১০ বছর পর সিটির মসনদে আলী’গ, দায়িত্ব নিলেন আনোয়ারুজ্জামান

তাইনুল ইসলাম আছলাম:: || ২০২৩-১১-০৭ ০৬:১২:৪৯

image

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেকটা সহজে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তার বিজয় অনেকটা সহজ হয়।

দূর্বল প্রার্থীদের পেছনে ফেলে প্রায় ১০ বছর পর সিলেট সিটির মসনদ দখলে নেন তিনি। ১০ বছর আগে সিলেট সিটির মেয়র ছিলেন সিলেটের নন্দিত নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। আনোয়ারুজ্জামানের বিজয় যতটা সহজ কিš‘ সিটির উন্নয়ন তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন সচেতন মহল। 


তাদের মতে যিনি দায়িত্ব নিলেন তার কাজ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গত ১০ বছরে অনেকটাই বদলে গেছে সিলেট নগরী। সড়ক বড় হয়েছে। ২৭ ওয়ার্ড থেকে হয়েছে ৪২ টি। সিটির উন্নয়নে তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। আর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে তাকে। এক্ষেত্রে তার দলের ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন  তারা। 
 

এ বছরের ২১ জুন অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি নির্বাচনে বিএনপি’র কোনো প্রার্থী ছিল না। যারা ছিলেন তারাও ততটা শক্তিশালী ছিলেন না। ফলে বড় কোনো বাঁধা ছাড়াই মেয়র নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

তাদের মতে সহজে মেয়র নির্বাচিত হলেও সিলেটের উন্নয়ন ও রাজনীতিতে অবস্থান নিতে ‘চ্যালেঞ্জ’ নিতে হবে তাকে। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার দায়িত্ব নিলেন আনোয়ারুজ্জামান। সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। 

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরভবনে মেয়রের কার্যালয়ে বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর হাতে দায়িত্ব তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। পরে সুধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


সচেতন মহলের মতে আরিফুল হক চৌধুরী যে কাজ করে গেছেন তার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে সিলেটবাসী। তাকে অনেকটা সহজে মেনে নিয়েছে। কারো বাড়ির বা দোকানের সামনের জমি নগরবাসীর অনেকেই বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে গেছেন আরিফ। তার কথায় কেউ তিন ফুট কেউ ৫ ফুট করে সড়ক প্রশস্তকরন কাজের জন্য ছেড়ে দেন। 


এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনেকটা নাছোড়বান্দা। কেউ জমি দিতে না চাইলে রাতে গিয়ে তার বাড়িতে হাজির হয়ে যেতেন। তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নগরবাসীর কথা চিন্তা করে জমি ছাড়ার অনুরোধ করতেন। এভাবেই তার কৌশলের কাছে নগরবাসী সিটির উন্নয়নের জন্য ছেড়ে দেন হাজার কোটি টাকার জমি। জমিদাতাদের নামের তালিকা করে তাদের সম্মানও জানান তিনি। 


এছাড়া আরিফুল হক বিএনপি দলীয় মেয়র হয়েও সরকারি দলের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও পররাষ্টমন্ত্রী ড. আবুল মোমেনের অনেকটা আস্থাভাজন ছিলেন। সিটির উন্নয়নে তাদের কাছে নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

আরিফুল হকের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে তারাও দুই হাত প্রসারিত করেন। গত ১২ অক্টোবর নাগরিক সংবর্ধনায় পররাষ্টমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের মুখে ছিল আরিফুল হক চৌধুরীর প্রশংসা।

ব্যতিক্রম ওই নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি বলেন, সিসিকের উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের সর্বো”চ ব্যবহার করেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। দুই মেয়াদে মেয়র থাকাকালীন আরিফুল হক নগর উন্নয়নে সদা সচেষ্ট ছিলেন।


এদিকে মেয়র হিসেবে, শেখ হাসিনার পছন্দের নেতা হিসেবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও সিনিয়র নেতাদের অনেকের তরফ থেকে নানাভাবে অবজ্ঞা করা হচ্ছে তাকে। বিএনপি’র অবরোধ কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে সিলেটে শোডাউন দিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান।

৪-৫শ’ নেতাকর্মী নিয়ে নগর প্রদক্ষিণ করে শান্তি সমাবেশে যোগ দেন। কিš‘ সেখানে তাকে যতটুকু মর্যাদা দেওয়ার কথা ততটুকু দেওয়া হয়নি। এ কারণে সর্বশেষ ২ নভেম্বর শান্তি সমাবেশে যোগ দেননি আনোয়ারুজ্জামান। 
গত ৪ নভেম্বর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেল হত্যা দিবসে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ছাড়াই বঙ্গবন্ধুসহ চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। বিকালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তবে নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আওয়ামী লীগের সঙ্গে দুরত্বের বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হয়েছি। সবার সঙ্গে মিলেমিশে আছি। 


এ ব্যপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগে মেয়র আনোয়ারকে নিয়ে কোনো দূরত্ব নেই। নগরীর উন্নয়নে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।


এ ব্যপারে বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক বলেন, মেয়র না থাকলেও সিলেটের উন্নয়নে সব সময় সক্রিয় থাকবো। নগরীর চলমান উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী পরিষদকেও যেকোন প্রয়োজনে সহযোগিতা করব। 


এ ব্যপারে সুজন-সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেটের উন্নয়ন সবার আগে। যেভাবে আরিফুল হক করেছেন, সেভাবে আনোয়ারুজ¥ামানকে কঠিন চ্যলেঞ্জ নিতে হবে। তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে ২১ দফা প্রতিশ্রুতির কথা বলেছেন।

 

এসব বাস্তবায়নে মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। প্রতিটি কাজ একটা ছকের মধ্যে নির্ধারিত সময় নিয়ে শুরু হলে নগরবাসীর দূর্ভোগ অনেকটা লাগব হবে।

এছাড়া উন্নয়নের বড় শর্ত হল দলীয় সহযোগিতা। আরিফুল হক ক্ষমতাসীন দলের না হয়ে যে কাজ করেছেন, আনোয়ারুজ্জামানকে আরো বেশী করতে হবে। এজন্য তার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে বলে জানান ফারুক মাহমুদ। 


প্রসঙ্গত, আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেও গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে অংশ নেননি।

গত ৩ জুলাই মেয়র হিসেবে শপথ নেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শপথ গ্রহণের প্রায় চার মাস পর মেয়রের দায়িত্ব গহণ করলেন আনোয়ারুজ্জামান।

 

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net