রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায় প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে নারকীয় এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) ও পুরান ঢাকার একটি কলেজের সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আফরিন প্রীতি (২৪)। টিপুর গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্নাও গুলিতে আহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মোটরসাইকেল আরোহী খুনি আগে থেকেই টিপুর গাড়িকে অনুসরণ করে আসছিল। এ নিয়ে ওই এলাকায় চাপা উত্তেজনা ও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আবদুল আহাদ বলেন, ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো চ-২০-০৩৮০) বাসার দিকে যাচ্ছিলেন টিপু। খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ের আগের সিগন্যালে আটকে ছিল তার গাড়ি। তখন মোটরসাইকেলে আসা হেলমেট পরিহিত এক ব্যক্তি তাকে লক্ষ্য করে অনবরত গুলি চালায়। এতে তিনি ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পাশের রিকশায় থাকা এক তরুণীও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক টিপু ও ওই তরুণীকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী টিপুর গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেন, মতিঝিলের এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার এলাকা থেকে বাসায় ফিরছিলেন টিপু। প্রতিদিন একই সময়ে তিনি বাসায় ফেরেন। বৃহস্পতিবার রাতে খিলগাঁও রেলগেটের আগে যানজটে তাদের গাড়ি আটকে পড়ে। ট্রেন যাওয়ার কারণেও তখন যানবাহনের ভিড় ছিল। এর মধ্যেই হেলমেট ও মাস্ক পরা এক ব্যক্তি হেঁটে এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে।
এরপর গুলি করতে করতেই সে পালিয়ে যায়। হামলাকারী মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় কিনা তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। ঘটনার পর তিনি আহত অবস্থাতেই টিপুকে নিয়ে যান শাহজাহানপুরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, টিপুর গলা ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১১টি গুলি লেগেছে। মুন্নার বাম হাতে গুলি লেগেছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, খিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন টিপু। তার অফিস শান্তিনগরে। তিনি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ১, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর।
টিপু নিহত হওয়ার খবর শুনে ঢামেক হাসপাতালে ছুটে যান তার স্ত্রী, স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কান্না-আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। স্ত্রী ডলি কাঁদতে-কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন। তিনি বলছিলেন- ‘এ আমার কী ক্ষতি হয়ে গেল?’ স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।
।
এদিকে স্থানীয় সূত্র বলছে, একজন গুলি ছুড়লেও আশপাশে সন্দেহজনক আরও কয়েকজনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ঘটনার পর তারা একযোগে পালিয়ে যায়।
নিহত তরুণীর বান্ধবী সুমাইয়া জানান, মালিবাগের শান্তিবাগ এলাকার ২১৮ নম্বর বাসায় থাকতেন প্রীতি। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি সুমাইয়ার তিলপাপাড়া এলাকা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। দুইজন একই রিকশায় ছিলেন। হঠাৎ তারা গুলির শব্দ পান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। প্রীতির বাবার নাম জামাল উদ্দিন। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়িতে। জামাল উদ্দিন জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে প্রীতি বড়। তিনি বদরুন্নেছা সরকারি কলেজে পড়তেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে যায়। এই ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ। দ্রুতই এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।