সিলেটের বিয়ানীবাজারে ভাবীকে গলা কেটে হত্যায় দেবরের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে ।

বুধবার (১৮ জানুয়ারী) বিকেলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক শায়লা শারমিন এ রায় ঘোষনা করেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ওই আদালতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত সূত্র ।

দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মো: কিবরিয়া (৪৫) সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার বৈরাগীবাজার এলাকার আরিজ খাঁ টিলার মো: মইন উদ্দিনের ছেলে । রায় সে বর্তমানে কারাগারে আটক আছে।

আদালত সূত্র জানায়, দন্ডপ্রাপ্ত আসামী কিবরিয়ার ভাই কুতুব উদ্দিন এর সাথে ঘটনার প্রায় ৩ বছর পূর্বে বিয়ানীবাজার থানার বৈরাগীবাজার এলাকার খশির ভেউলপাড়ের মৃত ইমাম উদ্দিনের কন্যা খালেদা আক্তারের (২২) ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।

২০০৮ সালের প্রথম দিকে কুতুব উদ্দিন সৌদি আরব চলে যান। এরপর খালেদার সংসার চালানোর জন্য কুতুব উদ্দিন ভাই কিবরিয়ার কাছে টাকা-পয়সা পাঠাতেন।

সে টাকা নামে মাত্র খালেদাকে খরচের টাকা দিত কিবরিয়া, যা দিয়ে খালেদার সংসারের খরচ চলতো না। এ নিয়ে দেবরের সাথে খালেদার বিভিন্ন সময় ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো।

২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী রাতে এ নিয়ে সালিশ বৈঠক হলে সেই বৈঠকে কিবরিয়া খালেদার পা ধরে মাফ চায় এবং সে ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না বলে অঙ্গীকার করে।

১৫ ফেব্রুয়ারী কুতুব উদ্দিন ৯ হাজার টাকা বিদেশ থেকে খালেদার কাছে পাঠান। এ টাকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন রাত ৯ টার দিকে মো: কিবরিয়া খালেদা আক্তারকে ছুরা দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। ঘরের ভেতর তার লাশ ফেলে রাখে।

পরদিন খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খালেদার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

এ ঘটনায় নিহত খালেদার ভাই জাবের আহমদ বাদি হয়ে মো: কিবরিয়া (২২), তার মা আছারুন বিবি (৫৫), মছব্বির আরীর পুত্র নূর বকস্ (৪০), তার ভাই পাখি মিয়াকে (৩৫) আসামী করে বিয়ানীবাজার থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৮ (১৬-০২-২০০৯)।

মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ২০ মে বিয়ানীবাজার থানার এসআই মো: মজিবুর রহমান মামলার আসামী কিবরিয়া ও তার মা আছারুন বিবিকে অভিযুক্ত করে আদালতে (অভিযোগপত্র-৬০) চার্জশিট দাখিল করেন এবং ২০১০ সালের ২৯ জুলাই থেকে এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন আদালত। মামলা চলাকালীন সময়ে চার্জশিটভূক্ত আসামী আছারুন বিবি মৃত্যুবরণ করেন।

দীর্ঘ শুনানী ও ১১ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী মো: কিবরিয়াকে ১৮৬০ এর ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে উল্লেখিত দন্ডাদেশ প্রদান করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট দিয়া ইয়াসমিন ও সহকারী এপিপি এডভোকেট মো: আব্দুস সাত্তার এবং আসামীপক্ষে এডভোকেট মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান মামলাটি পরিচালনা করেন।