ছাতকে পতিত জমিতে ভুট্রা চাষে সফলতার স্বপ্ন কৃষকদের

ছাতক প্রতিনিধি:: || ২০২১-০৪-২০ ০৯:০৭:০৫

image

তিন দিকে বয়ে গেছে সুরমা নদী। ওই সুরমার নদীর মধ্যবর্তী নুরুল্লাপুর গ্রাম। এটি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নে গ্রামের অবস্থান। এই গ্রামে প্রায় ৫ শতাধিক বিঘা জমি প্রতি বছর আমানের ফসল উৎপাদনের পর জমি গুলো অনাবাদি পতিত পড়ে থাকতো।

তবে চলতি বছরে এই গ্রামের কৃষক শাহজাহান আহমদ চৌধুরী তার ৫ বিঘা পতিত জমিতে ভুট্রা চাষের উদ্যোগ নেন। তার ভুট্রা চাষাবাদ দেখেই গ্রামের অনেক কৃষককেই ভুট্রা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। উপজেলার স্থানীয় কৃষি বিভাগের সরকারী প্রনোদনায় রোপনকৃত জমিতে ভুট্রার চাষাবাদে এবার বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।


কৃষক শাহজাহান চৌধুরী ৯৪ সালে সিলেটের মদন মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে চলে যান। ৬ বছর প্রবাসে থেকে নিজ দেশে ফিরে কৃষি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন। উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.মশিউর রহমানের পরামর্শ ও সহযোগিতায় নিজ অনাবাদি পতিত জমিতে ভুট্রা চাষাবাদে আগ্রহী হন।


সরকারী প্রনোদনার আওতায় জমিতে ভুট্রা চাষ করতে পেসিফিক-৩০ জাতের ১৬কেজি ভুট্রার বীজ, ৬ জাতের রাসায়নিক সার বিনামুল্যে দেওয়া হয় তাকে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কৃষি কার্যালয়ের পরামর্শে ৫বিঘা জমিতে ভুট্রার বীজ রোপন করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্রা চাষের জন্য সরকারী ভাবে কৃষি কার্যালয় থেকে ফসলের পরিচর্যার জন্য ১৫শ’ টাকা করে পরিচর্যা খরচও দেওয়া হয়। কৃষক শাহজাহানের মতোই এই গ্রামের নজরুল ইসলাম, এমদাদুল হক, কালা মিয়া, আলী আহমদ, মিল্লাদ হোসেন ও আব্দুর রহমান নিজেদের অনাবাদি পতিত জমিতে ভুট্রা চাষবাদ করেছেন। গত তিন মাসে রোপনকৃত ভুট্রা গাছ গুলো এখন ৫/৬ফিট উচ্চতায় দাড়িয়ে আছে। প্রতিটির ভুট্রার গাছে গাছে ঝুলছে ভুট্রার কোষ। কৃষি কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী চলতি এপ্রিল মাসের শেষ ও মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভুট্রার সংগ্রহ শুরু হবে। ভুট্রার ভালো ফলন দেখে গ্রামের অনেকেই এখন ভুট্রা চাষাবাদে ও স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। উৎপাদন হওয়া এসব ভুট্রা ক্রয় করতে পোল্ট্রি ফিড কোম্পানী থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।


নুরুল্লাপুর গ্রামে একাধিক কৃষক জানান, আমাদের গ্রামে প্রায় ৫ শতাধিক অনাবদি পতিত জমি রয়েছে। অগ্রাহন মাসে এসব জমিতে আমন ফসল চাষের পর সব জমিই পতিত পড়ে থাকে। ওই পতিত জমিতে ভুট্রা চাষ করে অনেকেই সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের দাবী, এখানে একটি সোলার ডিপটিউবওয়েল বসানো হলে গ্রামে আর কোন জমি আর পতিত থাকবে না। পাল্টে যাবে নুরুল্লাপুর গ্রামের কৃষকদের জীবন-জীবিকার ধরন।  উৎসাহ ও কৃষির ফলন আরও বাড়বে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুট্টাচাষি কৃষক দল গঠন ও উৎপাদিত ভুট্টা সঠিক মূল্যে বিক্রয়ের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কৃষক কন্ট্রাক্টর তৈরি, নতুন জাতের ভূট্টার প্রদর্শনী প্লট স্থাপন, দলভুক্ত কৃষক ও কন্ট্রাক্টরদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সুষম সারের ব্যবহার সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ প্রদান, বালাই দমনে কোয়ালিটি সমৃদ্ধ বালাইনাশক এবং হাইব্রিড জাতের বীজের সরবরাহ নিশ্চিত করণের মতো কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি কার্যালয়। ফলে কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।


চলতি বছর রাজস্ব খাতের আওতায় হাইব্রিড জাতের ৪০টি ভুট্টার মাঠ প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন এবং কৃষকের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে করনীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছেন।


স্থানীয় কৃষকরা ঠিকাদারের মাধ্যমে বিভিন্ন ফিড উৎপাদনকারী কোম্পানীর কাছে শুকনো ভুট্টা মাঠ থেকে সংগ্রহের পর গড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করবে। ভুট্টার চাহিদাও বেশী হওয়ার ফলে অন্যান্য ফসলের চেয়ে এ ফসলে লাভের পরিমাণ বেশি। ভুট্রার কোন কিছুই ফেলে দেওয়া হয় না। এর পাতা গরুকে খাওয়ানো হয়, মোচা কৃষকরা চুলায় লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান বলেন, এই উপজেলায় মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। এবার ভুট্রা প্রদর্শনীর ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষকদের নিবিড় প্রশিক্ষণে ভুট্টা চাষে লাভবান হবেন অনেকই। এবারের ফলন দেখে আগামী বছরগুলোতে আরও বেশী ভুট্রা চাষাবাদ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

সিলেট সান/এসএ

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net