বন্যায় অর্ধলাখ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব
স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ ||
২০২২-০৭-০১ ১৫:০৭:৩৪
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। গত ১৬ জুন থেকে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। এরপর থেকে মানুষের দুর্গতি পিছু ছাড়ছে না।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলায় ৯৫ ভাগ মানুষ কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এবার
ভয়াবহ বন্যায় পূর্বের সকল ক্ষয় ক্ষতির রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বন্যার পানি কিছু টা কমলেও বাড়িঘর সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত হওয়ায় এখনও বিপুল সংখ্যক মানুষ নিজের ভিটায় ফিরতে পারছেন না। কষ্টের গড়া নিজ ঘরে অবস্থান করতে না পারা শ্রমজীবী,দরিদ্র মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও সড়ক,মাছ ও গৃহপালিত পশু পাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ফলে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে এখনও অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে।
জেলায় সরকারি হিসাবে বন্যায় সাড়ে চার লাখ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে
মাসুক মিয়াসহ জেলার সচেতন মহল বলছেন,এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরবাড়ির। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন যা এর আগে একাধিক বন্যা হলেও এত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়নি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে,জেলার ১২টি উপজেলার চার হাজার ৭৪৭টি বসতঘর সম্পূর্ণ ও ৪০ হাজার ৫৪১টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি সম্পূর্ণ ভাবে কমে গেলে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে বলে জানিয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো জেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাণ তৎপরতা সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেছেন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী,বন্যায় জেলায় ২৫ হাজার ২০৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১ হাজার ৬৪২টি গবাদিপশু মারা গেছে। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৬৯টি ও ভেড়া ৫১৪টি। এ ছাড়া বন্যায় ২৮ হাজার ৮০৫টি মুরগি ও ৯৭ হাজার ৮৩১টি হাঁস মারা গেছে। বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত ৩৮৪ কিলোমিটার সড়ক, ১৫৫টি সেতু কালভার্টের সংযোগ সড়ক এবং ৪টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে
এখনো বিভিন্ন স্থানে পানি আছে। তাই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে।
বন্যায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলায় প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিল থেকে নগদ ৫৫ লাখ টাকা, ৫০ হাজার ১২ প্যাকেট গুঁড়া দুধ পাওয়া গেছে। এসব নগদ টাকা ও সামগ্রী প্রতিটি উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ টাকা পাওয়া গেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
আরও উল্লেখ করা হয়,এ পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া ১১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, সাড়ে ১৪ কেজির খাদ্যসামগ্রীর ২৮ হাজার বস্তা , ১০ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং আরও ১০ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাদুর্গতদের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ৭ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে । এর বাইরে বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত নগদ ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৩৬ প্যাকেট খাবারের পাশাপাশি ২৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান,এবার আমার ইউনিয়নের ক্ষয়ক্ষতি পরিমান সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারের অবস্থায় এখন খুবেই করুন। তাদের মাটির বসত বাড়ি গৃহপালিত পশু পাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,বৃষ্টি হওয়ায় কোথাও কোথাও পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি থামলে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিন্মাঅঞ্চলে এখনও বন্যার পানি আছে। ফলে কিছু মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে কঠের নজরধারী রাখা হচ্ছে। এবং সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আরও জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দেওয়া হয়েছে। শিগরিরই তাদের মধ্যে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে যাতে তারা বাড়িঘর মেরামত এবং অর্থ দিয়ে জীবন বাঁচাতে পারে।
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net