ঢাকায় ৭ লন্ডন প্রবাসী গ্রেফতার ও মুক্তি: বিজ্ঞজনরা বললেন দেশে আসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন

বিশেষ প্রতিনিধি || ২০২২-০৯-৩০ ০৬:৫৯:০৩

image

 

ঢাকায় সিলেটের ৭ প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতারের ঘটনায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী এমনকি সিলেটের মানুষের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেফতারের ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ বলেও মনে করছেন অনেকে। দেশ বিদেশের সম্মানিত ব্যক্তিদের এভাবে গ্রেফতারের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা। এ ঘটনা দেশে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক প্রবাসী মন্তব্য করেছেন।


বিষয়টি সংসদে উপস্থাপন হচ্ছে বলেও জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মাগুরার শালিখার আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সুমনা পাল ওই ৭ প্রবাসীর জামিন মঞ্জুর করেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার আইনজীবী শফিকুজ্জামান বা”চু। জামিনে মুক্তি পেলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন লোকজন। এভাবে চলতে থাকলে প্রবাসী দেশে আসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলেও অনেকেই মন্তব্য করেন।


জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ঢাকার মতিঝিল প্রধান কার্যালয়ে বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিতে লন্ডন থেকে ছুটে আসেন সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা জামাল মিয়া ও তার ভাই কামাল মিয়া, বিশ্বনাথের আবদুল আহাদ ও তার ভাই আবদুল হাই, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের জামাল উদ্দিন এবং সিলেট মহানগরীর শাহজালাল উপশহরের আবদুর রাজ্জাক ও আবদুর রব।

তাদের মধ্যে জামাল মিয়া ‘হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’র ভাইস চেয়ারম্যান ও বাকি সবাই পরিচালক। এ সময় মতিঝিল থানা পুলিশ ওই কার্যালয়ে হানা দিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখিয়ে ধরে নিয়ে যায় তাদেরকে। এর পরই পুরো সিলেট জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তীর্যক মন্তব্য করেন। এক সঙ্গে সাত প্রবাসীর গ্রেফতারকে রহস্যজনক বলেও মন্তব্য করেন।


একটি সূত্র জানায়, কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ এবং বীমা দাবির টাকা মিটিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেক দিনের। এছাড়া ব্যব¯’াপনায় নানা অনিয়ম রয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন রকমের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে চলে আসা হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ‘লুটপাট ও অনিয়মে’র বিরুদ্ধে সিলেটের ৭ প্রবাসী পরিচালকরা দেশে থাকা পরিচালক ও ব্যব¯’াপনা কমিটিকে বারবার তাগাদা দিলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেননি। কোম্পানির টাকা ‘আত্মসাতের’ জন্য চেয়ারম্যান এবং এমডিকে মামলার আসামী না করে শুধুমাত্র ৭ প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন আড়পাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের বীমা গ্রাহকদের পলিসির টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়।

আদালত মামলাগুলো আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে ৪ মামলায় ২৭ টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের পরোয়ানা পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। অথচ রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত করা হয়নি চেয়ারম্যান জুলহাস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকসহ অন্য কোনো পদস্থ কর্মকর্তাদের।


হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান-এমডিকে বাদ দিয়ে সিলেটের ৭ প্রবাসী পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।

তিনি বলেন, প্রবাসী বিনিয়োগকারী যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও লন্ডনে তারা সকলেই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একসাথে ৭ জন পরিচালককে গ্রেফতারের বিষয়টি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে।

তিনি বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডি, জিএমকে আসামি না করার বিষয়টিও রহস্যজনক। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলক কিছু হয়ে থাকলে প্রবাসীরা বিনিয়োগে বিমুখ হয়ে পড়বেন। তাদের অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবেও চিনি-জানি। বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করব।
এ ব্যপারে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় প্রবাসীদের প্রতি আন্তরিক। যেখানে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের মূল্যায়ণ করছেন, সেখানে কিছু স¦ার্থান্বেষী মহল প্রবাসীদের বিরুদ্ধে অব¯’ান নিয়েছে।

তিনি বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা দেশে এবং বিদেশের সম্মানিত ব্যক্তি। তারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ বিষয়কে কেন্দ্র করে শুধু প্রবাসীদের সাথে এমন আচরণ করা হ”েছ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি দেশে যোগাযোগ করি এবং তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য বলি। তিনি সুষ্টু তদন্ত দাবি করে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। 

সিলেট -৩ আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান হাবীব বলেন, বিষয়টি শোনার পর পরই আমরা রাষ্টের প্রধান কৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সরকার তাদের বিষয়ে খুব আন্তরিক। তারা জামিন পেয়েছেন বলেও তিনি জানান।  


মামলার আইনজীবী শফিকুজ্জামান বাচ্চু বলেন, আদালত তাদরেকে কোন শর্ত ছাড়াই জামিন দিয়েছেন। এই মামলাটি হাস্যকর ও বেআইনি। সাক্ষীদের পিতার নাম ও ঠিকানা নেই, আসামিদের পিতার নাম ও ঠিকানা নেই-এই মামলা খারিজ হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ মামলাটি করিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি মামলাটি কোয়াশমেন্ট হবে  বলে উল্লেখ করেন ।  

 

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net