সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য বহু পুরানো। সাম্প্রদায়িক অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করা, এটিকে ভদ্রতার মধ্যে নিয়ে আসা একজন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির জীবনের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
আমি নিজে মনে করি এই উদ্দেশ্য নিয়েই আমি ৮৮ বছর পূর্ণ করেছি। এটাই আমার মহা প্রাপ্তির কারণ। বুধবার রাতে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাকে 'গুণীশ্রেষ্ঠ' সম্মাননা প্রদান করা হয়। এই সম্মাননার জবাবেই এমনটি বলেন মুহিত।
নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণ করে মুহিত বলেন, আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। গ্রামের জীবন খুব উপভোগ্য ছিলো। সেখানে যে স্বাধীনতা পাওয়া যায় তা আর কখনো পাওয়া যায় না। পরে সিলেট শহরে এসে সুরমা নদীর পাড়ে স্কুলে ভর্তি হই।
সেই সময়টাও ছিলো আনন্দের। তবে মাঝেমাঝেই সাম্প্রদায়িক ইস্যু মাথাচাড়া দিতো। তিনি বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্য ভারত উপমহাদেশের, এখানে সাম্প্রদায়িক ইস্যু এসে যায়। এখানে সাম্প্রদায়িক দুর্বলতা খুব বেশি। আগেও ছিলো।
এখনও রয়েছে। তবে এখন হয়তো অনেক ভদ্র হয়ে যাচ্ছে।তবে সিলেটকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেটে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে হযরত শাহজালাল (রহ.) এখানে এসেছিলেন।
আমরা বেশিরভাগ মানুষই তার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। ধর্মাচার পালন করেও আসছি। আমাদের এখানে অন্যান্য ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাও সমানভাবে পালিত হয়। এখানে যে মহাসমারোহে পূজা হয় দেশের অনেকস্থানেই তেমনটি হয় না।
মুহিতের 'আজীবন সুকীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ' তাকে এ সম্মাননা প্রদান করে সিটি করপোরেশন রাত ৮টায় সুরমা নদীর তীরের চাঁদনীঘাটে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় সম্মাননা অনুষ্ঠান। সম্মাননার জবাবে মুহিত বলেন, আমি একান্তভাবে সিলেটের মানুষ। আমার জন্মভূমি আমার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছে এটার চেয়ে বড় প্রাপ্তি তো আর কিছু হতে পারে না।
প্রাপ্তির নিয়মকানুন ঠিক করা এবং সেগুলো প্রতিপালনের দায়িত্ব নেওয়া, এটা জীবনের একটি বড় শিক্ষা। এটা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে হয়। সকলকে এটি প্রতিপালনের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।তিনি বলেন, কাউকে সম্মান জানানোর জন্য মনের প্রয়োজন, মাহাত্ম্যের প্রয়োজন। এই যে আমাকে সম্মান জানাচ্ছেন, আমি সেই মাহাত্ম্যের কাছে মাথা নত করি।
মুহিত বলেন, আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত। নিজেকে নিয়ে গর্ব করার মতো মহৎ কিছু নেই। অনেকে হয়তো একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।
সম্মাননা অনুষ্ঠানের সিলেটের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে স্বাগত নর্থইষ্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস। ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাঙালির প্রতিটি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মুহিত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কখনও প্রশাসনের কর্মকর্তা আবার কখনও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে অনন্য অবদান রেখেছেন।
রাষ্ট্রচিন্তক, কূটনীতিক ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের জুড়ি মেলা ভার। তার পাঠ, পঠন, জ্ঞান ও প্রাজ্ঞতা বাংলাদেশের অনন্য সম্পদ। তিনি সত্যিকার অর্থেই এক আলোকিত মানুষ।
অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী।বক্তব্যে বলা হয়, আবুল মাল আবদুল মুহিতের জীবন সিলেটের দীর্ঘতম নদী সুরমার মতো বহমান। বহুমাত্রিক প্রতিভাধর গুণী এই মানুষটির সুস্থ-সুন্দর জীবন কামনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিগণ, সংবাদকর্মী, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিগণ, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিকর্মী সাইমুম আনজুম ইভান।সংসদে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট প্রদানকারী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ। ৮৮ বছর বয়সী মুহিত বর্তমানে অসুস্থতায় ভুগছেন।
সম্প্রতি হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয় তাকে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গত সোমবার সিলেট আসেন তিনি। সম্মাননা অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করেন। নিজের বাবা আর মা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দু’দিন আগে তিনি যখন সিলেট এসেছিলেন তখন থেকে আজ তাকে আরও অনেক বেশী সুস্থ বলে মনে হয়েছে। সোফায় বসে ধীরে ধীরে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত।
সিলেটসানডটকম-সিবিসি
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net