা গেছেন। অপর তিন আসামি প্রথম থেকেই পলাতক।
২০১৭ সালের ২৩ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছিল।