সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
কুলাউড়ার পুষাইনগর মন্দিরের মহাপ্রভুর
নামে নানা অনিয়মের অভিযোগ
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পুষাইনগরস্থ ‘শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত
সংঘ (সিটিএস) এবং শ্রী গৌড়াঙ্গ মহাপ্রভুর দেবালয়’ মন্দিরের মহারাজ
শুভেন্দু সিকদার (দামোদর) এর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন পূজারি ও
এলাকাবাসীরা। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মন্দিরের মহারাজ দামোদরকে
অপসারণের দাবি জানান এলাকাবাসীসহ মহারাজ যতী গোস্বামীর অনুসারীরা।
রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ
অভিযোগ করেছেন পুষাইনগর এলাকাবাসীর কয়েকজন ও যতী গোস্বামীর
অনুসারীরা।
এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট নগরের বাসিন্দা যতী গোস্বামীর শিষ্য
অনীলা ঘোষ। লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের সত্য উদঘাটনে সহযোগিতা
করার আহŸান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অনীলা ঘোষ বলেন, শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত
সংঘের প্রতিষ্ঠাতা গুরু মহারাজ যতী গোস্বামীর নেতৃত্বে শ্রী গৌড়াঙ্গ
মহাপ্রভুর দেবালয় সংস্কার কাজ ও নির্মাণ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তাঁরই
শিষ্য শুভেন্দু সিকদার (দামোদর)’কে এই মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দেন। যে কি না
আজ তারই সর্বনাশ করছে, পাশাপাশি মন্দিরের পরিবেশ ও সম্মানকে নষ্ট করছে।
তিনি বলেন, দামোদর একটি কুচক্রী মহলের সাথে আতাত করে গুরু মহারাজের
নামে ষড়যন্ত্র করছে। নানা অপবাদ রটাচ্ছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
কেনোনা এই মন্দির কেন্দ্রীক লোভে পড়ে ভুমিখেকোদের সাথে জোট
বেঁধেছেন মন্দিরের বর্তমান মহারাজ শুভেন্দু সিকদার (দামোদর)। মিথ্যা
বানুয়াট মামলা দেয়া হয়েছে গুরু মহারাজ যতী গোস্বামীর নামে।
অনীলা ঘোষ বলেন, মন্দিরে নারীদের রাত যাপন একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু
সিটিএসের নিয়ম ও গুরু মহারাজ যতী গোস্বামীর নির্দেশ অমান্য করে এখানে
নারীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন দামোদর। এমনকি নিজের দুই মাসিকে এখানে
স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছেন। মন্দিরের শোবার ঘরে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
কিন্তু বিভিন্ন নারীদের শয়নকক্ষে ডেকে আনা দামোদরের নিত্য নৈমিত্তিক
ঘটনা।
মন্দিরের সব হিসেব জায়েন্ট একাউন্টে হবার কথা থাকলেও দামোদর নিজের
বিকাশ একাউন্টে শিষ্যদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের অভিযোগ তুলা হয়
সংবাদ সম্মেলনে। মূলত এই মন্দিরকে নিজের স্বার্থে ও লাভের জন্য ব্যবহার করতে
নানা অপকৌশল গ্রহণ করছে একটি মহল। যেই মহলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুভেন্দু
সিকদার (দামোদর)।
তিনি বলেন, মন্দির সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তৎকালিন মন্দির কমিটি ও শ্রী
চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘের মধ্যে দলিলে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সিটিএস ও
গুরুমহারাজ যতী গোস্বামীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো ২০০৯ সালের ৮
জানুয়ারি। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের পর যতী গোস্বামী এই মন্দিরকে
নতুন করে তুলেন। যা বর্তমানে পুষাইনগর প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও ভক্ত অনুরাগীদের
সমাগমের জন্য এটি প্রসিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান মন্দিরের মহারাজ দামোদরের নেতৃত্বে স্বার্থান্বেষী মহল এই মন্দিরের সম্মান ক্ষুন্ন করছেন।
নানা ষড়যন্ত্রে মন্দিরকে নিজেদের ব্যবসা ও মুনাফার ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেসময় মন্দির উন্নয়ন ও পূণনির্মাণ
কমিটির ১০জনের একজন ও জয়চন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের
সহ-সভাপতি ডা. ননী গোপাল দাস। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এই
মন্দির নির্মাণ করতে গুরু মহারাজ যতী গোস্বামী যা পরিশ্রম করেছেন, তা
কখনও ভুলার নয়। কিন্তু আজ নিজেদের স্বার্থে একটি মহল তাকে নিয়ে বাজে
মন্তব্য করছে, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, মন্দিরের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অন্যায়ের সমাধানকল্পে আমাদের দাবি
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। এই তদন্তের
আলোকে এর সুষ্ঠ ও স্থায়ী সমাধান করে দেন। তা না হলে এই এলাকার সাধারণ
মানুষের প্রাণের প্রিয় একটি জায়গা, সাধারণ মানুষের আবেগের ও শ্রদ্ধার
জায়গা নষ্ট হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিক্তা রায়, সান্তনা ঘোষ, প্রার্থনা
বণিক, শিউলী রানী দাশ, বিপ্লব ঘোষ ও কার্তিক দত্ত।