সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদকৃষি প্রযুক্তি

খলিলুর রহমান ফয়সাল:: || ২০২২-০৬-২২ ০৪:০১:০৯

image

বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর থেকে সিলেট একটু আলাদা। এখানকার ভূপ্রকৃতি, আবহাওয়া যেমন ভিন্ন তেমনি শহরের গঠনটাও ভিন্ন।

উচু নিচু ভূমির ফাঁকে ফাঁকে বড়বড় দালান-কোঠা দিয়ে নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছে। ঢাউস সাইজের ভবনের সাথেসাথে দিনদিন এর জনসংখ্যাও বাড়ছে এবং কমছে গাছপালা। সম্প্রতি আবার যুক্ত হয়েছে বন্যার ভয়।

উজানের ঢলে মূহুর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় মাঠ, রাস্তা ও ঘরবাড়ি। প্রবাসী অধ্যূষিত এই জনপদে নগর কৃষি বিষয়ক নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ভবনের ছাদে স্থাপিত হয়েছে একটি আদর্শ ছাদবাগান।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (সাউরেস) অর্থায়নে কীটতত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর ড. চন্দ্র কান্ত দাশ এই ছাদবাগান গড়ে তুলেছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাদের প্রতিটি জায়গায় মেপে মেপে ছোট-বড় নানা সাইজের টব বসানো, সেই সাথে রয়েছে চারকোনাকৃতি স্ট্রাকচার ও সবজির জন্য তৈরী মাচা। সেখানে ফলেছে নানা রকমের মৌসুমী সবজি।

কোথায় ধরে আছে থোকা থোকা ফল, আর কোথাও ফোটেছে রঙিন ফুল। ঢাকায় ছাদবাগান প্রযুক্তি বেশ সাড়া ফেললেও সিলেটে এখনও ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। যদিও এ বিষয়ে দিনদিন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। করোনা মহামারীতে মানুষ ঘরবন্দি থাকার সময় টের পেয়েছে, ছাদকৃষি কতোটা জরুরী।

কয়েকটি পরিবারের সারাবছরের ফল সবজির যোগান দেয়ার সক্ষমতা রাখে একটু টুকরো ছাদ। হাঁটাহঁটি করে সময় কাটানো বা কাপড় শুকানোর পাশাপাশি দশ বারোটি টবের জায়গা করে দিলে, সেখানে গৃহিনী থেকে শুরু করে ঘরের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটির তত্ত¡াবধানেও গড়ে উঠতে পারে ছাদকৃষি।

প্রফেসর ড. চন্দ্র কান্ত দাশ বলেন, প্রাথমিক অব¯’ায় শখের বসেই কয়েকটি টব দিয়ে শুরু করা উচিত। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতার সাথে সাথে সবজি, ফল, ফুল সহ চাইলে কেউ বানিজ্যিক ভাবেও ছাদকৃষি করতে পারেন। তবে ছাদবাগানে সফল হতে চাইলে শুরু থেকেই পরিকল্পিতভাবে বাগান শুরু করতে হবে।

তিনি তার আদর্শ ছাদবাগানে মাটির কম্পোজিশনে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি অর্গানিক সারের পাশাপাশি ভালো সেচব্যাব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন ছাদবাগানের মাটির মিশ্রন এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে টবের মাটির ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুব ভাল হয়।

তাছাড়া সিলেটে বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে মাটির সাথে সমপরিমানে গোবর বা কম্পোস্ট ও কোকোপিট মিশিয়ে মিশ্রন তৈরী করলে অত্যধিক বর্ষাতেও মাটি ঝুরঝুরে থাকবে। ছাদের এক কোণায় লকলকে কলমি শাক দোল খাচ্ছে।

শাকের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, বাজারে এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। তাছাড়া সবজি ও ফলের উপর বাড়তি। তাছাড়া সবজি ও ফলের উপর ক্রেতাদের আ¯’ার জায়গাও কমে আসছে। কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভের কারণে মানুষ কিছু কিনতে গিয়ে সন্দেহের চোখে তাকায়।

অথচ একটি মধ্যবিত্ত পরিবার খুব সহজেই ছাদের কোনায় সবজি ও শাক চাষ করে তাদের সারা বছরের শাকের চাহিদা মেটাতে পারে। মোট ২৩০০ বর্গফুট জায়গায় ফলজ- ভেষজ গাছের পাশাপাশি ¯’ান পেয়েছে নানা দেশী-বিদেশী প্রজাতির ফুল গাছ।

ড. চন্দ্র কান্ত তাঁর মডেল ছাদবাগানে ২২ প্রজাতির সবজি, ৩৫ প্রজাতির ফল, ৩০ প্রজাতির ফুল, ১৩ প্রজাতির মসলা এবং ইনডোর প্ল্যান্ট, সাকুলেন্ট ও ক্যাকটাস মিলে মোট ১৬৫টির ও অধিক প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন। ফুল ও ফল গাছের সাড়িগুলো তিনি এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন, ফলগাছের পরাগায়নে সুবিধা হয়।

পরাগায়নের সুবিধার্থে তিনি ছাদে কয়েকটি মৌচাক বাক্স ¯’াপন করেছেন। তিনি বলেন সিলেটে চারপাশে ছোট বড় টিলা থাকায় মৌমাছির জন্য প্রাকৃতিক খাবার বিদ্যমান রয়েছে। এপিস সেরানা জাতের মৌমাছির বাক্স অনায়াসে ছাদে রেখে চাষ করা সম্ভব।

এতে খুব একটা বাড়তি যতœ নেয়ারও প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি ফসলের পরাগায়নেও ভূমিকা রাখতে পারে এবং বছরে ২-৩ বার মধুও আহরণ করা সম্ভব। ড. চন্দ্র কান্ত দাশ বলেন, একটা সময় মানুষ ছাদে বা ব্যালকনির টবে শুধু কয়েকটা ফুল গাছ লাগিয়ে দিতেন। কিš‘ অনেক বাসায় এখন দুটো মরিচ গাছ বা একটি বেগুন গাছের দেখা মিলে। বারান্দায় লাউ, শীম, কুমড়ার লতাও ঝুলে।

তিনি তার বাগান ঘুরিয়ে বলেন, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি, পালংশাক থেকে শুরু করে গ্রীষ্মকালীন কলমিশাক, ঢেড়ষ, কচু সহ লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, করলা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, বরবটিসহ যেকোন শাকসবজি অল্প পরিশ্রমে ছাদবাগান ছাদবাগান থেকে মিলে। কৃষি অনুষদের ছাদবাগানে ইতিমধ্যে ফলেছে লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, করমচা, আমড়া, পেঁপে সহ কয়েকটি জাতের ফল।

তিনি বলেন, যেভাবে মানুষ বাড়ছে, নগরায়ন বাড়ছে, কৃষিজমি কমছে তাতে শহরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে নগর কৃষির সম্প্রসারণ জরুরী। তাই নগরে ছাদ কৃষির আয়োজন একদিকে যেমন নিরাপদ খাদ্যের যোগান দিতে পারে, তেমনি পরিবেশ সমুন্নত রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে, সর্বোপরি মানসিক স্বার্থ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাগান করতে ভবনের কোন ঝুকি আছে কি না সে বিষয়ে, প্রফেসর ড. চন্দ্র কান্ত দাশ জানান, বেশিরভাগ ভবনের ছাদ এখন পানিরোধী। যদি পানিরোধী ছাদ না হয়, তাহলে সেটির উপরে একটি স্তর ¯’াপন করলেই ছাদবাগান করা সম্ভব।

এছাড়াও বাজারে এখন অনেক প্রযুক্তি বিদ্যমান আছে যাতে পরিকল্পনামাফিক ছাদকে ছাদ কৃষির জন্য উপযুক্ত করে তোলা যায়। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ বলেছেন, সারা বাংলাদেশের মতো সিলেটের তাপমাত্রাও দিনদিন বাড়ছে।

গাছ কাটার পাশাপাশি নগরীতে অসংখ্য যে ফাঁকা ছাদ রয়েছে সেটি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। কারণ সূর্যের তাপমাত্রা পৃথিবীতে আসার পর নগরীর অপরিকল্পিত ভবন ও ছাদগুলো সে তাপ ধরে রাখছে। প্রয়োজন অনুযায়ী শহরের রাস্তাঘাটে গাছও লাগানো হয় না।

োসুতরাং বাড়ির ছাদে কিংবা ব্যালকনিতে নিয়ম মেনে বাগান করা হলে তাপমাত্রা অনেক কমে আসবে। এছাড়া ব্যাপক হারে ছাদে চাষাবাদ হলে বাতাসের অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডসহ দূষিত পদার্থ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

লেখক: খলিলুর রহমান ফয়সাল উপ পরিচালক জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। 

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net