পিকে হালদারকে সহযোগিতাকারী অনেকেই ফেঁসে যাচ্ছেন

সিলেটসান ডেস্ক:: || ২০২২-০৫-১৫ ০২:১২:২৬

image

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার আর্থিক খাতে বহুল আলোচিত নাম।

 

তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) থাকাকালে আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের আরও কয়েকটি লিজিং কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক পদে বসান। এর পর তাদের সহযোগিতায় কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে ১০ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে বের করে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেন।

 

পিকে হালদারকে সহযোগিতা করতে গিয়ে অনেকেই এখন ফেঁসে গেছেন। দুদকের তথ্য, পিকে হালাদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

 

কমিশন এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করতে সংস্থাটির উপপরিচালককে মো. গুলশান আনোয়াকে প্রধান করে টিম গঠন করে।

 

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, পিকে হালদার আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট করে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা সিঙ্গাপুর, কানাডা ও ভারতে পাচার করেন।

 

এর মধ্যে তার কানাডায় ৪০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্য দুদকের হাতে রয়েছে। কানাডার টরেন্টোতে তার মার্কেট ক্রয়, বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি ক্রয়ের তথ্যও দুদকের কাছে আছে।

 

তার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পর তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমান। তাকে নিয়ে দেশি-বিদেশি গণ্যমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি কানাডা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।

 

পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে গত ১০ মে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ চাহিদা করা নথিপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

 

তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুদকের সাবেক সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছিলেন, কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত অনেকের নাম এসেছে।

 

পিকে হালদারের বিষয়টি এখন অনেক বড়। আমাদের অনুসন্ধান চলছে। আমরা ইতোমধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

 

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৮৪ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত ৮৩ ব্যক্তির প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের মাধ্যমে আটকে দিয়েছে দুদক।

 

অনুসন্ধান পর্যায়ে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য ৬৪ জনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

 

তবে এর আগে পিকে হালদার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পিকে হালদারের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৩৪টি মামলা হয়েছে।

 

দুদকের অনুসন্ধান টিম এখন পর্যন্ত ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব আসামি রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

 

আসামিদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারি, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১১ জন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

 

অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, পিকে হালদার চক্রের ৩৩ জনের সম্পদের হিসাব দুদকে দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন নির্দিষ্ট সময়ে সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেননি।

 

যারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছে তাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই চলছে। জানা গেছে, পিকে হালদার সিন্ডিকেট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিত।

 

এর পর কৌশলে পুরনো কর্মচারীদের ছাঁটাই করে তাদের পছন্দের কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ ও পাচার করত। দুদকের তথ্য বলছে, পিকে হালদার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ৩০টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে।

 

এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে দুই হাজার ৫০০ কোটি, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে দুই হাজার ২০০ কোটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে দুই হাজার ৫০০ কোটি এবং পিপলস লিজিং থেকে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছে।

 

দুদকের অনুসন্ধানে ফাস ফাইন্যান্স থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করা পিকে হালদারের ২২টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।

 

কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের ২০টিই ভুয়া। দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, পিকে হালদার যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন, তার মধ্যে অস্তিত্বহীন ৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিউটেক এন্টারপ্রাইজ,

নিউট্রিক্যাল লিমিটেড, এসএ এন্টারপ্রাইজ, সুখাদা প্রপার্টিজ লিমিটেড, ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, উইনটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, বর্ণ, স›দ্বীপ করপোরেশন, আনান কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, এন্ডবি ট্রেডিং, আরবি এন্টারপ্রাইজ

, ইমার এন্টারপ্রাইজ, জিএন্ডজি এন্টারপ্রাইজ, হাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কণিকা এন্টারপ্রাইজ, মেরিনট্রাস্ট লিমিটেড, মুন এন্টারপ্রাইজ, এমটিবি মেরিন লিমিটেড ও পিএন্ডএল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নাম রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডি, বোর্ড ডিরেক্টরসহ ঋণ অনুমোদনকারী অফিসার ছিলেন পিকে হালদারের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজন।

 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিক বানিয়ে ঋণ হাতিয়ে নিলেও তারা ছিল বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতো। সবাইকে মাসিক একটা বেতন দিয়ে বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিক বানিয়ে লিজিং থেকে ঋণ হাতিয়ে নিয়েছেন।

 

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি মো. রাশেদুল ইসলাম ও পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব অপরাধের কথা স্বীকারও করেছেন। অনুসন্ধান সূত্র বলছে, পিকে হালদারের কয়েকডজন বান্ধবী ছিলেন।

 

যাদের মধ্যে দুজন প্রেমিকাও ছিলেন। পিকে হালদার আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট করে তা থেকে কোটি কোটি টাকা বান্ধবীদের দিয়েছেন। তাদের নিয়ে তিনি একেক সময় একেক দেশ ঘুরতে যেতেন।

 

পিকে হালদার তার দুই প্রেমিকা নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকা বড়ালকে নিয়ে ২৫ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি প্রেমের প্রতিদান হিসেবে নাহিদা রুনাইকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কর্ণধার এবং পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার ক্রয় করে সেখানে অবন্তিকাকে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার করেন।

 

জনশ্রুতি আছে, পিকে হালদার প্রেমিকাদের খুশি রাখতে নাহিদা রুনাইকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং অবন্তিকাকে পিপলস লিজিং উপহার দেন। সিলেটসানডটকম-রাফিন

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net