ভাল নেই সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারী-গোয়াইন, পিয়াইন, সারি, ধলাই, লোভা, রাংপানি, লোভাসহ আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো। একদিকে ভারতের শাসন ; অন্যদিকে দেশে এসব নদীর উপর চলছে নির্মম নির্যাতন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তঃসীমান্ত অনেক নদীর উৎস মূখ ভরাট হয়ে গেছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত করে পাথর উত্তোলন চলছে। অপরিকল্পিত পাথর ও বালু উত্তোলনের কারণে ডাউকি নদী হারিয়ে গেছে। এছাড়া এসব নদীর অনেক শাখা নদী ও উপনদীর অবস্থাও তেমন ভালো নেই।
জানা গেছে, বিভাগের চার জেলার সঙ্গে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের রয়েছে প্রায় ৫২০ কিলোমিটার সীমান্ত। সিলেটের সঙ্গে মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের সীমান্ত। সুনামগঞ্জের সঙ্গে মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের সঙ্গে ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত।
আসাম থেকে সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী। সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদ নামক স্থানে নদীটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নাম ধারণ করেছে। বরাকের এ দুই শাখার সঙ্গে সিলেট বিভাগের সব নদনদী যুক্ত। এছাড়া ধলাই, পিয়াইন (উমগোট) ও সারি-গোয়াইন নদী সিলেটে প্রবেশ করেছে।
ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) তালিকাভুক্ত সিলেট বিভাগের ১৬ টি নদীর বাইরেও অন্তত ৩০টি নদী বা ছড়া (ক্রিক) মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা থেকে সিলেট বিভাগে প্রবেশ করেছে, যেগুলো জিআরসি তালিকাভুক্ত নয়। সেগুলো হল- সিলেট জেলার উৎমাছড়া, তুরংছড়া, কুড়িছড়া, কুলুমছড়া, তাইরঙ্গল, হিঙ্গাইর, হুরই, নুনছড়া, লোভাছড়া, দোনা নদী।
১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টায় সরেজমিন সিলেটের ‘নীলনদ’ খ্যাত সারি নদীতে গিয়ে দেখা যায় পানি অনেকটা ঘোলাটে। নদীর উপর দিয়ে চলছে ভারী নৌকা। কোন কোন নৌকায় বালু বহন করা হচ্ছে আবার কোন কোনটিতে বহন করা হচ্ছে পাথর।
স্থানীয়রা জানালেন বালি আর পাথরই কাল হয়েছে সবুজ প্রকৃতি দিয়ে সাজিয়ে রাখা সারি নদীর। উৎপত্তিস্থল থেকে স্বচ্ছ জল লালাখালে এসে ধারণ করেছে নীল বর্ণ। আর এই স্থানকে ঘিরেই পর্যটকদের আকর্ষণ লালাখাল সারি নদীর।
কিন্তু পর্যটকদের সেই আকর্ষণ অনেকটা ফিঁকে হয়ে গেছে। বালু আর পাথর আহরণে অনেকটা ত্যক্ত বিরক্ত পর্যটকরা। স্থানীয়রাও মুখ খুলতে সাহস পান না বালুখেকোদের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, দেখতে অনেকটা সাপের মত সারি-গোয়াইন নদীর দৈর্ঘ্য ৮৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১১৯ মিটার। মেঘালয় রাজ্য দিয়ে প্রবেশ করে সুরমার মোহনায় গিয়ে মিলেছে নদীটি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইঞ্জিন চালক তাজেল আহমদ বলেন, আগে সারি নদীর যে ¯্রােত ছিল তা আর এখন দেখা যায়না। নদীর নীল জল ঘোলাট হয়ে পড়েছে। একদিকে সড়কের বেহাল অবস্থার কারনে পর্যটকরা আসতে চান না। তাছাড়া যে নীল জল দেখার জন্য পর্যটকরা আসেন সেটিও অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে অতিরিক্ত বালি উত্তোলনের কারনে।
সারি নদীর পাশেই ডউরি গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ নুরুল হোসেনের। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলায় এই নদীতে যেতে ভয় পেতাম। এই নদী থেকে বড় বড় মাছ মিলত। এখন আর কিছুই মিলছেনা। আমরা এখন আর নদীর মাছ পাইনা। আমাদের অবস্থাও শহরবাসীর মত।
তিনি বলেন, এই নদী থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন হচ্ছে। এতে এক শ্রেণীর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। আর দিন দিন প্রাকৃতিক পরিবেশ ধবংস করছে মুনাফালোভী কিছু লোক।
শুধু সারি-গোয়াইন নয়; সিলেটের আন্তঃসীমান্ত সবগুলো নদীর আবস্থা একই রকম বলে জানালেন সেভ দ্যা হেরিটেজ এন্ড এনভায়রমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আবদুল হাই আল হাদী। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের ভারতকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে, তারা যেন উজানে কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য না ফেলে। সেজন্য শক্তিশালী কুটনৈতিক প্রচেষ্ঠা চালাতে হবে। যেহেতু ভাটির দেশ হিসাবে মাথাব্যাথাটা আমাদের।
২০১৮ থেকে '২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিভাগের কোনো না কোনো এলাকায় আন্তঃসীমান্ত নদীতে আকস্মিক ঢল ও বন্যার জন্য ভরাট হয়ে যাওয়া নদনদী, দুর্বল প্রতিরক্ষা বাঁধ ও হাওর অব্যবস্থাপনাকে অভ্যন্তরীণ কারণ হিসেবে দিায়ি করে তিনি বলেন, গেল বন্যায় শুধু সিলেটের ক্ষতি হয়নি। বরাক নদীর পানির তোড় আসামের হাফলং শহরকে লন্ডভন্ড করে। বরাক নদীর একাধিক পয়েন্টে আটকে রাখা পানি আকস্মিক ছেড়ে দেওয়ায় প্লাবিত হয় সিলেটসহ বরাকের নিম্নাঞ্চল।
তিনি বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের অধিকাংশ নদীতে ইতোমধ্যে ব্যারাজ ও ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। আন্তঃসীমান্ত নদী বরাক ও তার উপনদীতে ৪০টির উপরে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন বলে জানা গেছে। ছোট-বড় এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বরাক অববাহিকায় একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বরাকের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন নদী ও উপনদীতে আর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। আসামের ডিমা হাসাও জেলার কাপিলা নদী জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আম্রং রিজার্ভার আম্রং নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে।
কাছাড় জেলার ফুলেরতল ব্যারাজ নির্মাণ করে ১৪ হাজার ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সেচ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বরাক নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করে খনেম চাখা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, টুইবওয়াল নদীতে মাপিঠেল ড্যাম, মণিপুর রাজ্যের চুরাচাঁদপুর জেলার ডাইলখাই গ্রামে ১০৫ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার টুইভাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। সারি-গোয়াইন নদীর উজানে মাইনডু ও লিমরিয়াং নদীতে মাইনডু-লেসকা ড্যাম প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে।
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net