নেতৃত্ব না মানতেই খুন করা হয় বিশ্বনাথের আ’লীগ নেতা গয়াছকে : এখনো পলাতক ৭

বিশেষ প্রতিনিধি:: || ২০২২-০৮-১৯ ০৮:৩৫:০৩

image

একজন রাজনীতিবিদ ও উন্নয়নকর্মী হিসেবে এলাকায় তার গ্রহনযোগ্যতা দিনদিন বেড়েই চলছিল। গ্রাম ও এলাকার বিভিন্ন বিষয়ে নি:স্বার্থভাবে কাজ করতেন। যা ন্যায় ও সত্য তাকেই আকড় ধরতেন। তার এমন নেতৃত্ব ও কাজ মেনে নিতে পারে না প্রতিপক্ষ। ফলে সেই বিরোধ থেকেই প্রাণ হারাতে হয় তাকে। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মো. গয়াছ উদ্দিনকে নিয়ে এমন তথ্য জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। ইউনিয়নের বরুণী গ্রামের বাসিন্দা রাজনীতিক ও শালিস ব্যক্তিত্ব গয়াছ উদ্দিনকে নিজ বাড়ির সামনেই ২৮ মে রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে ও পিঠিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর দেশে-বিদেশে মিছিল সমাবেশ হয়। একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবীকে হত্যার নেপথ্য কারণ প্রসঙ্গে এলাকার মানুষ আরও জানিয়েছেন, লুটেরা ও দুর্ণীতিবাজরা নিজেদের আখের গোঁছাতে এবং আধিপত্ব বিস্তার করতে গয়াছকে হত্যা করে। 
দশঘর উনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন তার সহকর্মী গয়াছ সম্পর্কে বলেন, একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় অল্প দিনে সুনমাও অর্জন করে গয়াছ ভাই। কিন্তু গ্রামের একটি পক্ষ তার নেতৃত্ব মেনে নিতে পারে নি। সর্বশেষ গ্রামের শাহী ঈদগাহ পুন:নির্মানর উদ্যোক্তা হিসেবে টাকার ব্যবস্থাও করেছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ তা ভালো চোখে দেখেনি। তারা নিজেদের আধিপত্ব ধরে রাখতে গয়াস ভাইকে খুন করে।
বরুণী গ্রামের শেখ ইছকন্দর আলীর ছেলে শেখ মো. গয়াছ উদ্দিন হত্যাকান্ডের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। দশঘর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। পরবর্তীতে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহ প্রচার সম্পাদক, স্থানীয় তাফসির উদযাপন কমিটির সহ সভাপতি, বরুণী-নাচুনী শাহী ঈদগাহ পুন নির্মাণ কমিটির সহ সভাপতি ও উদ্যোক্তা, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম বরুণী মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি ছিলেন। 
গত ২৪ মে রাতে ঈদগাহ নির্মাণ বিষয়ে ও ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হয়েছিলেন গয়াছ। নিজ বাড়ির ২০ গজ ও প্রতিপক্ষের রাস্তারমুখে তাকে কুপিয়ে ও পিঠিয়ে আহত করা হয়। ৩ জনু ওসমানী হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে ২ জুন হামলার ঘটনায় তার  ছেলে মাজিদ আহমদ বিশ্বনাথ থানায় একই গ্রামের মাসুক মিয়া, আমির আলী, আজাদ, আফজল, রফু, চাদ মিয়া, জুয়েল, নাচুনী গ্রামের আল আমিন, ছাব্বির ও দবিরসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা (নং-২(৬)২২ করেন। পরবর্তীতে গয়াছ মারা গেলে আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ইতোমধ্যে মামলার প্রধান আসামি মাসুককে সিলেট থেকে এবং আফজাল ও রুমেলকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে আরেক সন্ধিগ্ধ আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আসামিদের মধ্যে ১০ জন উচ্চ আদালতের জামিন শেষ হলে নি¤œ আদালত ৯ আগষ্ট তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে। পলাতক রয়েছেন ৭ জন। এরা হচ্ছেন, আল আমিন, ছাদ মিয়া, নুর আলী, দবির মিয়া, ছাবির, জুবায়ের ও জুবেল। পলাতক থাকা আসামিরা নানাভাবে হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগস করে নিহতের ভাই জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, তারা হুমকি ও ফাসানোর চেষ্ঠা করছে। আসামি মাসুক মিয়ার লোকজন তার দেয়াল ভেঙে ফেলে আমাদের ফাসানোর চেষ্টা করছে। এমনকি ঘটনার পর তারা আমাদের বাড়ি ভাংচুরও করে।
থানা থেকে গত ১৮ জুলাই মামলটি ডিবি পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই মিজান জানিয়েছেন, মামলায় এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১০ জন জামিনে ছিলেন, বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাদেরকে রিমান্ডে আনার জন্য আবেদন করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।    
গয়াছ হত্যাকান্ড বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও পাশের গ্রাম নাচুনীর বাসিন্দা তৈমুছ আলী জানান, গ্রামের জলমহাল ডাক বা বন্দোবস্থের ব্যবস্থা করে গ্রামের ফান্ডে টাকা রাখা, স্থানীয় পীরের বাজার বন্দোবস্ত নিয়ে এর আয় থেকে উন্নয়ন করা, শালিস করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল। সর্বশেষ তিনটি গ্রামের ব্যবহার করা ঈদগাহ পুন নির্মাণের জন্য ৭০ লাখ টাকার ব্যবস্থাও করেন গয়াছ। কিন্তু প্রতিপক্ষ তাকে খুন করে উন্নয়ন আটকে দেওয়ার চেষ্ঠা করে। মূলত মুষ্টিমেয় একটি শ্রেণি স্থানীয় আধিপত্ব বিস্তার ও বিভিন্ন তহবিল তসরুপ করতেই গয়াছকে হত্যা করে বলে জানান বর্ষীয়ান তৈমুছ আলী। 
মামলায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওলাদ আলী সিরাজ নামের একজনকে হুকুমদাতা হিসেবে আসামিও করা হয়েছে। গয়াছ হত্যার পর এলাকাবাসীসহ আওয়ামী লীগ মিছিল সমাবেশ করে। এমনকি পূর্ব লন্ডনের ওসমানী সেন্টারে গত ২১ জুন সেখানকার প্রবাসীরা আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে সমাবেশ করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। 
গয়াছ উদ্দিনের স্ত্রী ৩ ছেলে ও ১ মেয়ের জননী রুহেনা বেগম আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে জানিয়েছেন, তারা ভয়ে রয়েছেন। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিপক্ষ তার স্বামীকে খুন করেছে। আবার তারা হামলা-মামলা করতে পারে বলে অভিযোগ করেন তিনি। গয়াছের পরিবার জানায়, স্থানীয় বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষ রাস্তায় তার ক্ষতি সাধন করতে পারে এবং তিনি পরিবারসহ নিরাপত্তাহীতায় ভোগছেন উল্লেখ করে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর থানায় সাধারণ ডায়রি করেছিলেন। ডায়রি করার প্রায় আড়াই বছর পর তার আশঙ্কা সত্যিতে পরিণত হয়।
৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার তাজুল ইসলাম গয়াছ হত্যায় ন্যায় বিচার দাবি করে জানান, তিনি এলাকার জন্য অনেক কিছু করেছেন। বেঁচে থাকলে এলাকার উন্নয়ন করত পারতেন। একজন ভালো মানুষকে তারা হত্যা করে মূলত উন্নয়কে আটকে দিতে চেয়েছিল। নিজেদের স্বার্থের জন্য কিছু লোক তাকে সরিয়ে দিয়েছে।   

 

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net