প্রয়াত হলেন ক্ষণজন্মা মানুষ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় ঔষধ নীতির রূপকার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ৮১ বছর বয়সে কর্মময় জীবনের অবসান ঘটল।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন মোস্তাফী আজ রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
মামুন মোস্তাফী বলেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’
দীর্ঘদিন কিডনিরোগসহ বিবিধ স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মুত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন তাঁর সহধর্মিনী নারীনেত্রী শিরীন হক এবং দুই পুত্রকন্যাকে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের এক দিশারী মানুষ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।
জনস্বার্থ কেন্দ্রে রেখে জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তাঁর উদ্যোগ, সমাজভিত্তিক জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির রূপরেখা হাজির করা তাঁর দেশপ্রেমিক অবদানের একেকটি মাইলফলক। জাতীয় দুর্যোগ ও রাজনৈতিক সংকটে তিনি সর্বদাই নির্ভীক থেকে সত্য বলে গেছেন, প্রতিবাদী হয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আবির্ভাব ছিল নাটকীয় ও বীরত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে বিলেতের অভিজাত প্রতিষ্ঠান থেকে সার্জন হওয়ার সুযোগ ছিঁড়ে ফেলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সেই ঘটনা দেশে–বিদেশে স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই তিনিই আবার রণাঙ্গনের একটু পেছনে ত্রিপুরা সীমান্তে প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল।
সেটাই প্রথম কোনো হাসপাতালের নামে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটা যুক্ত হলো। সেই যুদ্ধ হাসপাতালই স্বাধীন বাংলাদেশে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল নামে এখনও সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
শুধু নিজেকেই দেশের সেবায় নিয়োজিত করেননি, উদ্বুদ্ধ করেছেন আরও এক গুচ্ছ মানুষকে। আজকের বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উজ্জ্বল অনেক মানুষই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রেরণা, তাগাদা এবং দিশা ধরে দেশকে এগিয়ে দিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিকালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন দেশের একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে। সেই তিনিই আবার স্বাধীন দেশে হয়ে উঠলেন স্বাস্থ্যসেবা, নারীপ্রগতি, গ্রামমুখী পেশাদারি বিকাশের নায়ক।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আশির দশকে নামলেন ঔষধ শিল্পে নয়ছয় ঠেকাতে জাতীয় ঔষধনীতি প্রণয়ন করতে। অনেক হামলা ও বাধা ডিঙিয়ে তা পাস করালেন।
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিও সরকারকে নিয়ে করিয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা আর বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ঔষধনীতির কল্যাণে ওষুধের দাম গরিবের নাগালে এসেছিল।
ঔষধ শিল্প দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধকালে তাঁর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও প্যারামেডিকের ধারণা পরে বিশ্বায়িত হয়।
ঔষধ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি শুধু লড়াই-ই করেননি; অসাধারণ একটা বই লিখেছেন: দি পলিটিকস অব এসেনসিয়াল ড্রাগস।
এই দায়িত্বশীল উত্থান বহু মানুষকে আশা দিয়েছে, অভয় দিয়েছে। যেমন দেশের কিডনি রোগীদের এক বড় ভরসাস্থল হয়ে আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ডায়ালাইসিস সেন্টার।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণবিশ্ববিদ্যালয় অনেক নিপীড়িত, অভাবী ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার ভরসা হয়ে আছে। ডা. জাফরুল্লাহ বৈশ্বিক স্তরে স্বাস্থ্যসেবার ধারণায় পরিবর্তন এনেছেন।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণা তিনিই প্রথম সামনে আনেন। ডাক্তারিশাস্ত্রে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও সাধারণের পক্ষে প্যারামেডিক হওয়ার পথ দেখিয়ে তিনি স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন।
তাঁর এই দুটি ধারণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘসহ অনেক উন্নত ও উন্নতশীল দেশ নিয়েছে। এই দিক থেকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান শুধু সর্বজনীনই নয়, বিশ্বজনীনও বটে।
গ্রামীণ ধাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মা ও শিশু মৃত্যু ঠেকানো, দেশজ চিকিৎসাপদ্ধতিকে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মধ্যে ধারণ করা সামান্য কোনো কাজ নয়।
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net