আজ ৩০ জুন ১৬৭ তম ঐতিহাসিক মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
উপমহাদেশের প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম। সাঁওতাল বিদ্রোহীদের সেদিনের দেশপ্রেমিক সংগ্রাম, আদর্শ ও অদ্ভুতপূর্ব আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ।
জুগিয়েছিলেন সাহস ও উদ্দীপনা। মুক্তিকামী মানুষের কাছে আজও তা অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক দুই ভাই—সিধু মুরমু ও কানু মুরমু স্মরণে ও শ্রদ্ধায় সাঁওতালদের অনেকেই দিনটিকে সিধু-কানু দিবস বলে থাকেন।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের এদেশীয় দালাল সামন্ত জমিদার, সুদখোর, তাদের লাঠিয়াল বাহিনী, দারোগা-পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাঁওতাল নেতা সিধু, কানু, চাঁদ ও ভাইরো—এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে রুখে দাঁড়ান সাঁওতালরা।
সঙ্গে ছিলেন তাঁদের দুই বোন ফুলোমনি মুরমু ও ঝানো মুরমু। ভারতের ভাগলপুর, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলার প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকা দামিন-ই-কোহ্ বা ‘পাহাড়ের ওড়না’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
ভাগলপুরের ভগনা ডিহি গ্রামের সিধু, কানু, চাঁদ ও ভাইরো-এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে দামিন-ই-কোহ্ অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহ। ১৮৫৫ সালের ৩০শে জুন পূর্ণিমাতে ভগনা ডিহি গ্রামে ৪০০ গ্রামের প্রতিনিধি ১০ হাজার সাঁওতাল কৃষকের বিরাট সমাবেশ হয়েছিলেন।
এই সমাবেশে সিধু-কানু ভাষণ দিয়েছিলেন। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অত্যাচারী শোষকদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে। এখন থেকে কেউ জমির কোনো খাজনা দেবেন না এবং প্রত্যেকেরই যত খুশি জমি চাষ করার স্বাধীনতা থাকবে।
আর সাঁওতালদের সব ঋণ এখন বাতিল হবে। তাঁরা মুল্লুক দখল করে নিজেদের সরকার কায়েম করবেন।এ সব কিছু শোনার পর থেকে সাঁওতাল যুবক-যুবতিরা তীর- ধনুক,টাঙ্গি,বর্শা সংগ্রহ করতে লাগলেন।এছাড়া মানভূম,বীরভূম ও হাজারিবাগ এলাকা থেকেও নির্যাতিত হিন্দু- মুসলমান এসে যোগ দিয়েছিলেন।
১০ হাজার সাঁওতাল কৃষক সেদিন শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়েছিলেন। ভগনা ডিহি গ্রামের ওই সভার শপথ ছিলেন বিদ্রোহের শপথ। বিদ্রোহের মূল দাবি ছিলেন ‘জমি চাই, মুক্তি চাই’।
জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ সরকারের শোষণ ও জুলুম থেকে মুক্ত হয়ে শান্তির সঙ্গে উৎপাদনের কাজ ও জীবন ধারণ করার সংকল্প নিয়ে সাঁওতাল কৃষকেরা বিদ্রোহের পথে পা বাড়িয়ে ছিলেন । তাঁদের এ বিদ্রোহের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এলাকার শোষিত, বঞ্চিত বাঙালি ও বিহারি হিন্দু-মুসলমান গরিব কৃষক এবং কারিগরেরা।
সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়ে উঠেছিলেন সব সম্প্রদায়ের গরিব জনসাধারণের মুক্তিযুদ্ধের সনদ। প্রতিবছর এই দিনে সিধু-কানুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি, শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাঁওতালসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ ও দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সাঁওতাল বিদ্রোহের মহানায়ক সিধু-কানুসহ সব আত্মদানকারীকে।
উদযাপন করেন সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস । সাধারণ নিরক্ষর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাস না জানলেও বংশপরম্পরায় তাঁদের কাছে গানে গানে বেঁচে আছেন সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়কেরা।
সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসে তাঁদের আজও গাইতে শোনা যায়, ‘"সিদো-কানহু খুড়খুড়ি ভিতরে চাঁদ-ভায়রো ঘোড়া উপরে দেখ সে রে! চাঁদরে! ভায়রো রে! খোড়া ভায়োরে মুলিনে মুলিনে।’" সিধু-কানু পালকিতে এবং চাঁদ-ভৈরব ঘোড়ায় চড়ে বিদ্রোহীদের পাশে থেকে তাঁদের উৎসাহ দিতেন। নেতাদের কাছে পেয়ে বিদ্রোহীদের মনে যেন আনন্দ ও আশার আলো দেখা দিত, তারই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এই গানে।
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net