২০২২-০৩-২৩ ১০:২৯:৪১ / Print
সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে রহস্যময়ই থেকে গেলেন আরিফুল হক চৌধুরী। আচমকাই প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি পদে। জেলার কাউন্সিলে সভাপতি পদে মেয়র আরিফের প্রার্থীতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। প্রার্থী হয়ে মাত্র কয়েকদিনে অনেক ভোটারও বাগিয়ে নিয়েছিলেন তার পক্ষে। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন কাউন্সিলে অংশগ্রহণকারি অন্য প্রার্থীরা। আর সিলেট বিএনপির রাজনীতির নেতৃত্ব নিয়ে ব্যাপক হিসেব কষতে থাকে আরিফ বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা।
সোমবার ২১ মার্চ জেলা বিএনপির বহুল প্রত্যাশিত সম্মেলন ও কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। ঠিক একদিন আগে রোববার কেন্দ্র থেকে অনিবার্য কারণবশত' সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। এক্ষেত্রে সময়মত কাউন্সিলের ভোটার তালিকা চূড়ান্ত না হওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন বিএনপি নেতারা।
সম্মেলনকে সামনে রেখে মঞ্চও নির্মাণ করা হয়েছিল। কাউন্সিলরদের বসার ব্যবস্থাও তৈরী ছিল। কি কারনে সম্মেলন স্থগিত? কার ইশারায় চলছে সিলেট বিএনপি এসব বিষয় নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। এ অবস্থায় রাতে গণমাধ্যমে বিষয়টি খোলাসা করেন কেন্দ্রীয় এক নেতা।
ওই নেতা জানান, ‘যথাসময়ে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। সম্মেলনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা তৈরি হওয়া উচিত। কিন্তু ভোরে তালিকা হাতে এসে পৌছে। এছাড়া কয়েকটি ইউনিটের ভোটার নিয়েও অভিযোগ ওঠেছে। এসব কারণে সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। তবে তিনি এটি বলেন এ মাসেই হবে জেলা বিএনপির সম্মেলন।
তারপরও অনেকেই নানা মন্তব্য করেন সম্মেলন স্থগিত হওয়ায়। কেউ কেউ বলতে শোনা গেছে আরিফুল হক চৌধূরী ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের দ্ব›েদ্বর কারনেই সম্মেলন পেছানো হয়েছে।
এছাড়া সিলেট বিএনপির রাজনীতি এখনো যুক্তরাজ্য নির্ভর একারনে যুক্তরাজ্য থেকে যে নির্দেশনা আসে সেভাবেই পরিচালিত হচ্ছে সিলেট বিএনপি।
এদিকে সিলেট বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সোমবার দিনের কোন এক সময়ে আরিফকে ফোন দেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসময় সভাপতি পদে তাকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। একইসাথে ঢাকা থেকেও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের চাপ আসে আরিফের উপর। এর মূল কারণ প্রার্থীতা ঘোষণা পর থেকেই সিলেট বিএনপি’র বিপরীত মেরুর নেতারা আরিফকে আটকাতে একাট্টা।
তারাই কেন্দ্র ও তারেক রহমানের কাছে আরিফের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। কেউ কেউ তাকে সরকার ঘেষা বলেও বুঝানোর চেষ্টা করেন। সর্বশেষ মুহুর্তের জরিপেও তারা দেখতে পান নির্বাচনী মাঠে ‘সুচতুর’ আরিফের জয়ের পাল্লা ভারী। এরপর থেকে আরিফকে আটকাতে রীতিমতো মরণ কামড় দেন ওইসব নেতারা। আর তাদের তৎপরতার কারণইে পেছানো হয় কাউন্সিল। দলীয় সূত্রগুলোর দাবী, কাউন্সিল পেছানো মূলত আরিফকে আটকানোরই কৌশল।
অতীতে আরিফকে বাদ দিয়ে ছাত্রদল, যুবদল, স্বোচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে আরিফের লোকজন না থাকায় এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ আরিফ অনুসারীরা। সম্মেলন স্থগিতের পেছনে এসবকেও দায়ি করেন দলের নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, সিলেট বিএনপির রাজনীতি এখন অনেকটাই বেসামাল। আচমকা প্রার্থী হয়ে প্রচারে অনেকটা এগিয়ে যান আরিফুল হক চৌধুরী। বেকায়দায় পড়ে যান অন্য প্রার্থীরাও। হেভিওয়েট আরিফুল হকের সঙ্গে সাবেক আহবায়ক আবুল কাহের শামীম এবং কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা এবং বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল কাইয়ুমও চৌধুরী প্রার্থী হন।
ওই নেতা জানান, আরিফুল হক চৌধুরী মাত্র কয়েকদিনে অনেক ভোটার বাগিয়ে নিয়েছেন। সম্মেলন হলে অরিফের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল।
ওই নেতা জানান, আরিফুল হক জেলা বিএনপির নেতৃত্বে এলে বিএনপির রাজনীতি তার হাতেই চলে যেত। আর আগামীতে আরিফের সংসদ নির্বাচন করার মনোবাসনা রয়েছে। এক্ষেত্রে মুক্তাদীরের হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে সংসদীয় আসন। ওই নেতা জানান এসব বিষয়ও গত দুদিনে আলোচনায় এনেছেন আরিফ অনুসারীরা।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির আরেক নেতা বলেন, আরিফ প্রার্থী হয়ে সব গোলমাল পাকিয়েছেন। যেখানে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হয়ে গত কয়েক মাস ধরেই জোর লবিং করছেন অনেক নেতা সেখানে তাকে অনেকে মানতে নারাজ। ওই নেতা আরিফের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
তিনি বলেন আরিফুল হক যে রাজনীতি করছেন তাতে ‘ডুয়েল গেম’ খেলছেন। তিনি এখন বিএনপির রাজনীতির ‘রহস্যময়’ পুরুষ। তার কাছ থেকে বিএনপির রাজনীতি আশা করা যায়না।
জেলা বিএনপির সম্মেলন নিয়ে যখন এই অবস্থা শেষ পর্যন্ত নিজে প্রার্থী থাকেননি আরিফুল হক। ২১ মার্চ রাতে জরুরী সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানাবেন বলে আরিফুল হক গণমাধ্যমকে জানান।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে নগরীর কুমারপাড়া মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে নিজে জানান দেন প্রার্থী হওয়ার এবং পিছু হঠার বিষয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফ বলেন, ‘দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনার আলোকে আমি আমার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলাম। আমি দলের স্বার্থে আজীবন কাজ করে যেতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফ নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আজীবন বিএনপির রাজনীতি করে আগামীতে দলের স্বার্থে বড় কোনো কাজের জন্য প্রস্তুত থাকবেন বলেও জানান। এসময় সম্মেলন সফল করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহŸান জানান তিনি।
প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাত্র এক সপ্তাহের পথচলায় আমি আপ্লুত। নেতাকর্মীরা যে ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন এতে আমি কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ। এই ভালোবাসার প্রতিদান নেই, হতেও পারে না।’ আরিফ জানান- ‘বিএনপি ছাড়া আমার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। বিএনপির কর্মী হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন গণতান্ত্রিক, সার্থক ও সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।’
এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষদ্র ও ঋণদান বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মকন মিয়াসহ মেয়র আরিফের ঘনিষ্ট দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তুতি সম্পন্নের পর সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়ী করছেন তারা এবং পরবর্তী কাউন্সিলর নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
সম্মেলন সফল করতে কয়েকদিন থেকে দায়িতপ্রাপ্ত নেতারা ব্যস্থ সময় পার করছিলেন। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়া ১৩ নেতাও প্রায়এক মাস ধরে জেলাজুড়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
সিলেটসানডটকম-এবিসি