বাপার গোলটেবিল বৈঠক: বিপদে বিপর্যস্ত হওয়ার আগে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে’

সিলেটসান ডেস্ক:: || ২০২২-০৬-০১ ২২:০৭:৩১

image
আকস্মিক বন্যায় সিলেট বিভাগের মানুষকে আবারো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হলো। এবারের বন্যা বিভাগীয় শহর সিলেটকে বেশি কাবু করে। নাব্যতা হারিয়ে শান্ত নদী সুরমা হঠাৎ করে বৈরীরূপ ধারণ করে।একরাতেই প্লাবিত হয় সিলেটের পাঁচটি উপজেলা ও নগরীর নিম্মাঞ্চল। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাজার হাজার একর ফসলের জমি ডুবে যায়। অসংখ্য মানুষ সেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এসব হচ্ছে সিলেটের আন্ত:সীমান্ত নদীগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আয়োজিত ‘অভিন্ন নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ : বিপর্যস্ত সিলেট’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা আরও বলেন, উজানে ভারত একাধিক আন্ত:সীমান্ত নদীতে ড্যাম নির্মাণ করে পাণি নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার সেখানে বেশি পরিমাণ ৃবষ্টিপাত হলে ড্যামগুলো খুলে দেয় তারা। আর এ কারণে ভাটির অঞ্চল সিলেট আকস্মিক বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া আমাদের নদ-নদী, ছড়া-খালবিলগুলো ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানি ধারণ করতে পারেনা আমাদের নদী ও হাওরগুলো। যার কারণে বিস্তৃর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে সিলেটের মানুষকে বাঁচাতে এখনই সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সিলেট নগরের ব্লু-ওয়াটারে ইমজার সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সহসভাপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক রেজিস্ট্রার জামিল আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও বাপার কেন্দ্রীয় সদস্য, শাবিপ্রবির অধ্যাপক ও বাপার কেন্দ্রীয় সদস্য ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শাকিলের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনার শুরুতে মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আবদুল করিম কিম। গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. কামাল আহমদ চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিক -সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সহসভাপতি, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন, সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিল ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, গণতন্ত্রী পার্টি সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মো. আরিফ মিয়া, সাম্যবাদী দল সিলেটের সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন সিংহ, ঐতিহ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেটের সভাপতি মো. সিকন্দর আলী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক উজ্জ্বল রায়, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাপা সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, বেলা সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল, সারি বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদী, এস জে এ’র পরিচালক এ এইচ ফারুক আহমদ খান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জান্নাত আরা দিলশাদ সঙ্গী, সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন, সিলেট জেলা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি মাসুদ রানা চৌধুরী, দেশ টিভি সিলেটের প্রতিনিধি হোসাইন আহমদ সুজাত প্রমুখ। মুলপ্রবন্ধে বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আবদুল করিম কিম বলেন, বন্যায় ও বিপদে বিপর্যস্ত হওয়ার আগে উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় সিলেটের হাওরে মাছের ব্যাপক মড়ক হয়। সেই মড়কের জন্য উজান থেকে আসা রাসায়নিক বর্জ্যকে দায়ি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তরপূর্ব ভারতে নদী দূষন অব্যাহত আছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মনিপুর রাজ্যের জিরিবাম জেলার জিরি নদীতে ব্যাপক মাছের মড়ক দেখা যায়। জিরি হচ্ছে বরাকের অন্যতম একটি উপনদী। মুলপ্রবন্ধে তিনি আরও উল্লে করেন সিলেট অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার দেশীয় একাধিক কারণ রয়েছে। এসকল কারণ চিহ্নিত করে পরিবেশবাদীরা তা সমাধানের জন্য নিয়মিত অ্যাডভোকেসি করছেন। কখনো কখনো সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলছেন। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও ভারতের সাথে আন্তঃসীমান্ত নদীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে পরিবেশবাদীরা সরকারকে পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন। শুষ্ক মৌসুমে সিলেট বিভাগের অধিকাংশ নদ-নদী পানিশুন্য হয়ে পড়ে। আবার বর্ষা মৌসুমে আকস্মিক ঢলে প্লাবিত হয় বিস্তির্ণ জনপদ। ফলে ব্যাপক সম্পদহানী হয়। কিম বলেন, সিলেট বিভাগের চার জেলার সাথে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের রয়েছে প্রায় ৫২০ কিঃমিঃ সীমান্ত। সিলেট বিভাগের চার জেলায় মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা থেকে ১৬টি আন্তঃসীমান্ত নদী প্রবেশ করেছে। মেঘালয় থেকে সুনামগঞ্জে প্রবেশ করেছে যাদুকাটা, জালুখালি-ধামালিয়া, নয়াগাং (খাসিয়ামারা), চলতি-উমিয়াম এবং সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে ধলা,পিয়াইন (উমগট) ও সারী-গোয়াইন নদী। আসাম থেকে সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী। ত্রিপুরা থেকে মৌলবীবাজার জেলায় প্রবেশ করেছে সোনাই-বরদল, জুরী, মনু, ধলাই, লংলা নদী এবং হবিগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করেছে খোয়াই, সুতাং ও সোনাই নদী। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের তালিকাভুক্ত এই ১৬টি নদীর বাইরেও অন্তত ৩০টি নদী বা ছড়া মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা থেকে সিলেট বিভাগে প্রবেশ করেছে। যা জেআরসির তালিকাভুক্ত নয়। যেমনঃ সুনামগঞ্জ জেলার বড়ছড়া, লাকমাছড়া, আশাউড়া, উমফুঙ, মৌলা, চেলা, উমস্তা, উমিয়াম, জালিয়াছড়া, জাল্লাগাঙ। সিলেট জেলার উতমাছড়া, তুরংছড়া, কুড়িছড়া, কুলুমছড়া, তাইরঙ্গল, হিঙ্গাইর, হুরই, নুনছড়া, লোভাছড়া, দোনা। মৌলবীবাজার জেলার মুরইছড়া, লাঘাটা, গোপলা, বিলাস ও হবিগঞ্জ জেলার করাঙ্গী। এই হিসাবের বাইরেও আরো নদী বা ছড়ার প্রবাহ রয়েছে। এই সকল প্রবাহ জেআরসির তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত নদী সংক্রান্ত ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ কনভেনশনটির কথা ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার। জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারে ‘ন্যায়ানুগ ও সঙ্গত’ আচরনের কথা বলেছে। এতে আরও বলেছে, যে কোনো কাজের মাধ্যমে অন্যের উল্ল্যেখযোগ্য ক্ষতি করা যাবে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কতটুকু ক্ষতি হওয়ার পর আমরা উল্ল্যেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি তা বলা যাবে? অভিন্ন নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে ফেলে সম্পদ ও ফসলহানি যেভাবে হচ্ছে তা ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা বহন করছে। তা হচ্ছে বিপদ। কাজেই বিপদে বিপর্যস্ত হওয়ার আগেই উদ্যোগ নেওয়া চাই।

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net