সীমান্তের অপারে ভারতের আসাম থেকে আসা বরাক নদীর অমলসীদে বাঁধ ভেঙে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে নদীর পানি।
বন্যা কবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ । প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। এছাড়া সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা ও নিম্নাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল। ফলে কৃষকের ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্যের অভাব।
বাড়ি-ঘর প্লাবিত হওয়াতে খাদ্য সংকটে মরছে গবাদি পশু। বন্যায় আক্রান্তদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরণের রোগ বালাই। বিভিন্ন উপজেলার সাথে জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেননা বন্যা আক্রান্তরা।
বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারের তরফ থেকে যেসব বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেইসব বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসনের লোকজন জানিয়েছেন বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে।
জানা যায়, গেল সপ্তাহ খানেক আগে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০ টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও জেলার ৯০ টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। এসব এলাকার কিছুসংখ্যক লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই অনহারে অর্ধাহারে দিনপাত কাটাচ্ছেন।
সর্বশেষ শুক্রবার মধ্যরাতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থল ভারতের বরাক নদীর বাঁধ ঢলে ভেঙে গেছে। বিশাল এই বাঁধ ভাঙনের ফলে নতুন করে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
বারোঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসীন মর্তুজা টিপু বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে রাত থেকে প্রবল বেগে এলাকায় পানি ঢুকছে। এতে বারোঠাকুরী, কসকনকপুর, কাজলশাহ সুলতানপুর ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে। এসব ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘৩৫ ফুট লম্বা বাঁধটি কয়েক দিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। স্থানীয়রা রাত-দিন চেষ্টা করে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।’
স্থানীয়রা জানান, ‘মধ্যরাতেই বাঁধ ভাঙার খবর এলাকার মসজিদগুলোর মাইকে প্রচার করা হয়। এতে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। এই বাঁধ ভাঙার কারণে সুরমা-কুশিয়ারার তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট নগরের পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
স্থানীয়রা জানান, ত্রি মোহনার বাঁধ অনেক বড় ও শক্তিশালী করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক দুর্বলতায় সেটা করা হয়নি। এজন্যই বাঁধ ভেঙে গেছে। আর আমাদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জকিগঞ্জে তিন নদীর মোহনার বাঁধ ভাঙায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের ৩৫টি জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে।
যে বেগে পানি আসছে, তাতে সবগুলো বাঁধই ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি না কমলে এগুলো সংস্কার করাও যাবে না।
’ গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও নগরের কোনো এলাকার নতুন করে প্লাবিত হয়নি।
এদিকে, সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার ৯০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ২০ লাখ মানুষ।
আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২ হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, বোরো ধান ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর ও গ্রীষ্মকালীন সবজি ১ হাজার ৩৩৪ হেক্টর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ও জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ।
জকিগঞ্জ উপজেলার আমসশীদ এলাকার বাসিন্দা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত মাওলানা মখলেছুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা পাইনি এবং দেখি নি। আমাদের এলাকার অনেকেই খুবই খারাপ অবস্থায় আছেন। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন।’
মালেখা বিবি নামের ৫০ বয়সী এক মহিলা বলেন, ‘আমাদের কেউ সাহায্য করেনি। আমরা খুব কষ্টে আছি।’
কসকখনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন লস্কর বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় সকল বাড়িই প্লাবিত। এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাইনি। নিজস্ব তহবিল থেকে কিছু বিতরণ করছি।
সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সরকার থেকে আমরা যা পাচ্ছি সবই বিলিয়ে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ৩০৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লক্ষ টাকা ও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ আসবে।
অপরদিকে, সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, স্থানীয় সরকার সিলেটের উপ পরিচালক মামুনুর রশীদ,
কানাইঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সুমন্ত ব্যানার্জি, জকিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব চন্দ্র দাস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহাকারী কমিশনার মো: জসিম উদ্দিন, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম, জকিগঞ্জ থানার ওসি মোশারফ হোসেন, প্রমুখ।
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। বিকেল ৬টায় ত্রি মোহনার বাঁধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দুর্ভোগ স্বচক্ষে দেখেছি।
পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। তাদের ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও বেশি করে যাতে সহায়তা করা যায় সে ব্যাপারে কথা বলবো। আর ত্রি মোহনার বাঁধের স্থায়ী সমাধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আলোচনা সাপেক্ষে নেয়া হবে।
এস এস
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net