ভালো নেই টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দারা

স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ || ২০২২-১০-১৬ ০০:১৫:০১

image
বিশাল হাওরের মধ্যে এক খন্ড উচু ভুমি, চার পাশে হাওর আর পানি। নেই সড়ক পথ,যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাশের গ্রামের সাথেও। সেখানেই বসত বাড়ি তৈরি করে শত শত পরিবার বাস করছে বংশ পরম্পরায়। শুষ্ক মৌসুমে মাটির সড়ক দিয়ে পায়ে হেটে কোনো রকমে চলাচল করতে পারলেও বর্ষায় নৌকা ছাড়া বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।

একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা। তাই জেলা বা উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও উন্নয়ন বঞ্চিত তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর পারের বাসিন্দারা। আর সরকার তাদের জন্য কি পরিমান বরাদ্দ দিয়েছে তাও তারা জানে না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যা পায় তাই তাদের সম্বল।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও বাসস্থান মৌলিক তিনটি অধিকার থেকে যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত। হাওর নিয়ে কাজ করা সংঘটনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা টাংগুয়ার হাওর পাড়ের ৬৮টি গ্রাম রয়েছে।

শুধু টাংগুয়ার হাওর নয় মাটিয়ান,শনি হাওরসহ বিভিন্ন হাওর বেষ্টিত উত্তর শ্রীপুর,দক্ষিণ শ্রীপুর,দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের গ্রাম গুলোতেও একেক চিত্র দেখা গেছে। উপজেলা উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাংগুয়ার হাওরে পাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়,প্রতিটি বাড়ির বাসিন্দারা কোনো রকমে চার দিকে টিনের বেড়া আর নিচে মাটি দিয়ে ঘর তৈরি করে বাস করছেন।

তেমনি একটি বাড়ির মালিক এমাল মিয়া (৩২) চার ছেলে আর স্ত্রীসহ ৬জনের পরিবার। পেশায় জেলে। আর শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদ করেন। কিন্তু নিজের জমি নেই। আর দিনমজুরী করেই জীবন জীবিকা পরিচালনা করে। তার এই আয়েই চলে ৬সদস্যের সংসার।

এই হাওর পাড়ে বিকল্প কাজের সুযোগ না থাকায় বর্ষায় এই সময়ে হাওরে মাছ ধরতে সময় চলে যায়। তিনি জানান,হাওরে এখন মাছও নেই। আমাদের দুঃখের শেষ নাই। হাওরে মাছ ধরে আর আমার স্ত্রী বাড়িতে ছেলেদের দেখাশুনা করেই সময় পার করে। হাওরে মাছ পেলে কপাল ভাল বাজারে বিক্রি করে সদাইপাতি কিনা যায়।

আমাদের হাওর পাড়ের মানুষের পাশে নেই কেউ। বেশীর ভাগ মানুষ বেকার। এই হাওর এলাকায় যদি সরকারী বা বেসরকারিভাবে মিল কলকারখানায় বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হত তাহলে হাওর এলাকার বিশাল এই জনগোষ্ঠী জীবন জীবিকার অবলম্বন খোঁজে পেত। করোনা আর বন্যায় আমাদের জীবন জীবিকার চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছি।

একই অবস্থা বিরাজ করছে মতিঝিল মিয়া(৩৫),তার এক মেয়ে আছে। যৌথ পরিবার তার ১বোন,তিন ভাই,মামা বাবা ও স্ত্রীসহ ৬সদস্যের পরিবার। একই গ্রামের কামাল মিয়া(৩০) ৪ছেলে নিয়ে বসবাস করছেন।

তারা জানান, আমরাই নয় টাংগুয়ার হাওরে পাড়ের জয়পুর, গোলাবাড়ি, মুঝরাই, মন্দিআতা, চিলানী তাহিরপুর,লামাগাও,পন্ডুবসহ অর্ধশতাধিক হাওর পাড়ের গ্রামের বাসিন্দাদের একই অবস্থা।

পরিবারে অসচ্ছলতা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এই হাওর পাড়ের শিশুরাও শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। কাজের সন্ধ্যানে অনেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে গেলেও তারা উন্নয়ন বঞ্চিত।

বংশপরম্পরায় এই হাওর পাড়েই পড়ে আছেন বাবা দাদার ভিটায় হাজার হাজার মানুষ। ক্ষোভের সাথে হাওর পাড়ের হারিছ মিয়া,রফিক মিয়াসহ হাওর পাড়ের বাসিন্দারা জানান,হাওর নিয়ে কাজ করা কিছু সংঘটনের নেতৃবৃন্দ হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে কোনো কাজেই করছে না।

তারা শুধু বছরে দু-এক বার হাওরে আসে তাও আবার বোরো আবাদের সময়। তখন বাধঁ নিয়ে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাধঁ দ্রুত নির্মাণ করার জন্য। আর দেখা যায় বন্যা বা কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় এর পর আর দেখা যায় না। তবে মাঝে মধ্যে কিছু সভা সেমিনারে কথা বললেও সারা বছরেই নিষ্ক্রিয় থাকে।

হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের জীবন জীবিকা,যোগাযোগ ও শিক্ষা নিয়ে জোরালো ভাবে কোনো পদক্ষেপ বা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না।

হাওর বেষ্টিত দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান,হাওরের বিশাল জনগোষ্টি বছরের ৬মাস বর্ষায় মাছ ধরে কোন রকমে চলে কিছু পরিবার বাকী সবাই বেকার আর শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদ করেই জীবন সংসার চালাচ্ছে।

বিকল্প কাজের কর্মসংস্থান নেই ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় যুগ যুগ ধরে এই হাওর পাড়ের মানুষ অবহেলিত। তাদের জন্য আলাদা ভাবে সরকারী বরাদ্দ ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমার ইউনিয়নের অবহেলিত হাওর পাড়ের গ্রামের মানুষদের আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সবোচ্চ সহায়তা করছি।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, সারা দেশে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। হাওরাঞ্চলের গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। আশা করছি শিগগির  হাওরবাসী জীবন জীবিকার উন্নয়ন হবে। আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সবোচ্চ সহায়তা করা হচ্ছে হাওর পাড়ের মানুষদের।

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net