ডিম আগে না মুরগী আগে ? মানুষের দৌড়ানির পর হাপানি হয় কেন ?
মশা কামড়ালে ফুলে যায় কেন? শৈবাল সালেকসংশ্লেষক প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরী
করে, তাহলে শৈবালকে উদ্ভিদ বলা যাবে কিনা? শনিবার (১৯ মার্চ)
শিক্ষার্থীদের এমন চিন্তাকর্ষ, কৌতুহলী ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের মুখে পড়েন
শিক্ষকরা। জীববিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরাও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবও দেন অত্যন্তু
সুচারুরুপে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিডিবিও-সমকাল বাংলাদেশ
জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট অঞ্চল পর্বে এমন প্রশ্নের মুখোমুখী
হন শিক্ষকরা। উৎসবে জীববিজ্ঞানে নিজেদের জানার পরিধি বুঝতে এক
ঘন্টার পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। উৎসবে বিভাগের সিলেট, হবিগঞ্জ,
মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ চার জেলার ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর মোট
৯৮৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
এ বছর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ২১০ জন, নবম থেকে দশম শ্রেণির ৫৪৯ জন
এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ২২৭ জনসহ তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট
৯৮৬ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করে। বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই পরীক্ষা
নেওয়া হয়।
সকাল নটায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা সিকৃবি কেন্দ্রীয় মসজিদের
পাশের মাঠে উপস্থিত হয়ে তাদের রেজিস্ট্রেশেন নিশ্চিত করে। সকাল সাড়ে
নটায় সমস্বরে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। এ সময় সিকৃবির ছাত্র পরামর্শ
ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মোস্তফা সামসুজ্জামান
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয়
কমিটির সহসভাপতি প্রফেসর ড. আ খ ম গোলাম সারোয়ার আন্তর্জাতিক
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পতাকা, সিলেট অঞ্চলের সভাপতি প্রফেসর ড.
মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পতাকা এবং
সমকালের সিলেট ব্যুরো স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আহমদ বাবলু সমকালের
পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিডিবিও সিলেট আঞ্চলিক
কমিটির সহ সভাপতিমন্ডলী, বিডিবিও সিলেট অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক
তাসফিয়া তাহজিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাহিদ হাসান।
এছাড়া ১০০ জন এনজাইম ও সমকাল সুহৃদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ১০ টায় শুরু হয় পরীক্ষা। এক ঘন্টার পরীক্ষা শেষে ফের প্যান্ডেলের
নীচে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শিক্ষকরা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি
কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড
সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড’র
সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড
সিলেট আঞ্চলিক কমিটির সহ সভাপতি প্রফেসর ড. আ খ ম গোলাম
সারোয়ার। সমকালের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টাও ফয়সল আহমদ বাবলু।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিডিবিও সিলেট আঞ্চলিক
কমিটির সহ সভাপতি প্রফেসর ড. গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস, প্রফেসর ড.
শরিফুন্নেছা মুনমুন, প্রফেসর ড. মাসুদুর রহমান, সিকৃবির সহকারি
প্রফেসর ড. কাজি জিন্নাহ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ।
উৎসবে সিলেট আঞ্চলিক পর্ব থেকে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে (৬ষ্ঠ থেকে
অষ্টম) সর্বোচ্চ ৮৬.০৭ নম্বর থেকে ৫৬.৩৫ পর্যন্ত মোট ৪৯ জন, সেকেন্ডারি
ক্যাটাগরিতে (নবম-দশম) সর্বোচ্চ ৬৪.২৯ নম্বর থেকে ৬০.২৯ পর্যন্ত মোট
১১৪ জন এবং হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে (একাদশ-দ্বাদশ) সর্বোচ্চ
৬৯.০৯ নম্বর থেকে ৫৭.৮৯ পর্যন্ত মোট ৪৪ জন সহ মোট ২০৭ জনকে পুরষ্কার
ও মেডেল তুলে দেওয়া হয়।
এরমধ্যে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ পেয়েছে সরকারি অগ্রগামি
গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের স্বস্থিকা পাল। তার সর্বোচ্চ নম্বর ৮৬.০৭।
সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে বøুবার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজের হিমেল দাস
পরাগ পেয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫.৫৩। হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে
সর্বোচ্চ ৬৯.০৯ নম্বর পেয়েছে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড
কলেজের অন্তর দত্ত। পরে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়।
এবারের উৎসবে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণকারী (শিক্ষার্থী) প্রতিষ্ঠান
নির্বাচিত হয় শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামি একাডেমি এন্ড হাই স্কুল এবং
সর্বোচ্চ বিজয়ী (শিক্ষার্থী) প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয় জালালাবাদ
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯ টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের
কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন মাঠে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট অঞ্চল
পর্বের উদ্বোধন ঘোষনা ঘোষনা করেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসব সিলেট
আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর
ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের
সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, জীবন শত মিটারের কোন রেস
নয়। জীবনটা একটা ম্যারাথন। যারা ম্যারাথনে টিকে থাকে তারাই জয়ী হয়।
তিনি বলেন, উৎসবে নতুন প্রজন্মের যে উচ্ছাস দেখলাম সেটি আমাদের
বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। আজকের এই নতুদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতি আমরা আস্থাশীল। তারাই গড়বে
আগামীর বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জীববিজ্ঞান উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের
সাহস সঞ্চয় হচ্ছে। জীববিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে।
সিলেটসানডটকম-এবিসি