শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইংরেজী, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা ENG

অসহায়ের পাশে দাঁড়ান, সেটাই কল্যাণের পথ: ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি ::

২০২২-০১-১৫ ১৪:৫৯:০২ /

প্রখ্যাত বুযুর্গ আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) বার্ষিক ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে বক্তব্য রাখছেন আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী

উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ১৪ তম বার্ষিক ঈসালে সাওয়াব মাহফিল ১৫ জানুয়ারি (শনিবার) জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলতলী ছাহেববাড়ী সংলগ্ন বালাই হাওরে অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুলতলী অভিমুখী জনস্রোত ছিল চোখে পড়ার মতো। আল্লামা ফুলতলী (র.)-এর মাযার, মাহফিলের পেন্ডাল, বাজার, রাস্তা-ঘাট সবই ছিল লোকে লোকারণ্য। নেমেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল। সকাল সাড়ে ১০টায় এতীমখানার হাজারো এতীমসহ আগত মেহমানদের নিয়ে হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর মাযার যিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মাহফিলের কার্যক্রম।

এরপর অনুষ্ঠিত হয় বেকার দরিদ্রদের মধ্যে রোজগারের উপকরণ বিতরণ, ১০ হাজার প্যাকেট কদুর বীজ ও সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে ছাগল, রিক্সা, ঠেলাগাড়ী, চৌকি, সেলাই মেশিন, নগদ অর্থ, শিরনীর প্যাকেট ইত্যাদি সাওয়াব রেসানীর উদ্দেশ্যে বিতরণ করা হয়। মাহফিলে অর্ধ শত খতমে কুরআন ও দালাইলুল খাইরাত শরীফের খতম সম্পন্ন করা হয়।

তাছাড়া প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রায় পাঁচ হাজার খতমে কুরআন হয়েছে বলে জানা যায়। বাদ যুহর খতমে খাযেগান ও দুআ শেষে মুরিদীন-মুহিব্বীনের উদ্দেশ্যে তা’লীম-তরবিয়ত ও হৃদয়গ্রাহী বয়ান পেশ করেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদেরকে রোজগার করে জীবন যাপন করার মাধ্যমে আল্লাহর বন্দেগী করতে হবে।

একমাত্র আল্লাহর মুখাপেক্ষী ছাড়া দুনিয়ার কারো মুখাপেক্ষী হওয়া যাবেনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) রোজগারের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এক ব্যক্তিকে রোজগারের উপকরণ দিয়ে বললেন, তোমাকে যেন আগামী পনের দিনের মধ্যে না দেখি। তার অর্থ তুমি উপার্জনে নিয়োজিত হয়ে যাও। আমাদের পীর ও মুর্শিদ হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) দরিদ্র মানুষকে রোজগারের উপকরণ প্রদান করতেন।

তাঁর এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। আপনারাও মানুষদের মাঝে রোজগারের উপকরণ বিতরণ করবেন। মানুষের মাঝে রোজগারের সম্বল বিতরণ করা নবীজির সুন্নত। বৃক্ষরোপন একটি উত্তম কর্ম। বৃক্ষ আমাদের নানা উপকারে আসে। মানুষ, পশু- পাখীসহ সমস্ত মাখলুক এর উপকার ভোগ করে। তাই সকলকে বৃক্ষরোপনে এগিয়ে আসতে হবে। একটি কদুর বীজও যদি হয় তা রোপন করবেন।

এ থেকেও অনেক নিয়ামত পাওয়া যাবে। বৃক্ষরোপনের মাধ্যমেও ঈসালে সাওয়াব করা সম্ভব। আমাদেরওবৃক্ষরোপন কর্মসূচি অব্যাহত আছে। দেশের যে কোন প্রান্তে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমি প্রস্তত আছি। তিনি আরো বলেন, আমি আমার মা বাবার নির্দেশে মাঝে মাঝে জন্মভূমির বিভিন্ন নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত অতিক্রম করি। দুঃখী মানুষের কাছে যাই, তাদের সাথে মিশি, এতিমদের কথা শুনি, তাদের আবদার পূরণে নিজেকে বিলিয়ে দেবার চেষ্টা করি। কারণ এতিমদের সালাত ও সালাম পাক মদীনায় প্রতিধ্বনিত হয়।

আপনারাও এতিমদের সহায়তায় এগিয়ে আসবেন। অন্ধ, আতুর ও বিধবাদের সহযোগিতা করবেন, মিসকিনদের খাবার দেবেন, সম্ভব হলে দরিদ্র এলাকায় চক্ষু শিবির করবেন, মানুষের জন্য পানির ব্যবস্থা করবেন, মসজিদ নির্মাণ করবেন। এতে জান্নাতের পথ সুগম হবে। তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্যেশে বলেন, সম্প্রতি যারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন বা হন নাই আপনার উভয়ে জনপ্রতিনিধি। কারণ উভয়েরই জনসমর্থন আছে। উভয়ে একে অন্যের সহযোগী হয়ে কাধে কাধ মিলিয়ে জনখেদমতে নিয়োজিত হবেন।

সরকারি অর্থ খাত ওয়ারী খরচ করবেন, গভীর রাতে লোকচক্ষুর অন্তরালে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণসহ অসহায়ের পাশে দাড়াবেন। মাটির আসনে বসার চেষ্টা করবেন, আর এটাই নবীজির শিক্ষা। কেউ খারাপ আচরণ করলে তার সাথে ভালো আচরণ করবেন, দুআ করবেন আল্লাহ আমার দাম্ভিক মস্তককে অবনত করে দাও। সেটাই হবে কল্যাণের পথ। পীর-মুরীদি সম্পর্কে তিনি বলেন, পীর-মুরীদির নামে যারা বিদআতে লিপ্ত তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমার ওয়ালীদ মুহতারাম সাধাসিধে আসনে বসতেন, তাঁর কোন গদি ছিল না।

তিনি মানুষদেরকে বাহ্যিক চাকচিক্যের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে সত্য-সঠিক সিলসিলায় আশ্রয় গ্রহণ করার আহবান জানাতেন। তিনি আরো বলেন, গভীর রাতে নির্জনে রাব্বে কারীমের জন্য দু ফোটা চোখের জল ফেলে দিন, অন্তরের কালিমা দূরীভূত হয়ে যাবে। আমরা চন্দ্র-সূর্যের পূজা করিনা, আমরা ন্যাচারালিস্ট নই। আমরা এক আল্লাহর কালিমা পড়েছি। আমরা নবীজির পথ অনুসরণ করি। তাই সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্ত‘ষ্টি অর্জন করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী, স্কুল অব এক্সেলেন্স-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী, মাসিক পরওয়ানার সম্পাদক মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী ও তায়্যিবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলীর যৌথ পরিচালনায় মাহফিলে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ছাহেব জাদায়ে ফুলতলী,

দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, মুফতী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সোবহানীঘাট কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ আন্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, ফেনী ছাগলনাইয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ ভূইয়া ও

দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিছ মাওলানা বদরুজ্জামান রিয়াদ। বাদ আসর বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মুহতারাম সভাপতি আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। মাহফিলে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মুহাম্মদ আবু জাফর রাজু, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারী হাফিয মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী ছাহেবজাদায়ে ফুলতলী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব,

সৎপুর কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, ইছামতি কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাশুক আহমদ, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রহীম, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মোশাহিদ আহমদ কামালী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ জাফর মুহাম্মদ নুমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল ইসলাম, মাথিউউরা সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল আলিম, বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী,

লিডিং ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফজলে এলাহী মামুন, ঢাকা জেলা লতিফিয়া কারী সোসাইটির সভাপতি মাওলানা আবু সাদেক মুহাঃ ইকবাল খন্দকার, সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব শেখ মকন মিয়া প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উ’পস্থত ছিলেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবূ ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খান,

তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দুলাল আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মোজতবা হাসান চৌধুরী নুমান প্রমূখ। সিলেটসানডটকম /এমকেইউ

এ জাতীয় আরো খবর

উত্তরপূর্ব পত্রিকার কম্পিউটার ইনচার্জ অমিত দাস শিবুর রহস্যজনক মৃত্যু

উত্তরপূর্ব পত্রিকার কম্পিউটার ইনচার্জ অমিত দাস শিবুর রহস্যজনক মৃত্যু

কোম্পানীগঞ্জে বাস সিএনজি সংঘর্ষে  নিহত ২

কোম্পানীগঞ্জে বাস সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ২

দেবাশীষ দেবুর মায়ের মৃত্যুতে ইমজা শোক

দেবাশীষ দেবুর মায়ের মৃত্যুতে ইমজা শোক

পরলোকে সাংবাদিক দেবাশীষ দেবুর মা

পরলোকে সাংবাদিক দেবাশীষ দেবুর মা

জৈন্তাপুরে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু

জৈন্তাপুরে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু

শনিবার ৮ ঘন্টা গ্যাস থাকবে না

শনিবার ৮ ঘন্টা গ্যাস থাকবে না