রংধনুর দেশে প্রথম সূর্যোদয় দেখল টাইগাররা

সিলেট সান স্পোর্টস ডেস্ক :: || ২০২২-০৩-২৩ ২১:১৩:৪৯

image

কাগিসো রাবাদার বলটা স্কয়ার কাট খেলেছেন সাকিব আল হাসান। দৌড়ে তামিম ইকবাল প্রান্ত বদল করার আগেই বল সীমানার বাইরে। লাফিয়ে শূন্যে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়েই তামিম ইকবাল বুকে জড়িয়ে ধরেন সাকিবকে, পরিবারের দুঃসময়েও যিনি থেকে গেছেন দলের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে।

সেই লক্ষ্য তো সবারই জানা—দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বিগ ফাইভ’ খ্যাত জঙ্গলে যেন রাজত্ব শুরু করল বাংলার বাঘ! ‘রেইনবো নেশন’ বা ‘রংধনুর দেশ’ বলে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকায় তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট দেখল প্রথম সিরিজ জয়ের সূর্যোদয়ও। সেঞ্চুরিয়নে জয়ের জন্য ১৫৫ রান মোটেও বেশি নয়।

কিন্তু একদল যখন অনন্য কীর্তি গড়ার স্নায়ুচাপে ভোগে, তখন প্রতিপক্ষের সম্ভাবনার খাতায় চোখ বুজে শূন্য লিখে দেওয়া যায়ও না। তার ওপর রান তাড়া করায় খুব একটা স্বস্তিবোধ করে না বাংলাদেশ।

কিন্তু স্নায়ুচাপ কোথায়, অধিনায়ক তামিম ইকবাল নির্মম আগ্রাসনে কর্তৃত্ব তুলে নেন সেঞ্চুরিয়নের। অপর প্রান্তে লিটন দাস তাঁর ‘ডেপুটি’র ভূমিকায়। ১৮ মার্চ এই মাঠেই দুজনের ৯৫ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়ের ভিত গড়ে দেয়, এবার এই দুজনের ব্যাটেই এ দেশে প্রথম সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো।

জয় তো কতভাবেই আসে। কিন্তু এই সিরিজ জয় অভাবিত দাপটে। সবুজ মাঠে ওয়ান্ডারার্সে বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করা কাগিসো রাবাদার এক ওভারেই চার বাউন্ডারি হাঁকানো দেখে বাইরে গিয়েই দেখি সুপারস্পোর্টের ক্রুদের বিস্ফোরক জটলা! সঙ্গী একজন সায় দেন, অথচ ওই যে ছেলেটা, তাসকিন, ডাক পেয়েও আইপিএলে যায়নি।

এটাকে বলে কমিটমেন্ট। সেই আড্ডায় নিজ দেশের ক্রিকেটারদের আত্মনিবেদন নিয়ে ছাপার অযোগ্য আরো কথাবার্তা এগোয়। মিনিট দুয়েক থেকে প্রেসবক্সে ফিরে দেখি কর্তৃত্ব বহাল রেখেছেন তামিম ও লিটন। রাবাদা-লুঙ্গি এনগিডিরা শরীর বয়ে বেড়াচ্ছেন, যেন ম্যাচটা শেষ হলেই বাঁচেন। কালই তো আবার ভারতের ফ্লাইট ধরতে হবে আইপিএলের জন্য! একই ফ্লাইট ধরার সুযোগ ছিল তাসকিন আহমেদের জন্যও।

কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড চায়নি, তিনিও ভেবেছেন আরো দারুণ কিছু করে পরেরবার হুট করে কারোর রিপ্লেসমেন্ট নয়, সরাসরি নিলামে উঠবেন। যে কথা, যেন সেই কাজ! দ্বিতীয় পরিবর্তিত বোলার হিসেবে তাসকিন আক্রমণে আসেন অষ্টম ওভারে।

প্রথম বলটাই ‘ওয়াইড’। এরপরই আরো দুটি। বাকিটা ইতিহাস। ২০১৪ সালের জুনে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন। তবু সেই ম্যাচটা জিততে পারেনি বাংলাদেশ।

তাই গতকাল বিরতির সময় তাসকিনের স্মারক ম্যাচ বল উঁচিয়ে ধরার তাৎপর্য সম্ভবত তাঁর অভিষেক ম্যাচের কীর্তির চেয়েও বেশি। অবশ্য বাংলাদেশ কারো একার কৃতিত্বে জেতে না।

তাসকিন ৩৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে পুরো দলীয় সাফল্যের কীর্তিগাথাই যেন গেয়েছেন। যেমন, টস জিতে টেম্বা বাভুমা ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইয়ানেমান মালান ও কুইন্টন ডি কক যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছিলেন, তাতে স্বস্তি ছিল না।

বিশেষ করে এই বছরই দক্ষিণ আফ্রিকার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নাম ওঠানো মালান তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন বাংলাদেশি বোলারদের। অপর প্রান্তের ডি কক বাংলাদেশের কাছে সব সময়ের ‘ডেঞ্জারম্যান’।

শরীফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমানকে দিয়ে আক্রমণ শুরুর পর তাঁরা সেভাবে লাইন খুঁজে না পাওয়ায় মেহেদী হাসান মিরাজকে আক্রমণে আনেন তামিম। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ডি কককে ফিরিয়ে দেন মিরাজ—বাংলাদেশ দলে পালাবদলের অন্যতম প্রতিনিধি।

৪৬ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর প্রোটিয়ারা যে এভাবে গুঁড়িয়ে যাবে, অতটা আশা সম্ভবত বাংলাদেশ দলও করেনি। কাইল ভেরেনেকে ফিরিয়ে তাসকিনের হুঙ্কারের শুরুর পর ভোজবাজির মতো পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে।

অধিনায়ক তামিমও এদিন যেন বুদ্ধির খেলার দুর্দান্ত খেলোয়াড়। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যখন যাঁকে আক্রমণে এনেছেন, তিনিই দলের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। এ নিয়ে টিভি ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তর প্রশংসা হয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়কের।

তবে তাঁর কাছে ভালো অধিনায়কের সংজ্ঞা ভিন্ন, ‘সব অধিনায়কই ভালো কিছুর জন্য ঝুঁকি নেয়। কখনো সেটা কাজে লাগে, কখনো লাগে না। ’ ক্রিকেটে ভাগ্য লাগে। তবে সব কিছুর আগে দরকার সামর্থ্য আর তার প্রয়োগ। এসব কিছুতে গাঁথা আত্মবিশ্বাসের মালা কাল সেঞ্চুরিয়নে গলায় পরে বাংলাদেশ।

প্রোটিয়া উদ্বোধনী জুটির শুরুর আগ্রাসনেও বুক কাঁপেনি তামিমদের। বরং স্বাগতিক টেল এন্ডারদের বিপক্ষেও আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল বাংলাদেশ। কেশব মহারাজকে বাউন্সার দিয়ে বাউন্ডারি হজম করা শরীফুলকে অধিনায়কের তাত্ক্ষণিক ভর্ত্সনা শুনতে হয়েছে।

আবার ক্যাচ ফেলার জন্য বকা না খেলেও ভুল ফিল্ডিং পজিশনে দাঁড়ানোর দায়ে তামিমের বিষোদগার শুনতে হয়েছে ইয়াসির আলীকে। গতকাল সেঞ্চুরিয়নের এমন অনেক ফ্রেম আছে, যা তাসকিনের উইকেট উদযাপনের সঙ্গে মানিয়ে যায়। দুহাত মেলে ওড়ার ভঙ্গি করেন তাসকিন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অদম্য শরীরী ভাষার বাংলাদেশ দলের এখন ওড়ার সময়। আতিশয্যে নয়, বহু প্রত্যাশিত উন্নতির পরের ধাপ ছোঁয়ার। সিলেটসানডটকম-এবিসি

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net