সুনামগঞ্জে বানের পানিতে স্বপ্নের সলিল সমাধি

স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ || ২০২২-০৭-০৫ ১৬:৫৯:৫৫

image

আমাদের আবার কিসের ঈদ? আমাদের বাড়ি ঘর সব ভাসাই নিছে। এখন তাকিয়ে থাকি কারো অপেক্ষায়। কেউ ত্রাণ দিলে খাবার মিলে। আর না দিলে উপোস থাকতে হয়। সুনামগঞ্জের বন্যায় ক্ষতি গ্রস্থরা সবাই এখন বাঁচার জন্য, খাবার আর থাকার জন্য শেষ লড়াই করছেন।

শেষ সম্বল ঘর মেরামতের চিন্তার অস্তির এখন বানভাসী লোকজন। সামনে কোরবানির ঈদ নিয়েও তাদের কোন চিন্তা নেই। কোনরকম জীবন বাঁচাতে একটি ত্রাণের প্যাকেটের জন্য দিনভর অপেক্ষায় থাকেন তারা। ত্রানের পেকেট পাওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ প্রসঙ্গে একবার বসে আবার হাটাচলা করছেন বিধবা ফরিদা (৪০ ও জয়বা খাতুন (৬০)।

তারা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের জামালগর গ্রামের বাসিন্দা। ঈদের আর মাত্র ৩ দিন বাকী। অথচ সিলেট-সুনামগঞ্জের প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ ঈদের এই আনন্দঘন সময়ে লড়ছে পানির সাথে, জীবনের সাথে। সব জায়গায়ই বিরাজ করছে হাহাকার। কাজ নেই, কর্ম নেই।

উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া প্রায় সব শ্রেনীর মানুষের এখন ভরসা বেসরকারী ত্রাণ কিংবা সরকারী সহায়তা। প্রশ্ন জাগছে, এসব সহায়তা কি মেটাতে পারছে তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন চাহিদা? স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে শহরকেন্দ্রীক গ্রাম কিংবা এলাকাগুলোতে মানুষ ত্রাণ সহায়তার নাগাল পাচ্ছে ঠিক।

কিন্তু একেবারে অজোপাড়া গ্রামের অসহায় মানুষগুলো পর্যাপ্ত সহায়তার দেখাই পাচ্ছেনা। ফলে উপোষ করে, খেয়ে না খেয়ে এক একেকটা ভয়াল দিন পার করছেন এসব মানুষগুলো। বন্যায় এদের ঘরের সবকিছু ভেসে গেছে। চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে তাঁদের সাজানো স্বপ্ন।

বানভাসী লাখ লাখ মানুষের নেই কোন ঈদ ভাবনা। মঙ্গলবার সিলেট-সুনামগঞ্জের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বানভাসি মানুষের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। কোথাও ঘর ধসে পড়েছে, আবার কোথাও ঘরের বেড়া নেই।

ভয়াল বন্যায় ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে শত শত গরু, ছাগল, হাস মুরগি। এসবের ওপর ভরসা করে এবার ঈদুল আজহা উদযাপনের চিন্তা ছিল বেশির ভাগ বানভাসি মানুষের। কিন্তু বন্যায় সবকিছু হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। কোনরকম বেঁচে আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে আবার কেউবা আত্মীয়ের বাড়ীতে, আবার অনেকে রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতেই।

যে ঈদ আনন্দের সে ঈদ তাদের কাছে মূল্যহীন করে দিয়েছে বন্যা। তারা জানায়,বাবারে বড় কষ্টে আছি। ঘর বাড়ি বন্যার পানিতে শেষ করে দিছে। ঘরে কোন রখমে আছি। খাবার ত আর কেউ দেয় না। যা পাইছি তা কোন রখমে চালিয়েছি। বন্যায় চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছি।

নিজের বসত বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেয়েছিল। কোন রখমে দিন পার করে এখন খাবার জোগাড়ে ব্যস্থ। কিন্তু সারাদিন গুরাফেরা করেও খাবার জোগাড় হয় না। ত্রানের পেকেট পাই না খুব কষ্ট দিন পার করতাছি। গরীবের কোন ঈদ নাই। বাইছা থাকাটাই এখন বড় দায় বলে জানান জয়বা খাতুন।

সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় নিজের জীবন আর পশু পাখিদের বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্র গিয়েছিলাম গত ১৬জুন(বৃহস্পতিবার)। পানি কমায় চৌদ্দ দিন পর বাড়ি ফিরে দেখি ঘরসহ ঘরের জিনিসপত্র আমার শেষ মনের কষ্টে কথা গুলো বলছিলেন দিনমজুর মোজাহিদ মিয়া। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সূর্য্যেরগাও গ্রামে।

তিনি আরও বলেন,সামনে আসছে কোরবানি ঈদ। হাতে টাকাও নেই। এখন কাজও পাই না। কি ভাবে যে তিন বেলা ডাল ভাত খামু ভেবে পাই না। এর মধ্যে থাকার ঘরের এই দুরবস্থা। এখন ঘর করমু না ঈদে মা,বাবা,বৌ,ছেলে মেয়েদের নতুন কাপড় কিনে দিমু। কি ভাবে যে কি করমু বুজতাছিনা।

ভাই এবার বানভাসি গরিব মানুষের ঈদ আনন্দ ভানের পানিতে শেষ। সব ভেষে গেছে। এমনি কথা সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে কৃষক শ্রমিক ও দিনমজুর মানুষের। কথা হয় তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের মাকমুদা বিবির সাথে।

তিনি জানান ভাই কি কমু কষ্টের কথা। বন্যার সময় তিন দিন ভাত না খেয়ে কোন রখমে নিজের ভাঙা চুরা বাড়িতে স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে বাড়িই ছিলাম।

ঘর থেকে বের হবার কোন সুযোগ পানি। ঘরের মধ্যে পানি কই যামু কে কি দিব আর কই দিব কিছুই জানতে পারি নাই। এখন ধার কর্য করে কোন রখমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতাছি। ঈদে সন্তানদের নতুন কাপড় কিনে দিতে পারতাম না এই কষ্ট কারে কমু। কেউ নাই শুনার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি ঘর মেরামতের টাকা দিব শুনছি অহন যদি ঘরটা ঠিক করতাম পারি তাইলে ঘরে থাকতে পারমু নাইলে মেঘ বৃষ্টিতে ভিজেই থাকতে হবে। আমরা তো একটার পর এক দুর্যোগে পইরা কাহিল অইগিছি। আর কত সইতাম। কত কষ্ট করতাম। মানুষ তো আর পারতাছে না। এখন কীভাবে ঘরের কাজ করমু, কীভাবে খাইমু, এই নিয়ে চিন্তায় ঘুম নাই।

ইলা বিপদে কোনো দিন পড়েনি বলে জানান টমটম চালক ইমাম মিয়া। সড়কে পানি থাকায় কাজের বের হতে পারি না মনও অয় সামনের ঈদটাও ঠিকমতো করতে পারতাম না। একের পর এক বন্যায় দুর্ভোগে আর দুশ্চিন্তায় ক্লান্ত হয়ে গেছি। এমননি বুক ভরা কষ্টের কথা হাওর পাড়ের মানুষের।

নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের বাজারে মানুষের চাহিদা থাকলেও বন্যার প্রভাব পরেছে ব্যবসা বানিজ্য ও পশুর হাটেও। ভাল নেই হাওর পাড়ের কৃষক দিন মজুর পরিবারের মানুষ।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান,আমাlর বন্যার শুরু থেকেই মানুষের পাশে দাড়িয়েছি এখনও আছি বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে। ঈদের পূর্বে বন্যার্থ দের সহায়তা বিতরণ করা হবে।

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net