কমছে পেয়াজের ঝাঁঝ

সিলেট সান ডেস্ক :: || ২০২৩-০৬-০৭ ০০:৩৯:১১

image

দেশে ভালো ফলনের পরও ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকার যুক্তিতে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে যায়; হয়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি।

এর পরই সরকার ফের পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। আর এ সিদ্ধান্ত টোটকা হিসেবে দারুণ কাজ করেছে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, পাইকারি বাজারে রাতারাতি কমে গেছে নিত্যপণ্যটির দাম।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত রবিবার বিকালে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে।

এ ঘোষণার একদিনের মধ্যেই দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমে গেছে ৪০ টাকা! হঠাৎ দরের এমন বড় পতনে একটি বার্তা পরিষ্কার- পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি হয়েছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, পেঁয়াজের পিছলিয়ে-নামা দামের কারণে যথারীতি ঘাম ছুটছে দর নিয়ে কারসাজিকারী চক্রের কপালে।

খুচরা ব্যবসায়ীরাও বলছেন, দরপতনের ফলে দ্রুত পেঁয়াজের মজুদ ছেড়ে দিতে ফোনে ফোনে চলছে মজুদদারদের তাগিদ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাম কমিয়ে মজুদকৃত পেঁয়াজ ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় পেঁয়াজের জন্য আড়ত খালি করতে শুরু করেছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

তবে ক্রেতা পাচ্ছেন না তারা। গতকাল দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৫০-৫৫ টাকায়। সাতক্ষীরার বড় বাজারেও দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে, দিনাজপুরের হিলিতেও মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাইকারি বাজারেও পেঁয়াজের দর ৫৫ টাকায় নেমেছে। রাজধানীর বৃহত্তম পাইকারি বাজার শ্যামবাজারেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে এ বাজারে পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজে বড় দরপতন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

গত শনি ও রবিবার যা বিক্রি হয় ৮৫ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজের দরে এমন নাটকীয় পতনকে সন্দেহজনক বলছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কৃষক যাতে ভালো দাম পায় সে জন্য আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছিল।

কিন্তু এ সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে একটি চক্র কারসাজির মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং অল্প সময়ে হু হু করে এর দাম বেড়ে যায়, বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পেঁয়াজের ভালো ফলনের পরও দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

সরকারি হিসাবে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও কৃষক লাভবান হবেন। অথচ গত কয়েকদিনে পেঁয়াজ ১০০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাড়তি এ টাকা অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে গেছে।

আবার সরকার আমদানি অনুমতি দিতেই কেজিতে রাতারাতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম কমে গেছে। হঠাৎ এ বড় দরপতনই বলে দিচ্ছে যে, পেঁয়াজের দামে কারসাজি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে যখন দ্বিগুণেরও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল তখন সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এর সুযোগ নিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বরাবরের মতো অল্প সময়ে বিপুল মুনাফা করে নিয়েছে তারা। আর এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

আমি মনে করি, আমদানির অনুমতি দেওয়া একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে এমন একটি পলিসি তৈরি করা যেতে পারে যেখানে দাম অস্বাভাবিক বাড়লে আমদানিকারকরা আমদানি করতে পারেন।

ক্যাব সভাপতি আরও বলেন, দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে ৫০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার দিকে সরকারের নজর দিতে হবে। তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে, বীজ তৈরির পরও পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে পরিমাণে অল্প হলেও।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ বছর দেশীয় উৎপাদন ছিল প্রায় ৩৪ লাখ মেট্রিক টন।

কিন্তু মজুদ সুবিধার অভাবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের বড় দরপতন হলেও খুচরায় পতনের গতি তুলনামূলকভাবে কম।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানির অনুমতির পর খুচরায় পেঁয়াজের কেজিতে ১০ টাকা কমেছে।

বেশির ভাগ দোকানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। খুচরায় দাম এখনো নাগালের বাইরে রয়েছে বলে জানাচ্ছিলেন রাজধানীর কদমতলী এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক মো. কাশেম মোল্লা।

তিনি বলেন, দাম ১০০ টাকা হওয়ায় পেঁয়াজ কিনতে কষ্ট হয়েছে। টেলিভিশনে শুনলাম দাম অনেক কমেছে। কিন্তু বাজারে এসে দেখি এখনো ৯০ টাকা। এ দামও আমার সাধ্যের বাইরে।

কদমতলী সাদ্দাম মার্কেটের মিলন জেনারেল স্টোরের মো. মিলন ও মালিবাগ বাজারের গাজী স্টোরের ব্যবসায়ী মাসুদ রানা জানান, গতকাল পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা বিক্রি হয়েছে।

এ পেঁয়াজ ৮২ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত কেনা পড়েছে তাদের। এর আগে এ পেঁয়াজ ৯০ টাকায় কিনতে হয়েছিল। খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন জানান, আমদানির অনুমতির পর মজুদকারীরা পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছেন।

ভারতের পেঁয়াজ দেশে ঢোকার আগেই তারা ফোন দিয়ে বলছেন- তাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে হলেও পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলতে। শ্যামবাজারের মিতালী আড়তের পাইকারি বিক্রেতা কানাই সাহাও বলেন, যারা মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিলেন তাদের কপালে এখন ঘাম ঝড়ছে।

ভারতের পেঁয়াজ আমদানির খবরে কম দামে পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছেন মজুদকারীরা। এতে রাজধানীর পাইকারি বাজারে দর এক লাফে অনেকখানি কমেছে।

চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়দদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, আজ (মঙ্গলবার) ভারত থেকে আমদানি করা ছয় ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১৪ টন করে মোট ৮৪ টন) পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিলি বন্দর দিয়ে সোমবার থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ১৪টি ভারতীয় ট্রাকে প্রায় ২৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

অপরদিকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে সোমবার সন্ধ্যার দিকে ১৯ ট্রাক পেঁয়াজ ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে।

এ দিন এ বন্দর দিয়ে ৩৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। গতকাল বিকাল পর্যন্তও আরও ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশে ঢুকেছে। অপরদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ১৩৩টি ট্রাকে করে ২ হাজার ২৬১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

স্থানীয় উৎপাদনকারীদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে সরকার। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা হয়।

তবে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও শুধু আমদানি বন্ধের অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং অল্প সময়ে পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করে ফেলে।

আমদানির অনুমতির পর দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশের আগেই এ দাম এক লাফে কমে গেছে। যদিও খুচরায় দাম সেভাবে কমেনি।

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net