সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় কাঁঠালের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সামনে এসেছে।
তবে এলাকার লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে এসেছে লিচু কান্ডসহ আরও কিছু বিষয়। হাসনাবাদ গ্রামে দুই পক্ষের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তাদের মধ্যে আগেও মারামারি, হামলা, মামলার ঘটনায় একাধিক সালিস হয়েছে।
বাইরে থেকে মীমাংসা হলেও মন থেকে বিরোধ, ক্ষোভ যায়নি দুই পক্ষের। যে কারণে সামান্য এক কাঁঠালের নিলাম নিয়ে তর্কাতর্কির পর পেছনের পুরনো বিরোধ সামনে আসে। কাঁঠাল ইস্যু রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।
মারা যান চারজন।শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামে সোমবারের এই ‘অশান্ত’ ঘটনার পর কথা হয় অনেকের সঙ্গে। তাঁদের কথায় উঠে আসে, এবার ‘কাঁঠাল’ আলোচনায় এলেও এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মাসখানেক আগে ‘লিচু’ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।
এক পক্ষের এক শিশুকে অন্য পক্ষের আরেক লোক ‘লিচু’ বলে উপহাস করায় উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন সালিসে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। তখন সালিসের সিদ্ধান্ত ছিল, এরপর রাস্তাঘাটে দুই পক্ষের কেউ এ নিয়ে কাউকে উপহাস করলে ওই ব্যক্তিকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর হোসাইন বলেন, ‘কাঁঠাল তো শো, পেছনে আছে দুই গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পুরনো বিরোধ।
পুরনো দ্বন্দ্ব না থাকলে মসজিদে কাঁঠাল নিয়ে যেটি হয়েছে, তাতে এত বড় ঘটনা ঘটত না।’হাসনাবাদ গ্রামের এ দুই পক্ষ হলো মালদর মিয়া ও দ্বীন ইসলামের পক্ষ। গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ আছে।
সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে দুই পক্ষই নিজেদের আধিপত্য ও নেতৃত্ব দেখাতে চায় সব সময়। গ্রামে জমিজমা, মসজিদ, কবরস্থানের কমিটি নিয়েও বিরোধ আছে।
স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, এ দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গত পাঁচ বছরে ১০ থেকে ১৫ বার গ্রামে সালিস হয়েছে। প্রতিবারই মীমাংসা হয়। পরে আবার হাওরের খাসজমি, মসজিদ,
কবরস্থানের জমি, জমিতে মাটি ভরাট, এসব প্রতিষ্ঠানের কমিটিসহ ছোট-বড় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আবার বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। গ্রামে ৩০ বছর আগে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মালদর মিয়ার বাবা মারা যান বলে এক জনপ্রতিনিধি জানান। গ্রামের একাধিক বাসিন্দার ভাষ্য,
এবার কাঁঠাল-কাণ্ড নিয়ে দুই দিন ধরে গ্রামে উত্তেজনা ছিল। মুরব্বি ও জনপ্রতিনিধিরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন, অনুরোধ করছেন মারামারি না করতে। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ এমন পর্যায়ে ছিল, যেকোনো উদ্যোগ ও অনুরোধ তাদের দমাতে পারেনি।
ঘটনার সূত্রপাত যেদিন, সেই শুক্রবারের কথা বলতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা বলেন, নামাজের পর ইমাম ঘোষণা দেন—মসজিদে দান করা কিছু ফল আছে, যেগুলো নিলাম হবে, সবাই যেন উপস্থিত থাকেন। নামাজের পর কাঁঠালের নিলাম শুরু হয়।
নিলামে কাঁঠালটি ২৫০ টাকা সর্বোচ্চ দাম দিয়ে কিনে নেন মালদর মিয়ার পক্ষের খসরু মিয়া। নিলাম শেষ হওয়ামাত্রই সবাইকে থামিয়ে দেন দ্বীন ইসলাম পক্ষের আবদুল বাহার। তিনি অভিযোগ করেন, নিলামের ‘ডাক’ নিচু স্বরে হওয়ায় তিনি শুনতে পাননি। কাঁঠালের দাম তিনি আরও বেশি দিতে রাজি।
এরপর দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এক পক্ষ দাবি করে আবার নিলাম দেওয়ার জন্য। অন্য পক্ষের দাবি, নিলাম শেষ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। তাৎক্ষণিক গ্রামের অন্যরা দুই পক্ষকে শান্ত করে সেখান থেকে বিদায় করেন।
এর জেরে দুই দিন গ্রামে দুই পক্ষের উত্তেজনার পরিণতি চারজনের মৃত্যু। জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাসিত বলেন, ‘গ্রামের দুই পক্ষের এই বিরোধ নিয়ে একাধিকবার সালিস হয়েছে।
আমরা চেষ্টা করেছি বিরোধ মীমাংসার। সর্বশেষ গতকাল সকালে নিজে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছি। কিন্তু তাঁরা কথা রাখেননি।’দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, এ দুই পক্ষের বিরোধ তারা ছয় মাস আগে বসে মীমাংসা করে দিয়েছেন।
এর আগেও বিভিন্ন সময় ছোটখাটো ঘটনায় সালিস হয়েছে। এতে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারাও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই ছয় মাস তো তাঁরা ভালোই ছিলেন। একে অপরের বাড়িঘরে যাওয়া-আসাও করেছেন শুনেছি।
নতুন বিরোধ সম্পর্কে আমি কোনো কিছু জানি না।’ঘটনার পর সোমবার পুরো দিন হাসনাবাদ গ্রামে ছিলেন সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশিস ধর।
তিনি বলেন, গ্রামে এ দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয়ে দ্বন্দ্ব আছে। এই পুরনো বিরোধের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়, সেগুলো আবার আপসে মীমাংসা হয়।
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net