ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা কে পাবে নমিনি নাকি উত্তরাধিকারীকার

সিলেটসান ডেস্ক:: || ২০২২-০৬-০৪ ১৩:০৫:০৪

image

বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার ব্যাংকের অ্যকাউন্টে গচ্ছিত টাকা বা সঞ্চয়পত্রের মতো বিষয়গুলো কে পাবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি রয়েছে।

 

বিশেষ করে ওই ব্যক্তি যদি উত্তরাধিকারীদের বাইরে কাউকে নমিনি হিসেবে মনোনীত করে যান তাহলে তা নিয়ে তৈরি হয় নানা জটিলতা।

 

কারণ, দেশটিতে অনেকেই তাদের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ হিসেব করার সময় নমিনির বিষয়টিতে খুব একটা গুরুত্ব দেন না।

বরং শুধু মাত্র একটি নাম দেয়া দরকার মনে করে অনেকে নমিনি হিসেবে ইচ্ছেমতো তার পরিচিত কারো নাম দিয়ে দেন।

আবার অনেক সময় সন্তানরা খুব ছোট থাকার কারণেও কেউ কেউ বন্ধু, আত্মীয় বা পরিচিত কারো নাম নমিনি হিসেবে দেন। ফলে অনেক সময় ওই ব্যক্তি মারা গেলে নমিনি সব অর্থ নিয়ে নিচ্ছেন এবং মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, সন্তান অর্থাৎ ওয়ারিশদের বঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে যে ওই ব্যক্তি মারা গেলে ব্যাংক তার অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা কাকে দেবে? নমিনি হিসেবে যার নাম তিনি দিয়েছিলেন তাকে নাকি ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের?

নমিনি যদি উত্তরাধিকারীদের কেউ হন তাহলে তিনিই কি সব টাকা পাবেন নাকি মৃত ব্যক্তির আরো উত্তরাধিকারী যদি থাকে তারাও ওই টাকার অংশ পাবেন, এগুলো নিয়েও আছে বিতর্ক।

 

ব্যাংক আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ বলেন, আইন অনুযায়ী নমিনিই মৃত ব্যক্তির ব্যাংক হিসেবে থাকা টাকা পাবেন।

এ কারণে উত্তরাধিকারীরা ওই অর্থ থেকে বঞ্চিত হবেন সেটা না। তার মতে কেউ মারা গেলে তার সঞ্চিত অর্থ বা তার অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ নমিনিকে দিয়ে এ সম্পর্কিত প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত হবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

 

তিনি আরো বলেন, এরপর বিষয়টি হলো নমিনি ও উত্তরাধিকারীদের। আইনে বলা আছে, নমিনিকে দেয়া মানে উত্তরাধিকারীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়া নয়।

অর্থাৎ নমিনি যদি উত্তরাধিকারীদের ওই টাকা না দেন, তাহলে তারা আদালতে যেতে পারবেন।

অর্থাৎ প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যাংক তার দায়িত্ব পালন শেষ করবে নমিনির হাতে অর্থ তুলে দিবে। কিন্তু তিনি যদি ওই অর্থ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিতরণ না করেন তাহলে তারা আদালতে যেতে পারবেন।

এর মানে হলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা পাওয়ার পর নমিনির কাজ হবে ওই ব্যক্তির আইনগত উত্তরাধিকারীদের সেটি বুঝিয়ে দেয়া।

সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, নমিনি ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ট্রাস্টির ভূমিকা পালন করেন বা ওই হিসেবের ম্যানেজার মাত্র।

আইন অনুযায়ী ম্যানেজার হিসেবে তিনি ওই অর্থ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের হাতে তুলে দেবেন। যদিও তা না করে অনেক ক্ষেত্রে নমিনি টাকা নিজে রেখে দিচ্ছেন বলে দেখা যাচ্ছে, যা আইনের লঙ্ঘন বলে তিনি জানান।

 

তিনি আরো বলেন, নমিনি ওই অর্থ উত্তোলনের অধিকারী হবেন ও উত্তরাধিকার আইন অনুসারে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তা বণ্টন করবেন।

 

তা না হলে উত্তরাধিকারীরা আদালতে গেলে প্রতিকার পাবেন। আইনজীবী নাজনীন নাহার এ ধরনের একটি মামলায় এক পক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নমিনি করে সঞ্চয়পত্র রেখেছিলেন। পরে তিনি মারা গেলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ওই সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে পুরো টাকা একাই ভোগ করতে চাইলে আইনের আশ্রয় নেন তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা।

 

এ নিয়ে প্রথমে নিম্ন আদালত বলেন, নমিনিই ওই টাকা পাবেন। কিন্তু পরে হাইকোর্টে যায় বিষয়টি।

হাইকোর্ট বলে, ওই টাকা পাবেন মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরাই। এরপর হাইকোর্টের এ রায় চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে এখন আপিল বিভাগে পূর্ণাঙ্গ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

 

বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে আগের রায়ই কার্যকর আছে বলে জানান নাজনীন নাহার। আর ওই রায় অনুযায়ী নমিনির কাছেই হিসেবের টাকা হস্তান্তর করবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

 

বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনগুলো অনুযায়ী সাধারণত মৃত ব্যক্তির সব সম্পত্তি তার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাংকের হিসেবে থাকা টাকা যায় নমিনির কাছে।

 

তবে কোনো বিষয়ে একাধিক আইন থাকলে বা আইনগত জটিলতা দেখা দিলে এ বিষয়ে সর্বশেষ যে আইন হয়েছে সেটাই অনুসরণ করা হয়।

 

এ বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ হলো সর্বশেষ আইন। অন্য আইনে যাই থাকুক এটিই এ বিষয়ে কার্যকর হবে বলে বিদ্যমান আইন বলে। আর এ আইন অনুযায়ী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নমিনির কাছেই মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা হস্তান্তর করবে।

 

এর ভিত্তিতে ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকও সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিল, কেউ মারা গেলে তার ব্যাংকে রাখা টাকা নমিনিই পাবে।

 

কিন্তু নমিনি যদি ওই টাকা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তুলে না দেন তাহলে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার একমাত্র উপায় হলো আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net