রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। বিশেষ করে যেসব দেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর তাদের ওপরই ঝড় যাচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশের জ্বালানি খাত যেহেতু আমদানিনির্ভর, সেহেতু নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে সরকার আগাম সতর্কতা হিসাবে জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জ্বালানি তেল সাশ্রয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
ফলে সারাদেশে হচ্ছে লোডশেডিং। কিন্তু সরকারের সাশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকেই নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। দেশের ডলারের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, তেলের মুজদ কমে যাচ্ছে, শ্রীলংকার মতো অবস্থা হবে এমন প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে একটি মহল।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ এ ধরনের প্রচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলেছে, দেশে জ্বালানিতেলের ঘাটতি নেই। এখন দেশে ৩২ দিনের জ্বালানি তেলের মজুদ আছে। এ ছাড়া আগামী ছয় মাস কী পরিমাণ জ্বালানি তেল লাগবে সেটা বিপিসি কিনে রেখেছে। এসব তেল পর্যায়ক্রমে দেশে আসবে।
বুধবার বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ কাওরানবাজারে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি নেই। রাজধানীসহ দেশের পেট্রলপাম্পে ডিজেল ও অকটেনের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রয়েছে।
অথচ দেশে পেট্রল ও অকটেনের মজুদ নিয়ে গত মঙ্গলবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটানো হয়েছে। পেট্রলপাম্পে তেল সরবরাহ কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তেল নেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। এখনো দেশে ডিজেল মজুদ আছে ৩২ দিনের। জেট ফুয়েলের মজুদও আছে ৪৪ দিনের।
সাইক্লিক অর্ডারে জ্বালানির আমদানির নিশ্চয়তা আছে, এ নিয়ে কোনো সংকট নেই। বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিপিসির চুক্তি অনুযায়ী জ্বালানি তেলের সরবরাহ লাইন এখনো স্বাভাবিক আছে। সরকার চাইছে, দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমাতে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে যে নেতিবাচক গুঞ্জন চলছে সে বিষয়ে গতকাল কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কিছুটা কমলেও তাতে ঝুঁকি নেই।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংকট যেটা সবাই বলছে, রিজার্ভ নিয়ে সবারই এক ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন ২১ থেকে ২০ বিলিয়ন হয়েছিল তখন মানুষের ধারণা ছিল এত টাকা দিয়ে কী হবে?
এমনকি ২০১৯ সালেও আমাদের ৩০ বা ৩১ বিলিয়ন রিজার্ভ ছিল, কারও কোনো চিন্তা ছিল না। ৪০ বিলিয়ন পার হওয়ার পর মনে হচ্ছে যেন একটু এদিক-ওদিক হলেই দেশের ভিত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ সারাবিশে^ মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে উল্লেখ করে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আমাদের এখানে দেখা যাচ্ছে, একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আমাদের ৪২ বিলিয়ন ডলার ছিল সেটা একটু কম হয়েছে।
সাধারণত বলা হয়, তিন মাসের আমদানি ব্যয় যদি থাকে তা হলে ওই অর্থনীতিটা মজবুত। আমাদের পাঁচ মাসের অধিক আমদানি ব্যয় আছে। এর আগে বলা হতো, তিন মাসের খাদ্য আমদানির ক্যাপাসিটি আছে কিনা। এখন আমরা শুধু খাদ্য আমদানি হিসাব করি না, আমাদের মোট যে আমদানি হয় সেটা হিসাব করছি। তাতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের পাঁচ মাসের বেশি আছে।
অতএব, আমাদের ঝুঁকি নেই।’ তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটে পড়েছে সারাবিশ্ব। এ সংকটে যেন বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটছে সরকার।
এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে অলস বসিয়ে রেখে সরকার ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সমালোচনা করছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
অসত্য তথ্য পরিবেশন করা দুঃখজনক। এদিকে জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে গুজব নিয়ে গণমাধ্যমে একটি ব্যাখ্যা পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল জ্বালানি তেলের মজুদ নিয়ে অসত্য ও মনগড়া তথ্য প্রচার করছে, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ে বলছি, বিপিসির আওতাধীন কোম্পানিগুলোর ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে।
বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই। সংকটের কোনো আশঙ্কাও নেই। ইতোমধ্যে আগামী ছয় মাসের জন্য প্রয়োজনীয় তেল আমদানির প্রক্রিয়া পাইপলাইনে আছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ডিজেল মজুদ রয়েছে চার লাখ ৩১ হাজার ৮৩৫ টন। দৈনিক গড় বিক্রি ১৩ হাজার ৬০৭ টন।
সেই হিসাবে ৩২ দিনের মজুদ আছে। এ ছাড়া জেট পুয়েল মজুদ রয়েছে ৪৪ দিনের ও ফার্নেস ওয়েল মজুদ রয়েছে ৩২ দিনের। অর্থাৎ দেশে এখনো যথেষ্ট পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে। পেট্রল পুরোটাই এবং অকটেনের প্রায় ৪০ ভাগ বাংলাদেশ উৎপাদন করে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, চলতি জুলাই মাসে ৯টি জাহাজ থেকে ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫৫ হাজার টন ডিজেল, ২টি জাহাজে প্রায় ৪৩ হাজার টন জেট ফুয়েল,
একটি জাহাজ থেকে ২৪ হাজার ৬৭৭ টন অকটেন এবং দুটি জাহাজ থেকে ৫৩ হাজার ৩৫৮ টন ফার্নেস অয়েল গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী মাসের জন্যও বিপিসি ৮টি তেলের জাহাজের অর্ডার করা হয়েছে। যার মধ্যে দুই লাখ ১৮ হাজার টন ডিজেল, একটি জাহাজে ২৫ হাজার টন জেট ফুয়েল,
একটি জাহাজে ২৫ হাজার টন অকটেন আসবে। একই সঙ্গে আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশে আসবে জ্বালানি তেল। এর ৫০ ভাগ জি-টু-জি টুক্তির মাধ্যমে এবং বাকি ৫০ ভাগ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে তেল কেনার অর্ডার করা হয়েছে। ফলে ঘাটতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net